৫. ভয়াল রজনী

এ ধরনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ইসলামী রীতি কি হতে পারে তা বুঝার জন্য আমি আপনাদের সামনে ইসলামী ইতিহাসের একটি ঘটনা তুরে ধরতে চাই। হয়তো ঘটনাটি আপনাদের সবার জানা, তবু এর উল্লেখ করছি এ জন্য যে, আজকের উদ্ভুত সমস্যা সমাদানে এ ঘটনা হয়তো আমাদের নতুন করে দিকনির্দেশনা দিতে পারবে।

মদিনায় ইসলামের ছোট্ট রাষ্ট্রটির সবেমাত্র উদ্ভব ঘটেছে। অস্ত্রবল নেই, জনবল নেই। মক্কা থেকে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় মুহাজিররা এসে আশ্রয় নিয়েছেন মদিনায়। তাঁদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করতেই হিমশিম খাচ্ছেন মদিনার গুটিকয়েক আনসার। মহানবী (স) আর তাঁর নিবেতিপ্রাণ সেই মুষ্টিমেয় সাহাবীদের সামনে এখন বেঁচে থাকার কঠিন পরীক্ষা।

একদিন তাঁরা খবর পেলেন, সিরিয়ার দিক থেকে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে বিপুল পরিমান মাল-সামানাসহ এগিয়ে আসছে একটি বাণিজ্য কাফেলা। এর পরপরই খবর এলা, উল্টো দিক থেকে অর্থাৎ মক্কা থেকে সশস্ত্র কাফেরদের এক বিশাল সেনাবাহিনী মদিনা আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসছে।

এ ধরনের নাজুক ও কঠিন পরিস্থিতিতে সাহাবীদের নিয়ে পরামর্শ সভায় বসলেন মহানবী (স.)। বললেন, ‘একদিকে উত্তরে বাণিজ্য কাফেলা, অন্যদিকে দক্ষিণ দিক থেকে ছুটে আসছে কুরাইশদের সৈন্যবাহিনী। আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন এর মধ্যে একটা তোমরা লাভ করবে। এখন তোমরাই বলো, কোনটার সাথে তোমরা মোকাবেলায় যেতে চাও?’

জবাবে বিপুল সংখ্যক সাহাবী বাণিজ্য কাফেলার ওপর হামলা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তাদের এ ইচ্চায় যথেষ্ট বাস্তবতা ছিল। কারণঃ

১.মুসলমানরা ছিল সহায় সম্বলহীন, দুর্বল এবং সংখ্যায় মাত্র তিনশ জনের মত।

২. যুদ্ধ করার মত কোন অস্ত্রপাতি এবং বাহন তাদের হাতে নেই। ঘোড়া মাত্র দু’তিনটি, উট সত্তরটি, ষাটটি বর্ম, ঢাল তলোয়ারের অবস্থাও তথৈবচ।

৩. যুদ্ধ শুরু হলে মদিনায় ইহুদীরা যে কোন ছুতায় কুরাইশদের সহযোগিতায় চলে যেতে পারে। কারণ, মদিয়ায় মুসলমানদের এ নব উত্থানকে তারাও খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না।

৪. অপরদিকে কুরাইশ বাহিনীতে আছে আরবের নামকরা বীরেরা। মক্কার ঝানু ঝানু নেতা ও সমসবিশারবদ শামিল হয়েছে তাতে।

৫. মাত্র শ’তিনেক মুসলমানের মোকাবিলায় ওখানে সমবেত হয়েছে সহস্র যোদ্ধা। তারা প্রত্যেকেই তেজী, বাহন ও উৎকৃষ্ট অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত।

স্বাভাবিক বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিচার করলে বলতে হয়, এ অবস্তায় কুরাইশ বাহিনীর মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আর আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের মধ্যে কোন পার্থক্য করার উপায় নেই। কোন বিবেকবান সুস্থ মানুষই এধরনের আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে না।

অন্যদিকে রয়েছে বাণিজ্য কাফেলা। মক্কার প্রায় সকল ব্যবসায়ীর মালামাল ছিল এ বাণিজ্য বহরে। ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায়, পঞ্চাশ হাজার আশরাফীর পণ্যদ্রব্যে বোঝাই ছিল এ বিশাল কাফেলা। অথচ কাফেলার সাথে রক্ষী ছিল মাত্র ত্রিশ-চল্লিশজন। এ ধরনের একটা কাফেলা কব্জা করা মোটেই কঠিন কিছু ছিল না।

