৬. আবারো সংঘাত

 তারা তখনো আলাপে মগ্ন। মেয়েদের সঙ্গী পুরুষ লোকটি তিনজন সৈন্যের সাথে শুয়েছিল। ঘুমের ভান করে বিছানায় পড়ে থাকলেও সে আসলে জেগেই ছিল। সে দেখেছিল আতাউল হাশেম একটি মেয়েকে জাগিয়ে নিয়ে গেছে। এতে সে খুব খুশি হয়েছিল। তার ধারনা হয়েছিল, মেয়েটি আতাউল হাশেমকে প্রেমের জালে ফাসিয়ে দিতে পারবে। আর যদি তা না পারে অন্তত ধোঁকা দিয়ে তাকে হত্যা করতে পারবে।

 সে শুয়ে শুয়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করছিল। অনেকক্ষণ পরেও ফরে না আসায় মেয়েটি কি করছে দেখার কৌতূহল জাগলো তার মনে। সে ঘুমন্ত সৈনিকদের দিকে তাকালো। বেহুশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে তারা। হাসল লোকটি। মনে পড়ল, সন্ধ্যার পর সৈন্যদের সাথে গল্প করার ছলে সে তাদেরকে কিছু হাশিস পান করিয়েছিল।

 গ্রেফতার করার সময় তার কাছ থেকে হাশিসের পুটলিটা ছিনিয়ে নিয়েছিল সৈন্যরা। কিন্তু জোব্বার চোরা পকেটে যে হাশিস ছিল সেটা তারা টের পায়নি। সেখান থেকে কিছু হাশিস বের করে তাদেরকে কৌশলে পান করিয়ে দিয়েছিল সে। তারা তো আর এ ধরনের নেশায় অভ্যস্থ ছিল না, তাই অল্প হলেও কাজ দিয়েছে বেশি। তারই প্রভাবে সৈন্যরা এখন মরার মত বেহুশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে। সুদানী লোকটি এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইল। পালানোর পরিকল্পনার করল সে।

 বিছানায় উঠে বসল, তাকালো এদিক ওদিক। আলতো করে উঠে এল বিছানা ছেড়ে। মেয়েটিকে খুঁজতে খুঁজতে টিলার চূড়ায় হঠাৎ সে তাদের দেখতে পেল।

 দেখলো, মেয়েটি আতাউল হাশেমের পাশে বসে আছে এবং গল্প করছে। বুঝলো, কমান্ডারকে হত্যা করার কোন সুযোগ সে এখনো তৈরি করতে পারেনি। সুতরাং কমান্ডারকে হত্যা করার দায়িত্ব এখন তাকেই নিতে হবে এবং এখনই। পায়ে পায়ে ওখান থেকে ফিরে এল সে আস্তানায়। সৈন্যদের ব্যবহার্য ধনুক ও তিন চারটা তীর নিয়ে বেরিয়ে এল ওখান থেকে। পাহারাদারদের দৃষ্টি এড়িয়ে চূড়ার দিকে উঠতে শুরু করল। এমন একটা জায়গায় সে পৌঁছতে চায় যেখান থেকে কমান্ডারকে সে স্পষ্ট দেখতে পাবে এবং বেশি দূরেও হবে না। আতাউল হাশেম যেদিকে পিঠ দিয়ে বসেছিলেন সেদিক দিয়ে খুব সন্তর্পণে টিলার চূড়ার প্রান্তে পৌঁছে গেল সে। আস্তে আস্তে মাথা তুলে দেখল মাত্র আট দশ হাত দূরে পিছন ফিরে নিশ্চিন্তে বসে গল্প করছে আতাউল হাশেম। মুখোমুখি বসে আছে বলে মেয়েটির মুখ তার দিকে ফেরানো।

 ধীরে সুস্থে ধনুতে তীর জুড়ল লোকটি। কেউ তাকে দেখে ফেলবে বা প্রতিরোধ করবে এমন কোন সম্ভাবনা তার কল্পনাও এলো না। মেয়েটি তাকে দেখে ফেললেও তার কোন ক্ষতি নেই, কারণ ও-তো তারই সহযোগী। তাই তার মধ্যে কোন তাড়াহুড়ার লক্ষণ দেখা গেল না।

 নিশানা ঠিক করতে যাবে এমন সময় মেয়েটির চোখে পড়ে গেল লোকটি। আতাউল হাশেম এ সবের কিছুই টের পেল না। অকস্মাৎ মেয়েটি আতাউল হাশেমের কোমরে ঝুলানো ছুরিটির ওপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং চোখের পলকে তা ছিনিয়ে নিয়ে সর্ব শক্তি দিতে ছুঁড়ে মারল লোকটির গলায়। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল লোকটি, তার আগেই ধনুক থেকে ছুটে গিয়েছিল তীর। তীরটা ছুটে এসে বিদ্ধ হলো মেয়েটির বুকে।

 মেয়েটির আচমকা ধাক্কায় আতাউল হাশেম মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। উঠে বসার আগেই ‘আহ’ বলে বুক চেপে ধরল মেয়েটি। মেয়েটির ছুঁড়ে মারা খঞ্জর সুদানী লোকটির শাহরগ কেটে দু’ফাঁক করে দিল। তার হাত থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল নিশানাহীন তীর।

 বিদ্যুৎ বেগে উঠে বসলেন আতাউল হাশেম। পেছনে ঘাড় না ফিরিয়েই ঝাপ দিলেন সেদিকে। দুই গড়ান খাওয়ার আগেই যেখান থেকে তীরটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল সেখানে পৌঁছে গেলেন। লোকটি দুহাতে গলা চেপে ধরে সেখান থেকে খঞ্জর টেনে বের করার চেষ্টা করছিল।

 আতাউল হাশেম দেখলেন লোকটির চেহারা বিকট ও ভয়ংকর আঘাত ধারণ করেছে। চোখ দুটো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে বাইরে। এ অবস্থায় কন্ঠার হাড়ে আটকেপড়া ছুরিটি সে কোনমতে ছুটিয়ে ফেলতে সক্ষম হলো এবং সামনেই আতাউল হাশেমকে দেখতে পেয়ে আক্রমণের ভঙ্গি করে এক পা এগোল। আতাউল হাশেম জোড়া পায়ে লাথি মারলো তার বুকে। লোকটি দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ল, কিন্তু আর উঠতে পারল না। আতাউল হাশেম সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে পড়ল লোকটির বুকের ওপর। দেখলো, তার শাহরগ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।

