৫. ভয়াল রজনী

দু’জন মধ্য বয়েসী মহিলা ওদের গোসল করিয়েছে। মহিলা দু’জন এ বিষয়ে পারদর্শিনী। ওরা মেয়েদের কাপড় পরাচ্ছিল।

সকাল থেকে ওরা কিছুই মুখে তোলেনি। শুধু কাঁদছে। তাদের এমন খাবার দেয়া হয়েছে যা তারা কোনদিন দেখেনি। কিন্তু ওরা সে খাবার ছুঁয়েও দেখেনি।

কে কোথায় আছে দু’জনের কেউই জানে না।

মহিলারা ওদেরকে এক স্বপ্নীল জগতের লোভ দেখাচ্ছিল। একজন বলছে, ‘ফ্রান্সের সম্রাট তোমাকে পছন্দ করেছেন। তুমি হবে ফ্রান্সের রাণী’।

অন্যজন বলছে, ‘তোমাকে জার্মানীর রাজার মনে ধরেছে। কি সৌভাগ্য তোমার’।

কখনো আবার মিষ্টি করে ধমকাচ্ছিল, ‘সম্রাটদেরকে নাখোশ করলে তোমাদেরকে সৈন্যদের তাহে তুলে দেয়া হবে’।

মেয়ে দু’জন মরুচারী বেদুইন। ওরা ভীরু তাও নয়। কিন্তু অসহায়। নিজকে রক্ষা করার শক্তিও নেই।

পিতামাতা ওদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্যই খ্রীষ্টান এলাকা থেকে হিজরত করছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ওদের, শেষ পর্যন্ত খ্রীষ্টানদের হাতেই ধরা পড়তে হল।

পিতামাতা নিহত। ভাইটা বন্দী। এখন আল্লাহ ছাড়া ওদের সাহায্য করার আর কেউ নেই।

নিজেদের সম্ভ্রম ছাড়াও ভায়ের জন্য ওরা উদ্বিগ্ন। আশফাক তখন বেগার ক্যাম্পে কাৎরাচ্ছে। আহত ভাইটিকে পশুরা অনেক পিটিয়েছে।

সন্ধ্যায় ডিউটি শেষে বেগার ক্যাম্পে ঢুকেছে বন্দীরা। ওরা নতুন বন্দীদের দেখল। শুনল ওদের ধরা পড়ার কাহিনী। পনের জনের মধ্যে আশফাকই বেশী আহত।

লুকিয়ে রাখা ওষুধ দিয়ে বন্দীরা ওর ক্ষতস্থানে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিল।

ব্যাণ্ডেজ বাঁধার পর আশফাক অনেকটা আরাম বোধ করল। ক্ষতস্থানে এখন আর ব্যথা অনুভব করছে না সে।

বোনদের কথা ওর বার বার মনে পড়ছে। বন্দীদের জিজ্ঞেস করল, ‘তার বোনেরা এখন কোথায়? এখান থেকে কিভাবে পালানো যায়?’

বোনেরা এখন কোথায় এবং তাদের সাথে কি ব্যবহার করা হচ্ছে বন্দীরা শোনাল তাকে সে খবর।

বললো, ‘এখানে কোন প্রাচীর নেই। কারো পায়ে শিকলও পরানো হয়নি। তবুও পালানো সম্ভব নয়। পালিয়ে যাবেই বা কোথায়? ধরা পড়তেই হবে। আরধরা পড়লে মৃত্যু অবধারিত’।

কোন কোন বন্দী কয়েক বছর থেকেই এখানে আছে। পালিয়ে গেলে পরিবারের উপর নেমে আসবে অকথ্য নির্যাতন। এ জন্যই বন্দীরা পালাচ্ছে না। তবুও আশফাকের মনে বোনদের মুক্ত করার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও তার এখন চলার শক্তিও নেই।

সারাদিনের হাড়ভাংগা পরিশ্রমের পর শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়েছে বন্দীরা। জেগে আছে শুধু আশফাক। ওর দু’চোখে ঘুম নেই। অসহায় বোনদের নানা বর্ণের ছবি ভেবে বেড়াচ্ছে চোখের সামনে।

‘মেয়েরা না আবার ধরা পড়ল! ফিসফিসিয়ে বলল ওসমান।

‘এমন অলক্ষুণে কথা বলো না’। বললেন বারজেস। ‘আল্লাহকে স্মরণ কর। এখন আমরা মৃত্যুর মুখে আছি। মন থেকে সব ভয় দূর করে ওখানে খোদাকে বসাও। তোমার বন্ধুরা কি নির্ভরযোগ্য?’