আর এ কাফেলা কব্জা করতে পারলে নিঃস্ব মুহাজিরদের অভাব ঘুচানো যাবে, আনসারকের দারিদ্র দূর করা সম্ভব হবে।

দারিদ্রের বদলে এ পরিমাণ অর্থ পেলে মদিনার প্রতিটি মুসলমান আরবের শ্রেষ্ঠ ধনীতে পরিণত হয়ে যাবে। শিশু ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনায় অর্থের কোন অভাব থাকবে না, উন্নয়নের গতিধারা ত্বরান্বিত করা যাবে। দ্বীনের তাবলীগ ও মানুষকে আকৃষ্ট করার কাজে এ অর্থ প্রভূত কাজে লাগবে।

সবচেয়ে বড় কথা, যে অস্ত্র আর বাহনের অভাবে আজ যুদ্ধের ময়দানে পা বাড়াতে পারছে না মুজাহিদরা, সে অস্ত্র আর যুদ্ধের বাহন ক্রয়ের পথে আর কোন বাধা থাকবে না।

তাই বাণিজ্য কাফেলা মোকাবিলা করার সাহাবীদের এ চিন্তাকে সকলেই সঠিক ও নির্ভুল মনে করবে এতে অবাক হবার কি আছে?

কিন্তু মহানবী (সা) চিন্তা করছিলেন অন্য রকম। তিনি চাচ্ছিলেন, বাণিজ্য কাফেলা নয়, মক্কা থেকে ধেয়ে আসা সামরিক বাহিনীটির মোকাবিলা করতে। এই কারণে প্রশ্নটি তিনি আবার করলেন। সাহাবীরা বুঝলেন তাঁদের দেয়া এ প্রস্তাবের সাথে রাসূল (সা) পুরোপুরি একমত হতে পারছেন না।

মুহাজিরদের মধ্য থেকে তখন মিকদাদ ইবনে আমর (রা) দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার রব আপনাকে যেদিকে যেতে আদেশ করছেন আপনি আমাদের সেদিকেই নিয়ে চলুন। আপনি যেদিকেই যান আমরা আপনার সাথে আছি। বনি ইসরাইলের মত আমরা বলবো না, যেমন তারা মুসা (আ) কে বলেছিলঃ ‘তুমি আর তোমার খোদা গিয়ে লড়াই কর, আমরা এখানেই রইলাম’।

(আমা কথা দিচ্ছি) ততক্ষণ পর্যণ্ত আমরা আপনার সাথে প্রাণপণ লড়ে যাবো, যতক্ষণ আমাদের একটি চোখও দেখতে পাবে’।

এবার আনসারদের দিকে তাকিয়ে মহানবী (সা) প্রশ্নটি আবার করলেন। সাহাবীরা বুঝলেন,  এবার তিনি আনসারদের মতামত জানতে চাচ্ছেন।

তখন আনসার সায়াদ ইবনে মুয়াজ (রা) উঠে দাঁড়ারেন এবং বললেন, ‘আমরা আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছি, আপনি যা নিয়ে এসেছেন তাই চিরন্তন সত্য। আপনার কতা শোনা ও তা মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতিও আমরা আপনাকে দিয়েছি।

অতএব হে আল্লাহর রাসূল (সা), আপনার যা ইচ্ছা আপনি তাই করুন। যে খোদা আপনাকে মহাত্য সহ পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ, আপনি যদি আমাদের নিয়ে সাগরে গিয়ে পৌঁছেন এবং তাতে ঝাপিয়ে পড়েন তবে আমাদের একজনও পিছনে পড়ে থাকবেনা।

আপনি যদি কাল আমাদের নিয়ে দুশমনের মোকাবেলায় যান তবে তা আমাদের জন্য মোটেই দুঃসহ হবে না। যুদ্ধে আমরা দৃঢ় ও অটল থাকবো। লড়াইয়ের ময়দানে অকাতরে বিলিয়ে দেবো আমাদের প্রাণ।

অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ আমাদের দ্বারাআপনাকে এমন কিচু দেখাবেন, যা দেখে আপনার চোখ খুশীতে শীতল হয়ে যাবে। কাজেই আল্লাহর বরকতের ওপর ভরসা করে আমাদের নিয়ে রওনা হোন’।