 আতাউল হাশেম খঞ্জরটি তুলে নিলেন। লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে ছুটে এলেন মেয়েটির কাছে। তীরটি ছুটে এসেছিল খুব কাছ থেকে। মেয়েটির বুকে তা এমনভাবে গেঁথে ছিল যে, তা টেনে বের করার কোন উপায় রইল না। মেয়েটির প্রাণ বায়ু তখনো বেরিয়ে যায়নি। ডাগর দুটি চোখ মেলে সে তাকিয়েছিল শূন্য পানে।

 আতাউল হাশেম মেয়েটির পাশে ঝুঁকে পড়লেন। মেয়েটি আতাউল হাশেমের একটি হাত আঁকড়ে ধরল নিজের হাতে। বলল অস্ফুটস্বরে, ‘আপনি আমার জন্য দোয়া করুন। যে শান্তির বাণী আপনি আমাকে শুনিয়েছেন একটু আগে, আল্লাহ যেন আমার আত্মাকে সে শান্তি আশ্রয়ে ঠাঁই দেন। আমার আত্মা যেন আমার দেহের মত এই মরুভূমির আর পথহারা হয়ে ছুটে না বেড়ায়। আমার এ দেহ পাপের সাগরে হাবুডুবু খেয়েছে সারা জীবন। আমাকে আশ্বাস দিন, আমার এই ক্ষুদ্র নেক কাজের বিনিময়ে আল্লাহ আমার সমস্ত গোনাহখাতা মাফ করে দেবেন। আমার মাথার ওপর ঠিক তেমনিভাবে হাত বুলিয়ে দিন, যেমন নিজের মেয়ের মাথার হাত বুলাতেন আপনি।’

 আতাউল হাশেম তার মাথাটা টেনে নিলেন নিজের কোলে। তারপর সেখানে স্নেহের পরশ বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘আল্লাহ, তুমি আমার এই অবুঝ কন্যার জীবনের সমস্ত গোনাহখাতা মাফ করে দাও। আমার এ মেয়ে তো নিষ্পাপ ছিলো, তোমার অবাধ্য গোলামরা তাকে দিয়ে পাপ করিয়েছে। তাকে কেউ কোনদিন সৎ ও নেক পথের আলো দেখায়নি।’

 মেয়েটি যন্ত্রণায় কাতর হয়ে কাৎরাচ্ছিল। আতাউল হাশেমের হাত শক্ত করে ধরে দ্রুত বলে উঠল, ‘আমার কথা শুনুন, এখান থেকে তিন ক্রোশ পূর্বদিকে সুদানীদের একটা ক্যাম্প আছে। সেখানকার প্রতিটি সৈনিক আপনাদের নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। শুনুন, আপনার সৈনিকরা চারদিকে বেশি করে ছড়িয়ে পড়তে গিয়ে পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার জোগাড় করেছে। ওরা এভাবে ছড়িয়ে থাকলে তাদের ভাগ্যে মৃত্যু অথবা বন্দী ছাড়া গতি নেই। আপনাদের প্রতিটি দল ও কমান্ডারের পিছনে আমার মত মেয়ে লেগে রয়েছে। আমার সাথে যে মেয়েটি এসেছে তার সাথে মিলে এ পর্যন্ত আমি আপনার চারজন গ্রুপ কমান্ডারকে ফাঁসিয়ে শেষ করেছি।

 মিশরের চিন্তা করুন! ক্রুসেডাররা সেখানে খুব ভয়াবহ ও সুপরিকল্পিত জাল বিস্তার করে রেখেছে। আপনার জাতির অভিজাত শ্রেণী ও সেনাদের মধ্যে এমন কিছু নেতৃস্থানীয় লোক রয়েছে যারা খৃস্টানদের বেতনভুক কর্মচারী। সেই সব চর ও গাদ্দাররা সবাই প্রকাশ্যে আপনাদের বন্ধু সেজে থাকে কিন্তু তারা মূলত খৃস্টানদের আজ্ঞাবহ। তারা আমার মত সুন্দরী মেয়ে ও অর্থ সম্পদের গোলাম হয়ে বিকিয়ে দিয়েছে নিজেদের ঈমান। মিশরকে বাঁচান। সুদান ত্যাগ করে চলে যান যদি মিশরকে বাঁচাতে চান। দুশমনদের শায়েস্তা করার আগে গাদ্দারদের নির্মূল করুন! আমি কারো নাম জানিনা, যেটুকু জানা ছিল বলে দিলাম।

 আপনিই আমার কাছে প্রথম পুরুষ যিনি আমাকে মেয়ের মর্যাদা দিয়েছেন। আপনি আমাকে পিতার স্নেহ দিয়েছেন। তার বিনিময়ে আমি আপনাকে বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে গেলাম। আমি আপনাকে বিচ্ছিন্ন বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করুন এবং আসন্ন আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। দু’তিন দিনের মধ্যেই আপনার ওপর বড় ধরণের আক্রমণ হবে। ফাতেমীয় ও ফেদাইন দলের লোকদের থেকে খুব সাবধান! এই দু’টি দল মিশরের বহু নামীদামী লোককে হত্যা করার পরিকল্পনা তৈরী করে রেখেছে। জাতির কল্যাণ চিন্তায় যারা সব সময় অস্থির, যারা ত্যাগী ও সৎ, তাদের প্রায় সকলেই তাদের টার্গেটে আছে। সবার ওপরে আছে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর নাম, আপন দেশ ও জাতির জন্য যার ত্যাগ ও কোরবানীর পরিমাপ করার সাধ্য আমার নেই।’

 মেয়েটির আওয়াজ ক্রমশঃ ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিরদিনের জন্য নীরব হয়ে গেল সে।

 ততক্ষণে রাত শেষ হয়ে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। একটু পর সকাল হল। আতাউল হাশেম লাশ দু’টি ও জীবিত মেয়েটিকে নিয়ে প্রধান সেনাপতি তকিউদ্দিনের কাছে চলে গেলেন। তিনি প্রধান সেনাপতিকে সমস্ত ঘটনা সবিস্তারে খুলে বললেন। মেয়েটি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তাকে যে সতর্কবাণী শুনিয়েছে তাও জানালেন তাকে। তকিউদ্দিন আগে থেকেই যুদ্ধের বিপর্যস্ত অবস্থায় যথেষ্ট পেরেশান ছিলেন, এসব কথা শুনে তিনি আরও অস্থির হয়ে গেলেন।