‘ওদেরকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায়। আমি ওদের নিয়ে ভাবছি না। মেয়েদের নিয়ে চিন্তা হচ্ছে’।

‘আল্লাহর সাহায্য চাও। আমরা চুরি করতে আসিনি। অবশ্যই তিনি সাহায্য করবেন’।

সেনা হেড কোয়ার্টারের পাশে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ছিল ওরা। দৃষ্টি প্রাসাদের দিকে। কোন সংকেতের কি কাজ করতে হবে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বারজেস।

ওসমানের মনে ঘুরে ফিরে উদয় হচ্ছিল চারজন তরুণীর কথা। মেয়েরা গিয়েছে অনেক আগে। এতোক্ষণে আগুণ লাগানোর কাজ শেষ কয়ে যাওয়া উচিত ছিল। ওদের অভিযান সফল হলে অগ্নিশিখা এখান থেকেও দেখা যাবে। প্রাসাদের সবাই তখন ছুটে যাবে আগুনের কাছে।

কথা ছিল ওরা চলে গেলেই যুবকরা প্রাসাদে ঢুকবে। কিন্তু আগুনের কোন শিখা এখনো দেখা যাচ্ছে না। তবে কি সেন্ট্রি ওদের যেতে দেয়নি। ধরে রেখেছে না ফিরিয়ে দিয়েছে কে জানে।

মেয়েরা তখনও সেন্ট্রিকে পায়নি। নির্দিষ্ট স্থানে নেই সেন্ট্রি। সেন্ট্রির এই না থাকাটা বিপদের লক্ষণ। তাকে জীবিত রেখে আগুন লাগাতে গেলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশীল। ওরা সেন্ট্রিকে খুঁজতে লেগে গেল। খড়ের পালান অতিক্রম করছিল ওরা।

অন্ধকারে সৈন্যতের তাবু নজরে আসছে না। একত্রে হাঁটছে চারজন।

সামনে একটা মশাল দেখা যাচ্ছে। মাটিতে পুতে রাখা হয়েছে। মশালের দিকে এগুল ওরা।

অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এলা সেন্ট্রি। মশাল হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো মেয়েদের দিকে।

থমকে দাঁড়িয়ে গেল মেয়রা। মশাল হাতে সেন্ট্রি মেয়েদের সামনে এসে দাঁড়াল।

ওদের ঝলমলে পোষাক দেখে ইতস্ততঃ করলো একটু তাকিয়ে দেখল একজন চাকরানীর মাথায় কাপড়ে ঢাকা একটা ঝাকা।

‘আপনারা কে? কোথায় যাচ্ছেন? প্রশ্ন করল সেন্ট্রি।

‘সম্ভবত ভুল পথে এসেছি’।

বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে উঠল আল নূর।

‘শাহ রিমাণ্ডকে কথা দিয়েছিলাম রাতে আসব। একটু দেরী হয়ে গেছে। সামনে তো মনে হয় উট-ঘোড়া বেঁধে রাখা হয়েছে’।

সেন্ট্রিকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য রিমাণ্ডের নাম উচ্চারণই যথেষ্ট ছিল। খ্রীষ্টান সম্রাটগণ কি চরিত্রের জানতো সেন্ট্রি। হয়ত আনন্দ-স্ফুর্তি করার জন্য এদের ডেকে এনেছে, ভাবল সেন্ট্রি।

মেয়েদের পোষাক আশাক এবং কতা বলার ঢং দেখে সেন্ট্রি নিশ্চিত, রিমান্ডই এদের ডেকে পাঠিয়েছেন। সে ওদেরকে পথ বলে দিতে লাগল।

কথা বলার ফাঁকে একজন যুবতী সেন্ট্রির পেছনে চলে এল। তারপর সমস্ত শক্তি দিয়ে পিঠে খঞ্জর ঢুকিয়ে দিল।

মশালটি পড়ে গেল। সেন্ট্রির হাত থেকে। আল নূর পাঁয়ে পিষে নিভিয়ে ফেলল মশাল।

অন্য মেয়েরাও পড়ে থাকা সেন্ট্রির গায়ে পরপর কয়েকটি আঘাত করল। চিৎকার করারও সময় পেল না সেন্ট্রি। তার আগেই মারা গেছে।

চাকরানী বেশী যুবতী মাথা থেকে ঝাকা নামাল। টক জলদি খড়ের পালান এবং ঘাসের স্তুপে জ্বালানী ছড়িয়ে দিল। এরপর একে একে সবকটা স্তূপে আগুন ধরিয়ে দিল। জ্বলে উঠল শুকনো ঘাস।