মুহাজির ও আনসারকের পক্ষ থেকে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোন সহজসাধ্য কাজ ছিল না। যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে কখনো এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব ছিল না। মুসলমানরা যখন ঈমানের বলে বলীয়ান হয় তখনই কেবল এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব। আর মুসলমানরা যখন এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখনই কেবল আল্লাহর সাহায্যের আশা করা যায়।

এসব বক্তৃতা-ভাষনের পর ঠিক হলো যে, বাণিজ্য কাফেলার পরিবর্তে শত্রু-সেনা বাহিনীরই মোকাবেলা করা হবে। এ সিদ্ধান্তের পর মুসলমানরা মক্কার দিকে রওনা হলো এবং বদর প্রান্তরে দুই বাহিনী মুখোমুখি হলো। ইতিহাসে এ যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে মুষ্টিমেয় মুসলমানের হাতে বিশাল কুরাইশ বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটে। তাদের বাঘা বাঘা নেতাদের অধিকাংশই নিহত হয় এবং সত্তরজনের মত বন্দী হয়।

এ ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, তুলনামূলকভাবে সহজ পথটি ধরে চলতে চায় মানুষ, কিন্তু রাসূলের সুন্নাহ হচ্ছে, বিপদ থেকে পালিয়ে বেড়িয়ে লাভ নেই, বরং বিপদ যত কঠিন আর দুরূহ হবে ততই তাড়াতাড়ি তার মোকাবিলায় এগিয়ে যেতে হবে।

এটি শুধু রাসূলের সুন্নাহ নয়, আল্লাহও চান তাঁর প্রিয় বান্দারা যেন সহজ পথের পরিবর্তে ঝুকিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হয়। সুরা আনফালে আল্লাহ এ প্রসংগে বলেন, ‘স্বরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন আল্লাহ তোমাদের কাছে ওয়াদা করেছিলেন যে, দু’টি দলের মধ্যে একটি তোমরা পাবে।

তোমরা চাচ্ছিলে দুর্বল দলটি তোমাদের হস্তগত হোক, কিন্তু আল্লাহ চাইলেন তাঁর বাণী দ্বারা সত্যকে সত্য রূপে প্রতিভাত করতে, কাফেরদের শিকড় কেটে দিতে ও বাতিলকে বাতিল বলে প্রমাণ করতে –পাপীদের পক্ষে তা যতই দুঃসহ হোক না কেন’।

আজে আমরা যে সমস্যায় পড়েছি সেখানেও আমাদের জন্য দু’টো পথ খোলা রয়েছে। ইচ্ছে করলে হেকমতের কতা বলে আমরা চুপ করে যেতে পারি।

তাতে এ আটজন মুজাহিদের জীবনই কেবল রক্ষা পাবে তা নয়, অভিযান পরিচালনা করলে এ এলাকার মুসলমানদের ওপর যে বিপদ নেমে আসার সম্ভাবনা আছে তার থেকেও তারা রেহাই পাবে।

আবার আমরা ইচ্ছে করলে চূড়ান্ত আগাত হেনে মেয়েদের উদ্ধার করার একটা প্রচেষ্টাও চালাতে পারি। ভাল করে ভেবে দেখুন কোন পথে আপনারা এগুবেন?’

দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে থামলেন ইমাম সাহেব।

ওসমান বললো, ‘আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের দেখানো পথেই আমরা এগুবো। কোন রকম ঝুঁকিরই আমরা পরোয়া করি না। যদি বলেন, এ আত্মহত্যার ফয়সালা তবু আমরা পিছবা হবো না।

সালাহউদ্দীন আয়ুবীর কাছ থেকেও আমরা এটাই শিখেছি যে, দুনিয়াতে ভীরু আর কাপুরুষের কোন জায়গা নেই। বরং যারা প্রতিদিন এমনি করে একবার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে শুধু তারাই’।

বারজেস বললেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমি বলবো, একটিমাত্র স্থানে আগুন লাগলেই কেবল মেয়েদেরকে উদ্ধারের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে’।

‘তাড়াতাড়ি বলুন!’

অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে ওসমান, ‘কোথায় আগুন লাগাতে হবে? বলেন তো সমগ্র শহরে আগুণ লাগিয়ে দেবো’।

বারজেস বললেন, ‘সামরিক ঘোড়া কোথায় বাঁধা থাকে তোমরা নিশ্চয়ই দেখেছো। একই স্থানে রয়েছে ছয়শ’ ঘোড়া। বাকিগুলো বিভিন্ন স্থানে। এর পাশেই রয়েছে সমপরিমাণ উট।

আরেকটু এগিয়ে গেলেই দেখবে শুকনো ঘাস এবং খড়ের স্তুপ রয়েছে। তারও পরে সৈন্যদের তাবু। ওখানে ঘোড়া ছাড়াও রয়েছে যুদ্ধের সরঞ্জাম।

শুকনো ঘাস এবং খড়ের স্তূপ আগুণ লাগার সাথে সাথেই সেগুলো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে।

তবে ওতে আগুন লাগানো সোজা ব্যাপার নয়। পুরো এলাকা পাহারা দিচ্ছে সশস্ত্র সেন্ট্রি।

রাতে ও পথে কেউ যেতে পারে না। তবে তোমরা যদি ঘাসের স্তুপে আগুণ দিতে পারো আমি হলপ করে বলতে পারি, পৃথিবী ভুলে সম্রাটগণ ওখানে ছুটে আসবেন। ঘাস, যুদ্ধের সামান এবং কাপড়ের আগুন আকাশ পর্যন্ত উঠবে। আতংকিত হয়ে পড়বে শহরবাসী।

আগুন লাগানোর সাথে সাথে ঘোড়ার রশি কেটে দিতে পারলে মহা প্রলয় ঘটিয়ে দেবে ঘোড়াগুলো।

এখন কথা হলো, ওখানে কে যাবে আগুন লাগাতে, কে ঘোড়ার রশি কাটবে, ওখানে যাবেই বা কি করে?;

‘মনে করুন আগুন লাগান হলো’, একজন যুবকের প্রশ্ন, ‘সম্রাটগণ কক্ষ খালি করে ওখানে ছুটে গেলেন। তখন আমাদের করণীয় কি?’

‘আমি তোমাদের সাথে থাকবো। আমাকে ছাড়া তোমরা ওখানে যেতে পারবে না। আমারা যে দু’জন লোক ওখানে আছে ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারবো মেয়ে দু’জন কোথায় আছে’।

তিনি আরো বললেন, ‘কিন্তু আমাদের চিন্তা করতে হবে মেয়েদেরকে এনে লুকাবে কোথায়? তা ছাড়া, এ অভিযান সফল হলে ক্রাকের মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাবে। খ্রীষ্টানরা নিশ্চিত ধরে নেবে মুসলমানরা ছাড়া আর কেউ এ কাজ করেনি। সে অবস্থায় আমাদের করণীয় কি তাও আমাদের ভেবে দেখা দরকার’।

‘এখন মুসলমানরা কথ শাস্তিতে আছে!’

আক্ষেপ মেশানো কণ্ঠে বললেন ইমাম সাহেব। ‘আমার কথা হচ্ছে, এ কাজ আমরা করবো। ওদের বুঝিয়ে দিতে চাই মুসলমান অসহায় হলেও ওদের গোলাম নয়। ওদের আঘাত আমাদের কলিজায় বিদ্ধ হয়েছে’।

বারজেস ঝানু গোয়েন্দা হলেও নিয়মিত লড়াইয়ের ব্যাপারে তার তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। তবু তিনি এ অভিযানের নেতৃত্ব নিলেন। কারণ, তিনিও মনে করছিলেন মুসলমানরা দুর্বল নয় একথা বুঝানোর জন্য এ অভিযানের যে প্রয়োজনীয়তার কথা যুবকরা বলেছে, সে কথায় যুক্তি আছে।

কি করতে হবে তিনি সবাইকে বুঝাতে লাগলেন। দু’টি সমস্যা সামনে এলো। প্রথমতঃ আগুন লাগানো এবং দ্বিতীয়তঃ প্রাসাদ আক্রমণ করা।

সিদ্ধান্ত হলো, এ অভিযানের সূত্রপাত ঘটাবে মেয়েরা। তারা সেখানে গিয়ে সেন্ট্রির কাছে কোন উর্ধতন সেনা কর্মকর্তার খোঁজ করবে। সেন্ট্রি নিশ্চয় তাদের সন্দেহ করবে না। সেই ফাঁকে তাকে হত্যা করতে হবে মেয়েদের।