 ‘আমি আমার ভাইয়ের আদেশ ছাড়া পিছু হটতে পারি না।’ বললেন তকিউদ্দিন, ‘আমি একজন দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ কমান্ডারকে ক্রাকে পাঠিয়েছি। তার ফিরে না আসা পর্যন্ত সকলকেই নিজ নিজ সেক্টরে দৃঢ় হয়ে অবস্থান করতে হবে।’

 সুলতান আইয়ুবী কমান্ডারের কাছ থেকে শোনা যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছিলেন। সামরিক উপদেষ্টাদেরও ডেকে সামগ্রিক পরিস্থিতি তাদের সামনে সবিস্তারে উপস্থাপন করলেন। তিনি ভাবছিলেন, ছড়িয়ে পড়া সৈন্যদের আবার ঐক্যবদ্ধ করে পিছু হটানো সহজ ব্যাপার নয়। শত্রুরা তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে দেবে না। আর পিছু ফিরাতে গেলে ঐসব সৈন্যদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। যেমন মিশরে হয়েছে। এতে কেবল ওখানকার সৈন্যদের মন ভাঙবে এমন নয়, এখানে যারা আমার সঙ্গে আছে তাদেরও মন ভাঙবে, এমনকি সমগ্র মিশরেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখাও মুশকিল।

 নিজেকে নিজে ধোঁকা দেয়া ভয়ংকর ব্যাপার। বাস্তবতার দৃষ্টিতে তকিউদ্দিনের সৈন্যবাহিনী নিয়ে ময়দান থেকে ফিরে যেতে বলাই আমাত উচিত। কারণ আমি তাকে কোন সেনা সাহায্য পাঠাতে পারছি না। নিজেও ক্রাকের অবরোধ উঠিয়ে তার সাহায্যে এগিয়ে যেতে পারব না। আমার ভাই বিরাট ভুল করে ফেলেছে। তার মূল্যবান সেনাবাহিনীর ক্ষতি সাধন করেছে।

 ‘এটা জাতীয় সম্মানের প্রশ্ন হতে পারে না।’ একজন উপদেষ্টা বললেন, ‘আমাদের এখন সুদানের যুদ্ধ থেকে হাত গুটিয়ে নেয়া উচিত। নেতা ও শাসকদের ভুল সিদ্দান্তের জন্য সেনাবাহিনীর বদনাম হচ্ছে। এখন জাতিকে এই কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত যে, সুদানে আমাদের সৈন্যদের ব্যর্থতার দায়িত্ব শুধু সৈন্যদের ওপর বর্তায় না, শাসকরাও এর অংশীদার।’

 ‘নিঃসন্দেহে এটা আমার ভাইয়ের ভুলের কারণেই ঘটেছে।’ সুলতান আইয়ুবি বললেন, ‘আর এ ভুলের শরীক আমিও। কারণ আমি তকিউদ্দিনকে এ ধরণের পদক্ষেপ নিতে নিষেধ করিনি। আমি তাকে বলেছিলাম, অবস্থার প্রেক্ষিতে তুমি যে কাজ করা উচিত মনে করো, তা তুমি করতে পারো। সবকিছু আমাকে না জানালেও চলবে। ও যে এতবড় একটা কাজ বাস্তবতা যাচাই না করেই করে ফেলবে ভাবিনি। এখন সে নিজেকে শত্রুর দোয়া ও করুণার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। আমি আমার ও আমার ভাইয়ের ক্রুটির কথা জাতির কাছে এবং নূরুদ্দীন জঙ্গীর কাছে গোপন করব না। আমি ইতিহাসকে ধোঁকা দিতে পারি না। আমি লিখিতিভাবে স্বীকার করব, এই পরাজয়ের দায়িত্বভার সৈন্যদের ওপর নয়, আমাদের ওপরই বর্তায়। নইলে আমাদের ইতিহাস পরবর্তী শাসকদের সর্বদা ধোঁকা দেবে। আমি মুসলিম রাজ্যের পরবর্তী সুলতান, বাদশা ও আমীরগণের জন্য এ দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চাই যে, তারাও যেন নিজের ভুলক্রুটি গোপন করে তার দায়দায়িত্ব নিরপরাধ সৈন্য ও জনতার ওপর না চাপায়। এটা এমন এক ভুল, যা বিশ্বের বুকে ইসলাম প্রসারিত করার পরিবর্তে ইসলামকে খাটো করে দেবে।’

 সুলতান আইয়ুবীর চেহারা লাল হয়ে গেল। তাঁর কন্ঠস্বর কাঁপতে লাগলো। মনে হল, নিজের মুখে পিছু হটার শব্দ উচ্চারণ করতে তাঁর বুক ভেঙে যাচ্ছে। কারণ, তিনি কখনও পিছু হটেননি। প্রচণ্ড অসুবিধার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ করতে আপত্তি নেই তার, তার আপত্তি পরাজয় মেনে নেয়ায়। কিন্তু এখন অবস্থা তাঁকে জীবনের দুঃসহ কাজটি করতে বাধ্য করছে।

 তিনি তকিউদ্দিনের প্রেরিত কমান্ডারকে বললেন, ‘তকিউদ্দিনকে দিয়ে বলবে, তোমার ভাই তোমাকে তোমার বাহিনী সুসংহত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গ্রুপকে আবার একত্র করতে বলবে। তারপর তাদেরকে একটু একটু করে মিশরের সীমান্তের দিকে সরিয়ে নিয়ে আসরে বলবে তাকে। শত্রুদের পিছ ধাওয়া করার সুযোগ দেবে না। পেহনে হটবে লড়াই করতে করতে। যেন তারা ভাবে তোমরা তাদেরকে এমন কোন জায়গায় নিয়ে আসতে চাও, যেখানে এলে তোমরা তাদেরকে চূড়ান্ত আঘাত হানবে। সীমান্তে পৌঁছে তোমরা সংঘবদ্ধভাবে মজবুত হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। কোন অবস্থাতেই দুশমনকে মিশরের মাটিতে পা দেয়ার সুযোগ দেবে না।

 যদি শত্রুরা সীমান্ত পেরিয়ে মিশরের অভ্যন্তরে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে তবে তাদেরকে প্রবলভাবে বাঁধা দেবে। সীমান্তে একবার দাঁড়ানোর পর দুশমনকে কোণঠাসা করার জন্য কমান্ডো বাহিনীর সহযোগিতা নিতে বলবে তাকে।