এবার নজরে তাবুর সারি। সৈন্যদের রসদ এবং পোষাক। একদিকে হাজার হাজার টাংগা। ওরা তাবু এবং টাংগায় জ্বালানী ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল।

ঘাসের স্তূপ থেকে অগ্নিশিখা লকলকিয়ে আকাশ ছুইছে।

ঘোড়ার দিকে ছুটল মেয়েরা। সৈন্যরা এখনও জাগেনি। খঞ্জর দিয়ে ঘোড়ার রশি কাটতে লাগল ওরা। একেকটা রশিতে পঞ্চাশটা করে গোড়া বাঁধা।

দুজন ঘোড়ার রশি কাটা বাদ দিয়ে বাঁধা ঘোড়াগুলোর পাশে দিয়ে দাঁড়াল। কয়েকটা ঘোড়াকে পর পর খঞ্জর দিয়ে আঘাত করল ওরা। হ্রেষা শব্দ তুলে ছুটতে লাগল আতংকিত ঘোড়াগুলো।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে উটগুলো নিশ্চিন্তে জাবর কাটছিল। ওদের পায়ের রশিও কেটে দিল মেয়েরা।

উট, ঘোড়া ছুটছে, পালাচ্ছে, আতংকে চিৎকার করছে। মেয়েরা ওদের ছুটোছুটির ভেতর পড়ে গেল।

ছুটন্ত উট ও ঘোড়ার হ্রেষা ধ্বনি ও কুরের শব্দে জেগে উঠল সৈন্যরা।

অপহৃত দু’জন যুবতীকে কনের সাজে সাজানো হয়েছে।

দুই কক্ষে একই সময় প্রবেশ করল দু’জন লোক, দুটি খ্রীষ্টান রাজ্যের সম্রাট। মদে মাতাল।

চাকরানীরা বেরিয়ে গেল। সম্রাটরা এগিয়ে গেল মেয়েদের দিকে। সম্ভ্রম বাঁচানোর জন্য কক্ষের এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগল মেয়েরা।

আল্লাহ ছাড়া কেউ তাদের রক্ষা করতে পারে না। একজন হাটু গেড়ে বসে পড়ল। হাত উপরে তুলে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগল।

অট্টহাসিকে ফেটে পড়ল খ্রীষ্টান সম্রাট। পা বাড়ল যুবতীর দিকে।

 এ সময় হঠাৎ বাইরে থেকে ভেসে এল সৈনিকদের ডাক-চিৎকারের শব্দ। যেন প্রসাদে ডাকাত পড়েছে। বিরক্তিতে কুঞ্চিত হলো সম্রাটের কপাল।

শোরগোলের অস্বাভাবিক শব্দে মেয়েদের দিকে এগুনো বন্ধ করে দরজা খুলে বাইরে তাকালেন সম্রাট। দেখলেন আলোয় ভরে গেছে পুরো প্রাঙ্গণ।

তার মনে হল সমগ্র শহরে আগুন লেগে গেছে।

দেখলেন, আতংকিত ও ছুটন্ত ঘোড়ার কয়েকটি প্রাসাদেও এসে ঢুকে পড়েছে।

নেশা ছুটে গেল সম্রাটের। দ্বিতীয়জনও বেরিয়ে এলেন। কয়েকজন লোক ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো, ‘ঘাস, তাবু এবং গাড়ীতে আগুল লেগেছে। ছুটন্ত পশুর পদতলে পিষে যাচ্ছে সৈন্যরা’।

সমগ্র শহর পুড়ে গেলেও সম্রাটরা এত চিন্তা করতেন না। কিন্তু জ্বলচে ফৌজি রসদ, সৈনিকদের পোষাক আশাক, শত শত টাঙ্গা। যুদ্ধের বাহন হাজার হাজার উট, ঘোড়া পালিয়ে যাচ্ছে।

প্রাসাদের সবাই ছুটে বেরিয়ে গেল। দেখতে দেখতে জনশূন্য হয়ে গেল প্রাসাদ। প্রাসাদের চারপাশের সমগ্র প্রহরীরাও ছুটে গেছে আগুন লাগার স্থানে।

বারজেস যুবকদের দিকে তাকিয়ে বললে, ‘প্রাসাদে ঢুকার এই সুযোগ, চলো’।

ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল যুবকরা। ছুটে প্রাসাদে ঢুকে গেল আট জন যুবক।

বারান্দায় উঠেই দুই সংগীর নাম ধরে ডাকতে লাগলেন বারজেস।

চাকর-বাকরদের মধ্যে পাওয়া গেল একজনকে। বারজেস তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজকের অপহৃত মেয়ে দুটো কোথায়?’