এই হত্যার কাজটা যদিও মেয়েদের জন্য কঠিন হবু এটা তাদেরই করতে হবে। কারণ পুরুষরা সেখানে গেরে সেন্ট্রি অবশ্যই তাদের সন্দেহ করবে। হত্যার পর তারাসেই খড়ের গাদার কাছে পৌঁছবে এবং সেখানে আগুন লাগাবে।

এরপর আলোচনা হলো প্রাসাদ আক্রমণ সম্বন্ধে। বারজেস এবং ইমাম সাহেবের পরামর্শ হল এ কাজে নয় জনের বেশী লোক নেয়া ঠিক হবে না। এতে লোকের নজরে পড়ার যেমন ভয় আছে, তেমনি ধরা পড়ার আশংকাও রয়েছে।

মেয়েদের প্রসংগে ওসমান বললো, ‘আমার ছোট বোন আল নূর অভিযানে অংশ নেবে’।

আরেক যুবক তার বোনের কথা বললো। অপর ছ’জনের কোনো বোন নেই। সিদ্ধান্ত হ’ল দু’বোন দুইজন বান্ধবীকে সংগে নেবে।

মেয়েদেরকে কর্ম পরিকল্পনা বুঝানোর দায়িত্ব বারজেসকে দেয়া হল।

আলোচনা শেষে ইমাম সাহেব প্রথমে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন। এরপর যুবকরা একজন একজন করে বাইরে বেরিয়ে গেল।

বারজেস বেরুলেন সবার শেষে। টুকরিটা মাথায় তুলে নিলেন তিনি। হাঁটতে লাগলেন মাথা নুইয়ে। ধীরে ধীরে। তাকে দেখে মনে হয় পৃথিবীর সকল দুঃখের বোঝা মাথায় নিয়ে একটা লোক এগিয়ে যাচ্ছে।

ওসমান একাকী বাড়ীর পথ ধরল। তার বাড়ী এখনও বেশ খানিকটা দূরে। হঠাৎই অন্ধকার ফুঁড়ে তর সামনে এসে দাঁড়াল কেউ।

ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল ওসমান। অন্ধকারে শোনা গেল কারো খিলখিল হাসির শব্দ।

ছায়মূর্তি এসে দাঁড়াল ওসমানের পাশে। ওসমান দেখল একটি নারীর মূর্তি।

ওসমান ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, ‘কে?’

ছায়ামূর্তি ওসমানের আরো কাছে সরে এসে বলল, ‘আমি’।

ওসমান তখনো তাকে চিনতে পারেনি। বলল, ‘আমি কে?’

রিনি আলেকজাণ্ডার মুখের কাপড় সরিয়ে বলল, ‘ওসমান, ভূত না আমি রিনি’।

রিনি আলেকজাণ্ডার পাশের বাড়ির সেই খ্রীষ্টান যুবতী যার সাথে আল নূরের বন্ধুত্ব। আশপাশের বাড়িগুলোর চাইতে ওসমানদের বাতেই ওর যাতায়াত বেশী। যখন তখন হুটহাট চলে আসে।

ভাই বোন দু’জনের সাথেই রিনির খোলামেলা সম্পর্ক। বিশেষ কাজে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে ওসমান চাইছে, ও আর এ বাড়ীতে না আসুক। কিন্তু সরাসরি নিষেধ করে সন্দেহের পাত্র হতে চায় না বরে ইদানিং ওসমান তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।

রিনি সব সময় ওসমানের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে। এতদিন এ নিয়ে ওসমানের মনে কোন প্রশ্ন দেখা দেয়নি। কিন্তু মুজাহিদের কাতারে যেদিন নাম লেখালো সেদিন থেকেই তার মনে ভয় ঢুকল, মেয়েটা গোয়েন্দা নয়তো?

কখনো তার মনে হতো এ খ্রীষ্টান মেয়েটা তার নৈতিকতা নষ্ট করতে চাইছে নাতো? তার জাতীয় চেতনাবোধ বিনাশ করার জন্য কি একে তার পিছনে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে?