 কোন দলকে যেন অন্য দল শত্রুদের আক্রমণের মধ্যে ছেড়ে না আসে। যত কঠিন পরিস্থিতিই হোক, সর্বাবস্থায় সবাই এক সাথে থাকবে। আমি পিছু সরে আসাকে সহ্য করতে পারি কিন্তু কারো অস্ত্র সমর্পণ করাকে আমি মোটেই বরদাশত করবো না। পিছু হটা সহজ ব্যাপার নয়। অগ্রসর হওয়ার মাঝে যে ঝুকি থাকে পিছনে সরে আসার ঝুঁকি তারচে কোন অংশে কম নয়। যে কোন অবস্থার দিকে কড়া দৃষ্টি রাখার জন্য দ্রুতগতিসম্পন্ন সশস্ত্র গোয়েন্দাদের সব সময় কাজে লাগাবে।

 আমি তোমাকে কোন লিখিত পয়গাম বা চিথি দেবো না। যদি পথে শত্রুর হাতে ধরা পড়ো তবে সবকিছু প্রকাশ হয়ে পড়ার আশংকা আছে। সাবধানে পথ চলবে। কারণ পথে বিপদে পড়ার ঝুঁকি আছে।’

 সুলতান আইয়ুবী কমান্ডারকে আরো কিছু নির্দেশনা দিয়ে বিদায় দিলেন। তখনও তার অশ্বখুরের খটাখট শব্দ শোনা যাচ্ছিল, এমন সময় জাহেদান তাবুর মধ্যে প্রবেশ করে বললেন, ‘কায়রো থেকে এক কাসেদ এসেছে।’

 ‘তাকে এখুনি ভেতরে পাঠিয়ে দাও।’ বললেন সুলতান আইয়ুবী।

 ভেতরে প্রবেশ করলেন সুলতানের গোয়েন্দা বিভাগের এক পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি মিশরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এক হতাশাব্যঞ্জক খবর নিয়ে এসেছেন।

 তিনি বললেন, ‘মিশরে শত্রুদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ খুবই বেড়ে গেছে। আলী বিন সুফিয়ান শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বত্র রাত দিন ছুটে বেড়াচ্ছেন। অসম্ভব ব্যস্ততায় কাটছে তার সময়। তিনি আশংকা করছেন, যে কোন মুহূর্তে মিশরে সেনা বিদ্রোহ ঘটে যেতে পারে।’

 সুলতান আইয়ুবীর চেহারার রঙ যেন একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। যদি তিনি এখন মিশরে থাকতেন তবে তিনি এ সব ব্যাপার নিয়ে কোন পরোয়াই করতেন না। তিনি মিশরকে খুবই ভয়ংকর অবস্থা থেকে বাঁচিয়েছিলেন। খৃস্টান ও ফাতেমীয়দের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কঠিন আঘাতক্র তিনি ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। সমুদ্রের দিক থেকে ক্রুসেড বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন। বিলাসপ্রিয় এবং দেশ ও জাতির ব্যাপারে উদাসীন খলিফাকে পদচ্যুত করে জাতির সামনে যে কঠিন বিপদ ঘনিয়ে এসেছিল সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথেই তার মোকাবেলা করেছিলেন। কিন্তু এখন ক্রাক শহর অবরোধ করে তিনি নিরূপায় হয়ে পড়েছেন। এখন এখান থেকে অনুপস্থিত থাকার অর্থ যুদ্ধের গতি শত্রুদের হাতে তুলে দেয়া।

 তিনি শুধু ক্রাক দুর্গই অবরোধ করেননি, শহরের বাইরে ক্রুসেড বাহিনীর এক বিরাট দলকেও ঘেরাওয়ের মধ্যে দেলে রেখেছেন। এই ক্রুসেড বাহিনী আবেষ্টনী ভেদ করার জন্য হামলার পর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এক রক্তাক্ত যুদ্ধ চলছে প্রতি মুহূর্তে। সুলতান আইয়ুবীর রণকৌশল ও কুশলী চালের ফলে বিপদের ঘেরাটোপ পড়ে ছটফট করছে খৃস্টানদের বিশাল বাহিনী। যুদ্ধ এখন এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যখন তাঁর কমান্ড ও নির্দেশনা ছাড়া এই যুদ্ধ সন্তোষজনক পরিণতির দিকে এগিয়ে নেয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।

 ওদিকে সুদানের অবস্থাও মিশরকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটা একটা বাড়তি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। সুলতান আইয়ুবীর কাছে এটা পরিষ্কার, যদি তকিউদ্দিন পালানোর মনোভাব নিয়ে পিছু হটা শুরু করে তবে শত্রুরা তাদেরকে পথেই শেষ করে দেবে এবং তারপর তারা সোজা মিশরে ঢুকে যাবে।

 এদিকে ক্রাকের অবরোধের আশু কোন সমাধানের সম্ভাবনা নেই। এই দুই সেক্টরের নাজুক অবস্থার মধ্যে মিশরে সেনা বিদ্রোহের আশংকা খুবই বেদনাদায়ক।

 ও সংবাদ সুলতান আইয়ুবীর পা কাঁপিয়ে দিয়েছে। তিনি কিছুক্ষণ মাথা ঝুঁকিয়ে তাবুর মধ্যে পায়াচারী করলেন। এক সময় বলে উঠলেন, ‘আমি ক্রুসেডারদের সমস্ত সৈন্যদের মোকাবেলা করতে পারি। তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে বাহিনী প্রস্তুত করে রেখেছে তাদের মোকাবেলার জন্য আমার এ ক্ষুদ্র বাহিনীই যথেষ্ট। কিন্তু জাতির গুটিকয় গাদ্দার আমাকে পরাজিত করার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তার মোকাবেলা করা আমার জন্য খুব কষ্টের ও দুঃখের।’

 যে সব মুসলমান খৃস্টানদের হয়ে কাজ করছে তারা যদি ধর্ম পরিবর্তন করে খৃস্টান হতে চায় তবে খৃস্টানরা তাদের বাঁধা দিয়ে বলে, ‘না না, তোমরা তোমাদের ধর্মেই থাকো। তোমরা আমাদের কাছ থেকে বেতন নেবে জাতির সাথে গাদ্দারী করবে।’

 তিনি নীরব হয়ে গেলেন। তাবুর মধ্যে যারা বসেছিল তারাও নীরব হয়ে গেল। সুলতান আইয়ুবী সকলকে বার বার লক্ষ্য করলেন। মনে হলো তিনি কিছু বলতে চান কিন্তু কিভাবে বলবেন স্থির করতে পারছেন না। অবশেষে এ ধারনাই সত্য প্রমাণ হলো। তিনি সবার দিকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ আমাদের থেকে কঠিন পরীক্ষা নিতে চান। যদি আমরা সকলেই সেই পরীক্ষার জন্য তৈরী থাকি তবে অবশ্যই আল্লাহ আমাদের সাফল্য দেবেন। এটা আল্লাহর ওয়াদা। শর্ত হলো, ঈমানের দাবী পূরণের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের। এরপর সকল মুসিবতে সে সিদ্ধান্তের ওপর অনড় অটল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূরণ করেন। আমরা যদি আমাদের সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকতে পারি, ময়দানে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের কদমকে মজবুত রাখতে পারি, তাহলে আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূরণ করবেনই। আল্লাহর ওয়াদা মিথ্যা হতে পারে না, প্রশ্ন হলো আল্লাহর ফয়সালা আসার আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো কি না?’