ও ইশারায় কক্ষের একটা সারি দেখিয়ে দিল। বলল, ‘এ সারিরই কোন ঘরে আছে ওরা’।

দৌড়ে কক্ষগুলোর দিকে এগুলো সবাই।

প্রাসাদে কোন দায়িত্ববান পুরুষ নেই। ভালই হয়েছে ওদের জন্য।

করিডোরে কয়েকজন অর্ধ উলংগ মেয়ে পাওয়া গেল। ওরা ভয়ে ছুটে পালাচ্ছে। পর পর কয়েকটা মেয়েকে থামিয়ে আজকের অপহৃত মেয়েদের সম্পর্কে যুবকরা ওদের কাছে জানতে চাইল। কিন্তু মেয়ে দুটো কোথায় আছে ওরা জানে না।

কয়েকটা কক্ষে খোঁজ করার পর একজনকে পাওয়া গেল এক রুমের ভেতর। মেয়েটি রুমের মাঝখানে বিহবল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ওসমান এবং তার সংগীরা মেয়েটাকে দেখেই চিনতে পারল। কারণ দিনের বেলা ওদের নিয়ে আসার সময় যুবকরা মেয় দুটোকে দেখেছিল।

মুখোশধারী আট-দশজন লোক দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠল মেয়েটা। বারজেস বললেন, ‘ভয় পেয়ো না, চিৎকার থামাও, আমরা মুসলমান। তোমাদের উদ্ধার করতে এসেছি’।

কিন্তু মেয়েটা বিশ্বাস করল না। সে রুমের একদিকে সরে গেল।

বারজেস ওকে বললেন, ‘বাঁচতে চাইরে এখুনি পালাতে হবে। জলদি এসো’।

ওরা দরজার দিকে পা বাড়াল। কিন্তু মেয়েটা তার জায়গা থেকে নড়ল না। ওরা আবার ডাকল ওকে। কিন্তু মেয়েটা তাও সাড়া দিল না।

বারজেস যুবকদের বললেন, ‘এখানে সময় নষ্ট করা যাবে না। ওকে ধরে নিয়ে এসো’।

যুবকরা ওকে ধরনের গেল। কিন্তু মেয়েটি সরে গেল সেখান থেকে। যুবকরা আবার এগুলো, এবারও সরে গেল সে, কিছুতেই ধরা দিচ্ছিল না।

বারজেস বললেন, ‘কুইক, তাড়াতাড়ি করো’।

শেষে আরো দুজন যুবক এগিয়ে গিয়ে জোর করে ওকে তুলে নিল।

আরো কয়েকটি কক্ষ পার হওয়ার পর পাওয়া গেল দ্বিতীয়জনকে। ওসমানরা তাকেও  জোর করে তুলে নিল।

মেয়েরা হাত-পা ছুড়ছিল আর চিৎকার করছিল, ‘ছাড়ো, ছাড়ো আমাদের’।

বারজেস ক্রুব্ধ কণ্ঠে বললেন, ‘পাজী মেয়ে, বলছি না আমরা মুসলমান। তোমাদের চিৎকার শুনে খ্রীষ্টানরা এসে পড়লে আমরা সবাই মারা পড়বো। আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ করো, একটু শান্ত হও’।

‘আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?’ চিৎকার করতে করতেই বলল একটি মেয়ে।

‘আপাততঃ শহরে কোন মুসলমানের বাড়ীতে লুকিয়ে রাখবো। তারপর সুযোগ বুঝে শহর থেকে বের করে যেখানে যেতে চাও পাঠিয়ে দেব’।

বরজেসের কথায় শান্ত হল মেয়ে দু’জন।

মুখোশধারী দলটি বেরিয়ে এলো প্রাসাদ থেকে। আশেপাশে বা সদর দরজা কোথাও কোন খ্রীষ্টান সৈন্যের দেখা পেল না ওরা। সবাই তখনও আগুনের কাছে।

বিনা বাধায় মেয়ে দুজনকে নিয়ে প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে এলো আটজন যুবক। কয়েক মিটিনের মধ্যেই সামনের রাস্তা পেরিয়ে ওরা একটা সরু গলির মধ্যে ঢুকে পড়ল।

যুবকরা খুশী, কোন রকম লড়াই, লক্তপাত ছাড়াই ওদের অভিযান সফল হয়েছে। শেষ পর্যণ্ত মুক্তি পেয়েছে দুই মুসলিম যুবতী।

মেয়েরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, যাক, আল্লাহ তাদের আবেদ কবুল করেছেন। খ্রিষ্টানদের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন তাদের জীবন ও সম্ভ্রব।