রিনিকে চিনতে পেরে মৃদু সৌজন্যের হাসি উপহার দিয়ে কিছু না বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইল ওসমান। সামনে একে পথ রোধ করে দাঁড়াল রিনি।

একজন খ্রীষ্টান যুবতীর সাথে কথা বলছে ওসমান, ধরা পড়লে শাস্তি পাবে, এমন কোন আশংকা নেই। বরং একজন সন্দেহভাজন মুসলিম যুবক এক যুবতীর ফাঁদে পা দিয়েছে ভেবে ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা খুশীই হবে।

থেকে গেল ওসমান। বললো, ‘আমার একটু তাড়া আছে রিনি’।

‘তোমর কোন তাড়া নেই’। কলকলিয়ে উঠল রিনির কণ্ঠ। ‘এত সহজে আমাকে ছাড়াতে পারবে?’

‘তোমাকে ছাড়ানোর কথা তো বলিনি!’

‘মিথ্যে বলো না ওসমান’। রিনির কণ্ঠে অভিমানের সুর।

‘এখন তোমাদের বাড়ী থেকেই আসছি। তোমার বোন স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে ‘তুমি আর এসো না। ভাইয়া রাগ করেন’। কেন ওসমান, এ কথা তো তুমিই আমায় বলতে পারতে!’

ওসমান নিশ্চুপ। বোনটা খুব তাড়াহুড়া করেছে। কি জবাব দেবে তাই ভাবছে ওসমান।

তাকে নিরব থাকতে দেখে রিনি বললো, ‘বর তো কেন তোমাদের বাড়ী যাব না?’

এসব কথা বলার বা শোনার সময় ওসমানের হাতে নেই। তার হৃদয়ে ঝড় বইছে। এক অন্ধ আবেগ পিষে মারছে তার অন্তর। কি জবাব দেবে ভেবে পেল না। হৃদয়ের সত্যি কথাটাই মুখ ফসকে বেরিয়ে এল।

‘আমাদের বাড়ীতে আসতে কেন তোমায় নিষেধ করেছি জানি না। শোন রিনি, আমরা একজন আরেকজনকে যতই ভালবাসি তবুও আমরা পরস্পর দু’টি শত্রু জাতির অন্তর্ভূক্ত।

তুমি ব্যক্তিগত ভালবাসার কথা বলবে। আমি বলবো জাতীয় চেতনাবোধের কথা। ক্রুশ এবং কোরআন কখনো এক হতে পারে না।

এটা আমার দেশ। তোমর জাতি এখানে কি করছে? তোমার জাতির শেষ ব্যক্তিটি যতক্ষণ পর্যন্ত এখানে থাকবে আমাদের দু’জনের মধ্যে প্রেম তৈরী হতে পারে না। আমি আমার মনের কথাটাই তোমাকে বললাম’।

‘তা হলে আমার হৃদয়ে কি আছে তাও শুনে নাও। আমার হৃদয়ে রয়েছে তোমার জন্য ভালবাসা। ক্রুশ বা কোরআন সে ভালবাসার অন্তরায় হতে পারবে না।

তোমাকে না দেখলে আমার ভাল লাগে না। তোমাকে হাসিখুশী দেখলে আমার মন আনন্দে ভয়ে উঠে। ওসমান, তোমাদের বাড়ীতে যেতে আমাকে নিষেধ করলে তা দু’জনের কারুর জন্যই ভাল হবে না’।

‘ভয় দেখাচ্ছো? তা দেখাতেই পার। কারণ তুমি যে শাসক জাতির মেয়ে’।

‘আমার মনে শাসকের অহমিকা থাকলে এতক্ষণ তুমি এখানে থাকতে না। থাকতে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। তুমি কি ভেবেছো তুমি  কি করছো আমি কিছুই জানি না?

বল তো তোমার গোপন তৎপরতার কথা বলে দিই। আমার জাতি এবং দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য যে অস্ত্রসম্বার তোমার ঘরের মাটির নীচে লুকিয়ে রেখেছ সে খবর কি তোমায় বলবো? আল নূরকে তুমি সামরিক ট্রেনিং দিয়েছ। তোমার সংগীদের অনেককেই আমি চিনি। তুমি জান না ওসমান তোমার এবং জেলের মাঝে আমিই এখন বাঁধা হয়ে আছি।

তুমি জান কে আমার পিতা। কতবার তিনি বলেছেন, ‘ওসমানকে গ্রেফতার করা জরুরী হয়ে পড়েছে’।

প্রতিবারই আমি অনুনয়-বিনয় করে বলেছি, ‘ওসমানের বোন আবার বন্ধু। তা ছাড়া ওর পিতার একটা পা নেই’।