 তিনি তাঁর সামনে বসা সামরিক উপদেষ্টা ও সেনা অফিসারদের দিকে তাকিয়ে তাঁর বিশ্বাস ও একীনের কথা বললেন। বললেন, ‘কোন ঈমানদার আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারেন না। আর আল্লাহ যাদের মোহাফেজ হন তাদের পরাজিত করে দুনিয়ায় এমন কোন শক্তি নেই। এখন প্রয়োজন আপনাদের সুচিন্তিত পরামর্শ ও সঠিক সিদ্ধান্ত। আমি বিশ্বাস করি, বিজয় ও সাফল্য সো সময় লুকিয়ে থাকে সঠিক সিদ্ধান্তের ওপর।’ থামলেন সুলতান।

 একটু আগে যে দুঃশ্চিন্তা এসে ভর করেছিল তাবুর ভেতর, সকলের চেহারা থেকে সে দুঃশ্চিন্তা বিদায় নিয়ে সেখানে সংকল্পের এক অনড় দৃঢ়তা ফুটে উঠল। প্রত্যেকের চেহারায় সে দৃঢ়তার ছবি অটল ভাস্কর্যের মত স্থির হয়ে আছে।

 সুলতান আইয়ুবীকে বলা হয়েছিল, মিশরে ক্রুসেডারদের ধ্বংসাত্মক কাজ বেড়ে গেছে এবং সেখানে বিদ্রোহের আশংকা আছে। কিন্তু পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তার কিছুই তাঁকে খুলে বলা হয়নি। প্রকৃত ঘটনা আরও ভয়াবহ! তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে খৃস্টানরা মুসলমানদের মধ্যে বিভেদের বীজ বপন করে। সেনাবাহিনী, সরকারী অফিসার এবং শাসকদেরকে বিভিন্ন দল-উপদলে ভাগ করে ওদেরকে খেলাচ্ছে খুব।

 তকিউদ্দিন সুদানে অভিযান নিয়ে চলে যাওয়ার কয়েক দিন পরই তিনি খাদ্য ও রসদ পাঠান। সংবাদ বাহককে বলে দেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রসদ পাঠাতে বলবে। কিন্তু দুদিন চলে যাওয়ার পরও রসদ পাঠানোর কোন উদ্যোগ না দেখে সে সরকারী রসদ ভান্ডারের প্রধান নির্বাহীর সাথে দেখা করে। তার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রসদ না থাকলে পাঠাবো কোত্থেকে? এক সাথে দুই সমরাঙ্গনে পাঠানোর মত পর্যাপ্ত রসদ আমার কাছে জমা নেই। এক পারা যায় আইয়ুবীর সৈন্যদের ক্ষুধার্ত রেখে ওদের চাহিদা মিটানো, আর পারা যায় কায়রোর বাজারের সমস্ত খাদ্যশস্য কিনে সেখানে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে। তুমি আমাকে এর কোনটা করতে বলো?’

 এরপর সে খাদ্য বিভাগের সচিবের সাথে দেখা করে। সচিব সুলতান আইয়ুবীর এক সময়ের সঙ্গী ও বন্ধু ছিলেন। তিনিও প্রায় একই ধরনের কথা বললেন। তার বক্তব্যে আর সন্দেহ করা চলে না। দলে খাদ্য শস্যের ঘাটতি আছে স্বীকার করেও তাকে অনুরোধ করা হলো, যে কোন প্রকারেই হোক সমর সেক্টরে খাদ্য পাঠানোর।

 এ অনুরোধের পর সচিব রসদের ব্যবস্থা করলেন বটে তবে তাতে পাঁচ দিন সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। পঞ্চম দিন রসদ নিয়ে কাফেলা রওনা হলো। উট ও খচ্চরের বিরাট এক কাফেলা। তকিউদ্দিন খাদ্যশস্য পাহারা দেয়ার জন্য কাফেলার সাথে অশ্বারোহী সৈন্য পাঠানোর জন্য বলে দিয়েছিলেন। সচিবকে বলা হলো সে কথা। তিনি তাতে আপত্তি জানিয়ে বললেন, ‘এর কোন প্রয়োজন নেই। রাস্তাঘাট যথেষ্ট নিরাপদ আছে। তাছাড়া মিশরে এখন যে পরিমাণ সৈন্য আছে এখানেই তাদের প্রয়োজন রয়েছে।’

 ফলে কোন রকম পাহারা ছাড়াই রসদপত্র পাঠিয়ে দেয়া হলো। রসদ পাঠানোর ছয় দিন পর সংবাদ এল, রাস্তায় সুদানী শত্রুরা সমস্ত রসদ ও রসদবাহী উট, গাধা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আর আরোহীদের সকলকে হত্যা করেছে।

 কায়রোর প্রশাসক ও সেই সচিব এ সংবাদে খুব অস্থির হয়ে উঠলেন। রসদ নষ্ট হয়ে যাওয়া কোন সাধারণ ব্যাপার নয়। সুদানের যুদ্ধ (______) সৈন্যের প্রয়োজন অনুভব করেও তাঁর অস্থিরতা বেড়ে গেল। তিনি ভান্ডার কর্মকর্তাকে বললেন, ‘জরুরী ভিত্তিতে সেই পরিমাণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে পাঠাও।’

 উত্তরে সে বললো, ‘বাজারে খাদ্যশস্যের ঘাটতি আছে। ব্যবসায়ীদের খাদ্যশস্য আমদানী করতে বলতে হবে। মজুতদারদের গুদাম খুলে আমি দেখেছি, সব গুদাম খালি। মাংসের জন্যও দুম্বা ও বকরির কোন ব্যবস্থা নেই।’

 খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, মিশরে যে সৈন্য আছে তারাও পুরোপুরি রেশন পাচ্ছে না। ফলে সৈন্যদের মধ্যে অস্থিরতা ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

 ব্যবসায়ীরা বললো, ‘গ্রাম থেকে কোন খাদ্যশস্য বাজারে আসছে না।’