আগুনের লেলিহান শিখা আকাশ ছুঁইছিল। আগুনে জ্বলছিল সেনাবাহিনীর সমস্ত রসদ-সামান। শহরের অলিগলি আর রাস্তায় ছুটছিল লাগামহীন ঘোড়া।

জেগে উঠেছে শহরবাসী। সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে অজানা আতঙ্ক। কি ঘটেছে কিছুই বুঝতে পারছে না তারা।

জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে পথে পথে উট-ঘোড়ার ছুটাছুটি দেখে দরজা বন্ধ করে বসে রইল মানুষ। কি ঘটেছে দেখার জন্য বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহস পেল না কেউ।

উট ও ঘোড়ার লাফালাফি না থাকলে আগুন নেভানোর জন্য হয়তো বেরিয়ে আসতো লোকজন। কিন্তু একদিকে সেনা সদরে আগুন ও অন্য দিকে রাস্তায় রাস্তায় উট, ঘোড়ার দাপাদাপি দেখে লোকজন ভাবল, তবে কি সালাহউদ্দীন আয়ুবী শহরে আক্রমণ করেছে?

এ ভাবনা মনে আসতেই খ্রীষ্টান পরিবারগুলো ভীত বিহবল হয়ে পড়ল। কেউ কেউ পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল।

আয়ুবীর গোয়েন্দারা এ সুযোগ হাতছাড়া করল না। তারা বিভিন্ন গরি ও মহল্লায় ছুটাছুটি শুরু করে দিল। লোকজন বাড়ীর গেট দিয়ে উঁকি মেরে জিজ্ঞেস করতে লাগল, ‘কি হয়েছে ভাই?’

‘আয়ুবীর বাহিনী শহরে আক্রমণ করেছে। ওরা খ্রীষ্টান বাহিনীর রসদপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছে। উট, ঘোড়া সব ছেড়ে দিয়েছে। খ্রীষ্টান সৈন্যরা এখন শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। আমরাও পালিয়ে যাচ্ছি’।

মুহুর্তে সারা শহরে গুজব ছড়িয়ে পড়ল, ‘মুসলিম বাহিনী ক্রাক আক্রমণ করেছে। আগুন লাগিয়ে দিয়েছে শহরে’।

এ গুজব মুসলমানদের সাহস বাড়িয়ে দিল। ইহুদী ও খ্রীস্টানরা আতংকিত হয়ে পড়ল ভীষণভাবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তায় নেমে এল ভীত সন্ত্রস্ত লোকজন। ভয়ে পালাতে শুরু করল ইহুদী ও খ্রীষ্টান পরিবারগুলো।

খ্রীষ্টান সম্রাট এবং সেনা কমাণ্ডাররা আগুন লাগার স্থানে গেলেন। কোন জন মানুষের চিহ্নও নেই সেখানে। তারা ভাবলো, মুসলিম ফৌজ হয়ত সিঁড়ি লাগিয়ে পাঁচিল টপকে ভেতরে চলে এসেছে।

সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর একটা অংশকে তারা শহরের বাইরে পাঠিয়ে দিল। দ্বিতীয় অংশ প্রস্তুত হয়ে বসে রইল আয়ুবীর বাহিনীর সাথে মোকাবিলার জন্য।

কমাণ্ডার কয়েকজন সৈনিককে শহরের প্রাচীরের ওপর তুলে দিল। ভয়ে ভয়ে তারা তাকাল বাইরের দিকে।

বাইরে সুনসান নিরবতা। কোথাও কোন সৈনিকের নড়াচড়া চোখে পড়ল না। আয়ুবীর আক্রমণের চিহ্নমাত্র নেই বাইরে।

খ্রীষ্টান সৈন্যদের বাইরে যাবার জন্য দুর্গের পেছনের জরদা খুলে দেয়া হল। রাতে কখনও এ ফটক খোলা হয় না।

শহরের বাইরে গিয়ে সুলতান আয়ুবীর আক্রমণ ঠেকানোর জন্য এসব সৈন্যদেরকে বাইরে পাঠানো হচ্ছে।

তারা ধারণা করল, ভেতরে হয়ত আয়ুবীর দু’একটা সুইসাইড গ্রুপ ঢুকে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। এতে সৈনিকদের ভয় কিছুটা দূর হলো। সাহসে ভর করে অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিল, আয়ুবীকে তারা কিছুতেই দূর্গের কাছেও ঘেষতে দেবে না।

আতংকের মধ্যে ফটক খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। অমুসলিম পরিবারগুলো পেছনের ফটক খোলা দেখে এলোপাথাড়ি ছুটতে লাগল সেদিকে।