আব্বা আমায় শাসিয়ে বলেছেন, ‘ওদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো। মুসলমানরা ভালবাসার পাত্র নয়’।

আমি আমার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। এ জন্য তার আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছেন না। নইলে কবেই তুমি অন্ধকার প্রকোষ্ঠ ঢুকে যেতে’।

রিনির কথা শুনে ওসমান পাথরের মত জমে গেল। তার ঠোঁট দু’টো যেন কেউ শক্ত আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে। সে কিছু বরতে চাইল, কিন্তু কিছুতেই ঠোঁট দু’টো আলাদা করতে পারল না।

রিনির চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রুর ফোটা পড়তে লাগল। গলা বসে এল তারও। আর কোন কথা না বলে সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

ওসমান আবারও কথা বলতে চেষ্টা করল, কিন্তু এবারও তার গলা দিয়ে কোন স্বর বের হলো না।

সূর্য ডুবেছে অনেক আগে। জেঁকে বসে আছে রাতের আঁধার। পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ওরা দুই যুবক যুবতী। কারো মুখে কোন কথা নেই।

ওসমান বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর যখন সম্বিত ফিরে পেল রিনিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। সে এক পা এগুতেই রিনি আবার তার সামনে এসে তার পথ রোধ করে দাঁড়াল।

পলকে দু’জনের মাঝের সব ব্যবধান ঘুচে গেল। ওসমানের বুকের সাথে মিশে গেল রিনি। ওর দু’টো হাত ওসমানের কোমর পেঁচিয়ে ধরলো। ওর শরীরের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ল ওসমানের চারপাশে। দু’জনের নিঃশ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ওসমানের গাল স্পর্শ করেছে রিনির রেশম কোমল চুল।

ওসমান মুক্ত হবার চেষ্টা করতেই রিনি ছেড়ে দিল তাকে।

‘আমায় মুক্তি দাও রিনি’। ওসমানের বিধ্বস্ত কণ্ঠ। ‘আমায় পাথর হতে দাও। আমার আর তোমার পথ এক নয়। দু’জন কখণও একত্রে চলতে পারবো না। তোমার বাপ-মা যেমন এটা মেনে নেবে না তেমনি আমারও। আমরা নিরূপায় রিনি। আমাকে তুমি ক্ষমা করো, তোমার প্রেম-বন্ধন থেকে মুক্তি দাও আমায়’।

‘ওসমান, এই কি তোমার মনের কথা? তুমি কি পারবে তোমার হৃদয়ের গোপন কুঠরীতে আমার যে ছবি আকাঁ আছে তা মুছে ফেলতে? বল, পারবে?’

‘এ ছাড়া আমি আর কি করতে পারি রিনি! আবেগ দিয়ে তো জগত চলে না। বাস্তবতাকে অস্বীকার করবো সে শক্তি আমার কোথায়?’

‘প্রেম উৎসর্গ চায়’। রিনির কণ্ঠে মাদকতা। ‘বল কি ত্যাগ চাও তুমি আমার কাছে?’

‘এ মুহুর্তে তোমার কাছে আমার চাওয়ার কিছু নেই।  শুধু চাই, আমাকে ভুলে যাও, ক্ষমা করো আমাকে’।

‘অসম্ভব। তুমিই আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ মনের মানুষ। তোমাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়।

তবে তুবি চাও বা না চাও, আমি কথা দিচ্ছি, আজ থেকে তোমার যা ইচ্ছে তুমি করে বেড়াও, এতে তোমার যে বিপদ আসবে সে বিপদ আমার। তোমায় আমি কখনও গ্রেফতার হতে দেব না’।

ওসমান গভীর হতাশা ছড়িয়ে বলল, ‘আর বাস্তবতা আমাকে বলছে, ওসমান, এ মাদকতাময় দেহ আর রেশম কোমল চুলের ফাঁকে তুমি কোনদিন জড়াতে পারো না। এ অনুচিত, এ অসম্ভব।

আর তাই আমিও প্রতিজ্ঞা করছি, আমার মনে কি আছে তা তোমাকে কখনোই বলবো না। প্রাণ গেলেও আমি আমার জাতির শত্রুপক্ষের কোন ঘরের কোন যুবতীর প্রেমের ফাঁদে পা দেবো না’।