 আলী বিন সুফিয়ানের গোয়েন্দা বিভাগকে হঠাৎ করে এ খাদ্য ঘাটতির কারণ অনুসন্ধানের জন্য তৎপর হতে বলা হলো। তারা খোঁজ নিয়ে দেখলো, কায়রোর বাইরে থেকে লোকজন গ্রামে আসে আর বাজার দরের বেশি দাম দিয়ে সকল পশু ও খাদ্যশস্য কিনে নিয়ে যায়। এর অর্থ হলো দেশ থেকে খাদ্যশস্য অন্য দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তখনই আলী বিন সুফিয়ানের মনে পড়লো, তিন চার বছর আগে সুলতান আইয়ুবী মিশরের সেনাবাহিনীতে ব্যাপক রদলবদল করেছিলেন। তখন অধিকাংশ সেনা সদস্যই সুদানী বাসিন্দা। বিদ্রোহের অপরাধে তাদের তিনি বরখাস্ত করেন। পড়ে সীমান্ত এলাকার কৃষিযোগ্য জমিতে তাদের পুনর্বাসিত করেন। তারা তাদের উৎপাদিত শস্য মিশরের বাজারে বিক্রি করা বন্ধ করে দেয়ার ফলেই এ পরিস্থিতিএ সৃষ্টি হয়েছে।

 এ তথ্য উদ্ঘাটিত হওয়ার পর খাদ্যশস্য সংগ্রহের কাজ সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত হলো। রাত দিন দৌড়াদৌড়ির পর তারা যে যৎসামান্য খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে পারলো তা সুদনের সেক্টরে পাঠিয়ে দেয়া হলো।

 খাদ্য সচিবের কাছে এ সমস্যা জটিল হয়ে দেখা দিল। এর আগে এমন খাদ্য ঘাটতি আর কোনদিন হয়নি। তার ভয় হলো, যদি সুলতান আইয়ুবী রসদ চেয়ে পাঠান তবে কি জওয়াব দেবেন? সুলতান আইয়ুবী কিছুতেই স্বীকার করবেন না মিশরে খাদ্য ঘাটতি আছে, দেশে দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে।

 এই সমস্যার সমাধান করার জন্য তিনি সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হলো। এই কমিটির একজন ছিলেন হাকিম আল ইদরিস। তিনিই এ কমিটির প্রধান ছিলেন। অন্য দুজন ছিলেন বেসামরিক প্রশাশনের দুই পদস্থ কর্মকর্তা।

 কমিটি বৈঠকে বসলো। আর ইদরিসকে অপর দুই সদয় বললো, ‘সুলতান আইয়ুবী একই সাথে দুই দিকে রণাঙ্গন খুলে ভীষণ ভুল করেছেন। তকিউদ্দিনে সুদানে গিয়ে এখন আত্নরক্ষার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।’

 ‘ফিলিস্তিন মুসলমানদের জন্মভূমি।’ আল ইদরিস বললেন, ‘সেখান থেকে ক্রুসেডারদের বের করা মুসলমানদের জন্য ফরজ। সেখানে পর্দানশীল মুসলিম মহিলাদের ইজ্জত আবরু নিরাপদ নয়। মসজিদসমূহ ঘোড়ার আস্তাবলে পরিণত হয়েছে।’

 ‘এ সবই মিথ্যা দোষারোপ।’ একজন বললো, ‘আপনি কি সচক্ষে দেখেছেন। খৃস্টানরা মুসলমানদের ওপরে জুলুম করেছে, অত্যাচার করেছে?’

 ‘আমি অত্যন্ত বাস্তব ও সত্য কথা বলেছি।’ ইদরিস বললেন।

 ‘আপনি যা জানেন তা সত্য নাও হতে পারে। আমার মনে হয়, আমাদের কাছে সত্য গোপন করা হচ্ছে।’ অন্য সদস্য বললো।

 ‘সুলতান আইয়ুবী সম্মানিত ও প্রশংসাযোগ্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তাই বলে আমাদের সত্য কথা বলতে ভয় পাওয়া উচিত নয়। সুলতান আইয়ুবীকে সাম্রাজ্যবাদী নেশা পেয়ে বসেছে। তাঁকে এই নেশা কোথাও স্থির হয়ে শান্তিতে বসতে দিচ্ছে না। তিনি আইয়ুবী বংশকে রাজ বংশে পরিণত করতে চান।’ সেই সদস্য আরো বলল, ‘ক্রুসেড বাহিনী এক সর্বজয়ী বাহিনী। আমরা তার মোকাবেলা করতে পারবো না। আর ওরা যে আমাদের শত্রু এমনও নয়। যদি ক্রুসেড বাহিনী আমাদের শত্রুই হত তবে তারা মিশরের ওপরেই আক্রমণ চালাতো। তাদের কাছে এত বেশি সৈন্য আছে যে, আমাদের এই ক্ষুদ্র বাহিনীকে কবেই পদদলিত করতে পারতো। তারা সুলতান সালাহউদ্দিনের শত্রু হতে পারে, আমাদের শত্রু নয়।’

 ‘আপনাদের কথা আমার কাছে ক্ষমার অযোগ্য।’ আল ইদরিস বললেন, ‘বরং ভাল হত যদি আমরা যে সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসেছি সে সম্পর্কে কথা বলতাম।’

 ‘এ কথাও আমাদের কাছে সহ্যের বাইরে।’ অন্য একজন বললো, ‘কেননা একজন মানুষের ইচ্ছার কাছে সমগ্র জাতির কল্যাণ ও শান্তি আমরা কুরবানী দিতে পারি না। আপনি মাত্র দুটি সেক্টর নিয়ে চিন্তিত, আমরা সমগ্র জাতির কথা চিন্তা করছি। রসদপত্রের অবস্থা আপনি নিজেই দেখছেন, কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। সুদানের সেক্টর থেকে আমাদের সৈন্যরা ফিরে আসছে। আমরা মনে করছি, সুদানে রসদ পৌঁছানো বন্ধ রাখা হোক। তাতে সুবিধা হবে এই যে, তকিউদ্দিন দ্রুত পিছু সরে আসবেন। তিনি যত দ্রুত সরে আসবেন ততই আমাদের সৈন্যরা মরার হাত থেকে বেঁচে যাবে।’

 ‘এমনও তো হতে পারে, আমরা যদি রসদ না পাঠাই তবে আমাদের সৈন্যরা ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে যুদ্ধ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলবে এবং তকিউদ্দিন তাদের নিয়ে দুশমনের ঘেরাওয়ের মধ্যে আটকা পরে যাবেন!’ বললেন আল ইদরিস।