দূর্গ থেকে বের হচ্ছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু জনতার ভিড় তাদের পথরোধ করে দাঁড়াল। শহরের শান্তি শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে পলায়নপর এসব লোকদের প্রচণ্ড ভীড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়ল।

আগুন প্রসারিত হচ্ছে। খড়ের গাদা থেকে এসে আগুন লাগল তাবুর সারিতে। সেখান থেকে সৈনিকদের মূল ব্যারাক, কিচেন, আস্তাবল আশপাশের সব কিছু গ্রাস করছে।

অবলিম্বে এ আগুন নেভানো দরকার। নইলে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়বে আগুন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল পানির স্বল্পতা নিয়ে।

শহরে কোন পুকুর নেই, আশপাশে নদীও নেই। শহুরে লোকজন পাত কুয়ার পানি ব্যবহার করে। সব বাড়ীতে হাউজও নেই। কোত্থেকে কে পানি আনবে?

লোকজন যারা পালাচ্ছে তো পালাচ্ছেই, বাকীরা দরজা বন্ধ করে বাড়ীতে অবস্থান করতে লাগল।

আগুন নেভানোর জন্য সৈন্যদেরকে নির্দেশ দেয়া হল। কিন্তু আয়ুবীর আক্রমণের ভয়ে সবাইকে এ কাজে লাগানো সম্ভব হলো না। সেনাবাহিনীর মুষ্টিমেয় সদস্য প্রাণপণ চেষ্টা করেও আগুন আয়ত্বে আনতে পারছিল না।

এ অবস্থা দেখে একজন সেনা কমাণ্ডার বললেন, ‘বেগার ক্যাম্পের মুসলিম বন্দীদের দিয়ে পানি টানানো যায়’।

সাথে সাথে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষনা দেয়া হল, ‘আগুন নেভাতে পারলে কাল ভোরেই বন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে’।

বাইরের ডাক চিৎকারে জেগে উঠেছিল বন্দীরা। প্রহরী ওদেরকে সরকারী ঘোষণা শুনাল। বললো, ‘সরকার ঘোষণা করেছেন, আগুন নিভালে কাল সকালে সবাইকে মুক্তি দেয়া হবে’।

আশফাক একজন সঙ্গী বন্দীকে বললো, ‘খ্রীষ্টানদের গোটা দেশ পুড়ে গেলেও আমি আগুন নেভাবে যাবো না’।

‘পাগলামী করো না আশফাক। ওরা বলেছে আগুন নেভাতে পারলে কাল ভোরে মুক্তি দেবে’।

আশফাককে বুঝাতে চাইল সেই বন্দী।

‘ওরা মিথ্যাবাদী, ওরা আমাদের সাথে প্রতারণা করছে। আমি এখনি পালাবো, তুমিও আমার সাথে চল। পানি দেয়ার ফাঁকে সুযোগ বুঝে ওখান থেকেই আমাদের পালাতে হবে, নইলে আর সুযোগ পাওয়া যাবে না’।

‘আমরা যেতে পারছি না। এরা আমাদের বাড়ীঢ়র চেনে। তোমার তো সে সমস্যা নেই, তুমি যাও’।

‘কিন্তু পালিয়ে আমি যাব কোথায়?’

বন্দীটি তার নিজের বাড়ীর ঠিকানা দিয়ে আশফাককে বললো, ‘পরিবেশ বুঝে আমাদের বাড়ী চলে আসতে পারো। মুক্তি পেলে আমিও ওখানেই উঠবো।

কিন্তু সেখানে বেশী দিব থাকতে পারবে বরে মনে হয় না। ধরা পড়লে ওরা যে কেবল তোমাকেই শাস্তি দেবে তা নয়, আমাদের পরিবারেরও কাউকে রেহাই দেবে না। তবু তুমি এসো, কতদূর কি করা যায় আমি দেখবো’।

বন্দীদেরকে বিভিন্ন কুয়া থেকে পানি টানার কাজে লাগানো হলো। সৈন্যরা পানি তুলে দিচ্ছে। বন্দীরা সে পানি এনে আগুনে ঢালছে।

কিছুক্ষণ বন্দীদের সাথে প্রহরী ছিল। কিন্তু একটু পরেই সৈন্য আর বন্দীরা সব একাকার হয়ে গেল।

কমাণ্ডার দ্রুত কাজ করার জন্য সমানে সৈন্যদের গালি গালাজ করছিল।

হঠাৎ একদিক থেকে ছুটে এল একপাল ঘোড়া। লোকজন এদিক ওদিক সরে গেল। ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেল কয়েকজন।