 ‘এতেও আমি অকল্যাণের কিছু দেখি না। শুধু শুধু লড়াই করে আমাদের সৈন্যরা এখন ক্রমাগত মরছে। রসদ না পেলে তারা আত্মসমর্পণ করবে। ফলে প্রাণে বেঁচে যাবে তারা, আমরা ওদের মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়েও আনতে পারবো।’

 ‘আপনারা কি চিন্তা করে কথা বলছেন?’ আল ইদরিস বেশ রাগত স্বরেই বললেন।

 ‘আমরা যথেষ্ট চিন্তা করছি এবং আমাদের চিন্তা খুব স্বচ্ছ ও পরিষ্কার।’ উত্তরে বললো একজন, ‘সালাহউদ্দীন আইয়ুবী আমাদের ওপরে সামরিক শাসন চালাতে চান। তিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে অনবরত যুদ্ধ চালিয়ে জাতিকে বুঝাতে চান যে, জাতির শান্তি ও নিরাপত্তার রক্ষক শুধু সামরিক বাহিনী। জাতির ভাগ্য নির্ভর করছে এখন তাদেরই হাতে। যদি সুলতান আইয়ুবী শান্তি ও নিরাপত্তা চাইতেন, তবে একই সাথে দু’দুইটি শক্তির সাথে আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ না বাঁধিয়ে আপশ মীমাংসার প্রচেষ্টা চালাতে পারতেন, শান্তিচুক্তি করতে পারতেন।’

 আল ইদরিস এদের কথা শুনে ছটফট কর উঠলেন। তিনি কল্পনাও করেননি, সুলতান আইয়ুবীর বিরুদ্ধে এবং ক্রুসেডারদের পক্ষে মিশরের মাটিতে দাঁড়িয়ে কী প্রকাশ্যে এ ধরনের শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। বৈঠকের পরিবেশ ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো এবং উচ্চস্বরে কথা কাটাকাটি শুরু হলো ওদের মধ্যে। কমিটির দুই সদস্য তাঁকে কথা বলার সুযোগই দিয়ে চায় না। শেষে তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আমি এ বৈঠক বাতিল করে দিচ্ছি। আগামীকালই আমি আজকের আলোচনা ও আপনাদের লিখিত মন্তব্য লিখিতভাবে যুদ্ধ সেক্টরে মিশরের আমীরের কাছে পাঠিয়ে দিব।’ তিনি রাগে দাঁড়িয়ে গেলেন।

 বৈঠক শেষে একজন সদস্য সাথে সাথে সেখান থেকে চলে গেল। অন্যজন, যার নাম আরসালান, বসে রইল আল ইদরিসের সঙ্গে। আরসালান বংশীয়ভাবে সুদানীদের সঙ্গে সম্পর্কিত। সে আল ইদরিসকে বললো, ‘আপনি ব্যক্তি পুজারী ও আবগে দ্বারা পরিচালিত। আমি কিছু কঠিন বাস্তবতা ও নিরেট সত্য আপনার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি, আর এতেই আপনি রেগে গেলেন। আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি, আমার বিরুদ্ধে সুলতান সালাহউদ্দিনকে লিখবেন না, তাতে আপনারই ভাল হবে।’

 তার বলার ভঙ্গি এবং স্বরে প্রচ্ছন্ন হুমকি ও চ্যালেঞ্জ ছিল। আল ইদরিস তার দিকে বাঁকা নজরে তাকালেন কিন্তু এর কোন জবাব দিলেন না।

 আরসালান আবার বললো, ‘আপনি যদি ইচ্ছা করেন তবে আমি আপনার সাথে এ নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলবো।’

 ‘না! তোমার যা বলার এখনই বলতে পারো।’ আল ইদরিস বললেন।

 ‘আপনি আমার বাড়িতে চলুন।’ আরসালান বললো, ‘বেশ রাত হয়ে গেছে। খিদে পেয়েছে আমার। চলুন, এক সাথে বসে খেতে খেতে আলাপ করা যাবে। আপনার সাথে আমি কিছু জরুরী গোপন কথা বলতে চাই। আলোচনা শুনলেই বুঝবেন বিষয়টি কত গুরুত্বপূর্ণ।’

 আল ইদরিস তার সঙ্গে তার বাড়িতে গেলেন। তিনি যখন বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলেন, মনে হলো কোন রাজা যখন বাদশাহর মহলে প্রবেশ করছেন। কিন্তু আরসালান তেমন কোন খান্দানী বড় ঘরের লোক ছিল না।

 দু’জনে বাড়ির ভেতর এক কামরায় গিয়ে বসলেন। একটু পর এক সুন্দরী যুবতী রোপোর জগ, গ্লাস ও দু’টি পিয়ালা নিয়ে প্রবেশ করলো সেখানে। মেয়েটি কামরায় এসে সবকিছু রাখল ওদের সামনে। আল ইদরিস ঘ্রাণেই বুঝে নিলেন, এ শরাবের পিয়ালা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আরসালান, তুমি তো মুসলমান! তুমি মদ পান কর?’

 আরসালান হেসে জবাব দিলো, ‘আপনি মাত্র এক চুমুক খেয়ে দেখেন, এর গুণ বুঝতে পারবেন।’

 উর্দি পরা দুই সুদানী খানসামা ভেতরে প্রবেশ করলো। তাদের হাতে শাহী খাবারের সুদৃশ্য তৈজসপত্র, প্লেট, ডিশ। আল ইদরিস খাবারের আয়োজন দেখে অবাক বিস্ময়ে আরসালানের দিকে তাকালেন। আরসালান বললো, ‘অবাক হবেন না আল ইদরিস সাহেব! এই শান শওকত, বিলাসিতা আপনিও পেতে পারেন। আমিও আপনার মত সাধারণ জীবন যাপন করতাম! কিন্তু এখন আমার জীবনধারায় যোগ হয়েছে শান-শওকত, বিলাসিতা। আমার মনরঞ্জনের জন্য হারেমে আছে একাধিক রূপসী নারী। আমার কাছে এমন সব মেয়ে আছে যা দামেস্ক ও বাগদাদের আমীরদের ঘরেও সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। মনে রঙ ধরানো, নেশা জাগানো বিদেশী মদেরও কোন অভাব নেই আমার।’

 ‘এইসব মেয়ে, এইসব সম্পদ, মদের নেশা সবই ক্রুসেডদের করুণার দান?’ আল ইদরিস বললেন, ‘অথচ এই নারী ও মদ এখন ইসলামী সাম্রাজ্যকে ধংস করে দিচ্ছে!’

 ‘আপনিও দেখছি সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর মত কথা বলছেন। আরসালান বললো, ‘এই তো আপনার দুর্ভাগ্যের কারণ।’

 ‘কি বলতে চাচ্ছো তুমি?’ আল ইদরিস বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘তুমি কি আমাকেও ক্রুসেডদের জালে আটকে যেতে বলছো!’

 ‘আমি সামরিক জান্তার গোলাম হতে চাই না।’ আরসালান বললো, ‘আমি সৈন্যদেরই গোলাম বানাতে চাই। তার একমাত্র পথ হলো সুদানে তকিউদ্দিনকে রসদপত্র ও সৈন্য সাহায্য না দেয়া। তাকে বরং আশ্বাস দিয়ে দিয়ে ধোঁকায় ফেলে রাখতে হবে। সাহায্য আসছে এই মিথ্যা আশা নিয়ে নিরাশ করতে হবে তাকে, যাতে তিনি শেষ পর্যন্ত আত্নসমর্থন করতে বাধ্য হন। বুঝাই যাচ্ছে, সুদানীরা তাঁকে আর তার সেনাবাহিনীকে সুদানের মাটিতেই চিরদিনের জন্য কবর দিতে যাচ্ছে। আমরা সৈন্যদের পরাজয়ে দায়দায়িত্ব তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে জাতির কাছে হেয় প্রতিপন্ন করবো। তারপর জাতি সালাহউদ্দিনের বাহিনী থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেবে। আপনি আমার কথা বুঝতে চেষ্টা করুন। এতে আপনার আমার কোন ক্ষতি হবে না। বরং আপনাকে এর বিনিময় মূল্য যা দেয়া হবে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।’

 ‘আমি তোমার উদ্দ্যেশ বুঝতে পেরেছি।’ আল ইদরিস বললেন, ‘তুমি আমার ঈমানকে বিক্রি করে দিতে চাও। কিন্তু আমার দ্বারা তা সম্ভব নয়।’

 এভাবে তাদের মধ্যে আরো অনেক কথাবার্তা ও তর্ক বিতর্কের পর আল ইদরিস বললেন, ‘তুমি এমনসব ভয়ংকর কথা, এত সাহস নিয়ে কি করে বলেছো? তুমি কি জানো না, এর জন্য তোমাকে গাদ্দারীর অভিযোগে গ্রেফতার করা হতে পারে, বিচারে তোমার কঠিন সাজা হতে পারে?’

 ‘আপনি ভাবছেন পারে, আমি বলছি পারে না। কারণ আমিও তো বলতে পারব, আপনি আমাকে মিথ্যা দোষারোপ করে গ্রেফতার করেছেন?’ আরসালান বললো, ‘সুলতান আইয়ুবী আমার বিরুদ্ধে একটি কথাও বিশ্বাস করবেন না।’

 আল ইদরিস এ কথা শুনে যেমন বিস্মিত হলেন তেমনি শংকিতও হলেন। মনে মনে বললেন, এসব গাদ্দাররা এতবড় দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হলো কি করে? কর ধুরন্ধর আর ভয়ংকর হলে এসব ব্যক্তি এমন দুঃসাহস দেখাতে পারে? এরা কি আগে থেকেই গাদ্দার ছিল, নাকি দায়িত্বপূর্ণ পদ লাভের পর এদেরকে গাদ্দার বানানো হয়েছে?

 আল ইদরিস একজন মর্দে মোমিন ও সৎ লোক ছিলেন। তিনি বুঝতে পারছেন না, মানুষ কত নীচে নামলে ঈমানকে নিলামে বিক্রি করতে পারে। এই আরসালান এক সময় খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতো, নিম্নপদে চাকরী করতো। কাজের প্রতি তার আন্তরিকতা ও যোগ্যতা দেখে তিনিই তাকে প্রমোশনের পর প্রমোশন দিয়ে এই পর্যায়ে তুলে এনেছেন। কিন্তু তার যে এতটা অধঃপতন হয়েছে তা তিনি জানতেন না।

 তিনি আরসালানকে বললেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না তুমি যা বলছো তার কতোটা বুঝে বলছো আর কতোটা নেশার প্রভাবে। তুমি কি বলছো, আর কি করছো সে সম্পর্কে তোমার কন ধারনা আছে কিনা? তুমি যে অপরাধে জড়িত তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আমি তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি, তুমি এক সপ্তাহের মধ্যে তোমার মত ও পথ পরিবর্তন করবে। আজ থেকে শত্রুদের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আমি তোমাকে রসদ পাঠানোর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলাম। আগামীকাল থেকে তুমি ছুটি ভোগ করবে। আমি তোমার ছুটি মঞ্জুর করানোর দায়িত্ব নিচ্ছি। তুমি শুধু আমাকে আশ্বাস দাও, তুমি বর্তমান খেলাফতের ও তোমার জাতির অনুগত ও বিশ্বস্ত থাকবে। এ সিদ্ধান্ত তোমার প্রতি আমার দীর্ঘদিনের স্নেহের ফল ও অনুকম্পা বলে ধরে নেবে।’

 আরসালান আল ইদরিসের কথা শোনলেন ঠিকই কিন্তু কন গুরুত্ব দিলেন বলে মনে হলো না। তার অবজ্ঞামাখা চাহনির দিকে তাকিয়ে আল ইদরিস আবার বললেন, ‘দেখো আরসালান, আমার কথাকে তুমি হালকাভাবে নিও না। তুমি জানো, যদি আমি প্রয়োজন মনে করি, তবে ক্রুসেডারদের সাহায্যে তুমি যে আলীশান মহল গড়ে তুলেছো সে মহলেই আমি তোমাকে নজরবন্দী করে রাখতে পারবো। সাতদিন যথেষ্ট লম্বা সময়। যেন এমন না হয়, অষ্টম দিনে তোমাকে এখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে জল্লাদের হাতে তুলে দিতে হয়।’

 আল ইদরিস উঠে দাঁড়ালেন, দেখলেন আরসালান হাসছে।

 ‘মুহতারাম আল ইদরিস!’ অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললো আরসালান, ‘আপনার দুটি সন্তান আছে। দুজনই যুবক!’

 ‘হ্যাঁ! তো কি হয়েছে?’ অবাক হয়ে জানতে চাইলেন আল ইদরিস।

পেজঃ ১ম পেজ | ← পূর্বের পেজ | ... | 3 | 4 | 5 | 6 | ... | পরের পেজ → | শেষ পেজ | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top