আশফাক সংগী বন্দীকে বললো, ‘এই সুযোগ, চলে পালিয়ে যাই’।

সুযোগ পেয়ে বন্দীটিও আশফাকের সাথে সটকে পড়ল।

আয়ুবীর ফৌজ দূর্গে ঢুকেছে এ কথা ভেবে মুসলমানগণ বেজায় খুশী। তারা বাড়ীঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে এল।

বন্দী আশফাককে নিয়ে বাড়ীতে ঢুকল। বন্দীল বাড়ীর সবাই জেগেই ছিল সবাই বন্দীকে দেখে খুশী হল তারা। এগিয়ে আবেগে জড়িয়ে ধরল।

বন্দী আশফাককে পরিবারের লোকজনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, ‘ওকে লুকিয়ে রাখুন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে শহর থেকে বের করে দেবেন। খ্রীষ্টানরা বলেছে, কাল আমাদেরকে ছেড়ে দেবে। ওকে এখনও কেউ চেনে না। আমি এখন যাই, থেকে গেলে হয়ত কখনও ছাড়া পাব না’।

‘মুসলিম ফৌজ কি দূর্গে প্রবেশ করেছে?’ বন্দীর পিতা জিজ্ঞেস করলেন।

জানি না। আগুনের অবস্থা ভয়াবহ। কখন যে নিভে ঠিক নেই’।

‘আমাদের সৈন্যরা ভেতরে ঢুকে থাকলে ওকে লুকিয়ে রাখার ঝুঁকি নিতে পারি’।

‘আগামীকাল ও নিজেই এখান থেকে চলে যাবে’।

‘কিছুক্ষণ পূর্বে তোমার ছোট বাই দু’জন মুসলমান মেয়েকে নিয়ে এসেছে। সালেমের ছেলে ওসমান প্রাসাদ থেকে ওদের উদ্ধার করে এনেছে’।

‘ওদের পরিচয় কি?’

‘গতকাল খ্রীষ্টান সৈন্যরা একটি মুসলিম কাফেলা লুট করেছিল। মেয়ে দুটো সে কাফেলায় ছিল। ওদের ভাইকেও না কি বন্দী করেছে খ্রীষ্টান সৈন্যরা’।

চমকে উঠল আশফাক।

‘মেয়ে দু’জন এখন কোথায়?’ উদগ্রীব হয়ে প্রশ্ন করল আশফাক।

‘ভেতরেই আছে’। জবাব দিল বন্দীর পিতা।

একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর যুবতীদের কানে এলো। পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল ওরা।

অপরিচিত একজন যুবকের সাথে আশফাককে সামনের ঘরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সবকিছু ভুলে ছুটে এলো দু’বোন। ছোট ভাইকে জড়িয়ে ধরল বুকের সাথে।

নিতজনের চোখেই বইছে আনন্দের অশ্রু। পিতামাতা হারিয়ে বন্দী হয়েছিল ওরা। সাহায্য করার মত কেউ ছিল না। ফরিয়াদ জানিয়েছিল খোদার কাছে। আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।

অলৌকিক প্রাপ্তির আনন্দে ওরা কাঁদছে। বন্দী যুবকটি কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আবেগময় দৃশ্য দেখল।

মেয়েদেরকে রেখে ওসমান এবং বন্দীর ছোট ভাই আবার বাইরে চলে গিয়েছিল। কিন্তু বন্দীর আর অপেক্ষা করার সময় ছিল না। ফলে বন্দী যুবকটি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

বন্দী বেরিয়ে যেতেই হঠাৎ ওসমান এসে ঘরে ঢুকল। সাথে বারজেস এবং তার বন্ধুরা।

ঘরে ঢুকেই বারসেজ যুবতীদের ডেকে বলল, ‘শীঘ্র তৈরী হয়ে নাও। শহর থেকে বের হবার সুেযাগ সৃষ্টি হয়েছে। এখুনি আমরা এখান থেকে পালিয়ে যাবো’।

ওসমান ও তার সংগীরা আশফাককে দেখেই চিনতে পারল। এ ছেলেটির চিৎকার করে ওদের বিবেকের দুয়ারে আঘাত করেছিল।

ওসমান দ্রুত আশফাকের কাছে গিয়ে বললো, ‘তুমি এখানে! কি করে এখানে এলে তুমি?’

আশফাক তার মুক্তির কাহিনী বারজেস ও ওসমানের সংগীদের কাছে বলল।

দুই বোন এবং আশফাককে নিয়ে আঙ্গিনায় নেমে এলো ওরা। তিনটে ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে আঙ্গিনায়।

তিন ভাইবোনকে তিনটে ঘোড়ায় তুলে দিয়ে ওসমান বলল, ‘এর থেকৈ বেশী কিছু কর আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। দোয়া করি তোমাদের সফল নিরাপদ হোক। আর এক মুহুর্তও এখানে অপেক্ষা করো না। পেছনের ফটক এখনো খোলা আছে। যে কোন মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি করো, খোদা হাফেজ’।

আশফাক ও যুবতীদের চোখ কৃতজ্ঞতায় অশ্রুতে ভরে উঠল। আশফাক বললো, ‘সবকিছুই আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। এখনো আমি বুঝতে পারছি না আমি স্বপ্ন দেখছি, না আসলেই এ বাস্তব। যদি যা দেখছি তা সত্যি হয় তাহলে আপনাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানানোর কোন ভাষা আমার জানা নেই’।

আবেগে আশফাকের গলা বসে গেল। মাথা নিচু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, ‘এ হয়তো আমাদের পূর্ব পুরুষের কোন মহত কাজের ফল। আমি আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করছি এবং তার কাছেই আপনাদের এ কাজের বদলা দেয়ার জন্য কায়মতোবাক্যে প্রার্থনা করছি’।

‘খোদা হাফেজ বন্ধুরা! বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে। তোমরা সতর্ক থেকো’। বললো ওসমান।

বারজেস ও ওসমানরা হাঁটা দিল। কয়েক কদম গিয়ে পেছন ফিরে চাইল একবার। দেখল তিনটি ঘোড়া পেছন দরজার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।

ওসমান বন্ধুদের নিয়ে বাড়ীর পথ ধরল, বারজেস শহরের পেছনের ফটকের দিকে এগিয়ে চললেন।

গেটে পলায়নপর মানুষের প্রচণ্ড ভীড়। খানিক পূর্বে বারজেস এসে দেখে গেছেন এ ভীড়। ভীড় দেখেই তার মনে এলো, এদের সাথে তিনিও মেয়েদের নিয়ে শহর থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন।

এ ভাবনা মনে আসতেই তিনি দ্রুত ওসমানের কাছে গেলেন এবং সংগ্রহ করলেন তিনটে ঘোড়া। দুটো দু’বোনের জন্য, নিজের জন্য একটা। কিন্তু আশফাক অতিরিক্ত হওয়ায় তিনি হেঁটেই গেটের দিকে যাত্রা করলেন।

চারজনই এসে গেছেন ফটকের কাছে। সেনা কমাণ্ডার যখন দেখল শহরের লোকজন দলে দলে পরিবার পরিজন নিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, তখন ফটক বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন তিনি। প্রচণ্ড ভীড়ের কারণে ফটক বন্ধ করা যাচ্ছিল না। সৈন্যরা লোকজন সরিয়ে ফটক বন্ধ করার চেষ্টা করতে লাগল। লোকজনকে এদিক ওদিক হাকিয়ে ফিরতে লাগল তারা।

সৈন্যদের তাকডাকে জনতার চাপ কিছুটা কমে এল। সুযোগ পেয়ে ধীরে ধীরে ফটক বন্ধ করতে লাগল সৈন্যরা। মানুষের মিছিল ফটকের কাছে আটকে পড়ল।

বারজেস, আশফাক এবং যুবতীরাও আটকা পড়ল সেই সাথে। ফটক বন্ধ হয়ে গেলে আর বের হওয়া যাবে না। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয় এলে ওদের ধরা পড়ারও সমূহ সম্ভাবনা। বিপদ টের পেল বারজেস। সাথে সাথেই সে ছুটে গেল গেটের কাছে। ওখানে পৌঁছেই বারজেস চিৎকার দিয়ে বললেন, ‘পেছনে সৈন্যরা আসছে। তাড়াতাড়ি ফটক খুলে দাও। জলদি করো’।

বারজেসের চিৎকার শুনে বন্ধ হতে হতেও তা আর বন্ধ হলো না। আবার খুলে গেল গেট। সুযোগ পেয়ে গেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন হুড়মুড় করে পুনরায় বেরিয়ে যেতে লাগল। বেড়ে গেল মানুষের চাপ। বাধ ভাংগা জোয়ারের মত জনতার স্রোট ছুটে চলল বাইরের দিকে। সে স্রোতের সাথে মিশে বাইরে বেরিয়ে এল বারজেস ও তার সংগীরা।

পেজঃ ১ম পেজ | ← পূর্বের পেজ | ... | 3 | 4 | 5 | 6 | পরের পেজ → | শেষ পেজ | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top