‘ঠিক আছে ওসমান, তোমার প্রতিজ্ঞা তোমার কাছে জমা থাক। আমার ভালবাসার জন্য আমি কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারি আজ থেকে সে পরীক্ষায় আমি দিয়ে যাবো।

যাও ওসমান, তোমার খুব তাড়া। তোমাকে অনেকক্ষণ আটকে রেখেছি বলে দুঃখিত। তবে তুমি চাও বা না চাও তোমার বাড়ী আসা আমি কখনোই বন্ধ করবো না’।

পথ ছেড়ে দাঁড়াল রিনি। দ্রুত পা চালাল ওসমান। তার অনেক সময় এরই মাঝে নষ্ট হয়ে গেছে।

ওসমানের গমন পথের দিকে অনেকক্ষণ বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রিনি। ওসমানের পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে গেলে নিজেও বাড়ির দিকে হাঁটা দিল রিনি।

ওসমান সালেম বাড়ীতে পৌঁছে দেখল বারজেস বসে আছেন।

অন্দরে ঢুকে পিতা-মাতা এবং আল নূরকে সব কথা খুলে বললো। বললো, ‘আমাদের সাথে আল নূরকেও যেতে হবে’।

ওসমানের পিতার একটা পা নেই। যৌবনে খ্রীষ্টানদের সাথে যুদ্ধে তিনি তার পা টা হারিয়েছেন। তার দুঃখ ছিল আর কোন দিন জেহাদে যেতে পারবেন না বলে।

সব শুনে তিনি ওসমান বললেন, ‘তোমরা এক বিপজ্জনক অভিযানে যাচ্ছ। আমাকে যেন শুনতে না হয় তুমি বন্ধুদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছ।

এ অভিযানে ধরা পড়ার ভয় সবচে’ বেশী। তুমি ধরা পড়লে যদি তোমার সংগীরা পালিয়ে আসতে পারে তবে জীবন দেবে কিন্তু সংগীদের নাম বলবে না।

আমি সুলতান আয়ুবীর সেনাবাহিনীর জন্য তোমাকে বড় করেছি। ভেবেছিলাম, আল নূরের বিয়ের কাজটা সেরে তোমাকে বিদেয় করবো। যাও। আমার হৃদয় শান্ত করো। আবারো বলছি, শোন, কেউ যেন আমায় বলতে না পারে ওসমানের দেহে সালেমের রক্ত নেই’।

সালেম আল নূরকেও এ অভিযানে অংশ গ্রহণের জন্য সানন্দে অনুমতি দিলেন।

ওসমান বললো, ‘বারজেস বৈঠকখানায় রয়েছেন। এ অভযানের নেতৃত্ব তিনি দেবেন’।

ওসমানের পিতা সালেম বরজেসের কাছে চলে গেলেন।

‘আল নূর!’ ওসমান বললো, ‘এ অভিযানে যেতে পারে তোমার এমন দু’জন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে এসো’।

বেরিয়ে গেল আল নূর। খানিক পর ফিরল দু’জন বান্ধবীকে নিয়ে। ততোক্ষণে ওসমানের সংগীর বোনও এসে গেছে। এরপর একজন একজন করে এসে পৌঁছল সাতজন যুবক।

কোন পথে যেতে হবে মেয়েদেরকে বুঝিয়ে বললেন বারজেস। বললেন, ‘পথে সেন্ট্রি তোমাদেরকে বাঁধা দেবে। তখন তোমরা সেন্ট্রিকে উপরে যাবার পথ জিজ্ঞেস করে বলবে, সম্রাট রিমাণ্ড ডেকে পাঠিয়েছেন।

সেন্ট্রি বলবে, এটা সম্রাট রিমাণ্ডের কাছে যাবার পথ নয়।

তোমরা বলবে, তাহলে কোন দিকে? এভাবে তার সাথে আলাপ জমিয়ে তাকে ঘিরে ফেলবে।

চারজনের একজন থাকবে চাকরানী। মাথায় রেশমী রুমালে ঢাকা থাকবে একটি ঝাকা। ঝাকায়থাকবে জ্বালানী। সেন্ট্রিকে ঘিরে ফেলার পর এক ফাঁকে তাকে মেরে ফেলতে হবে। আগুন লাগাবে তারপর।

অনেকগুলো ঘোড়ার পায়ে বাধা রশি একত্রিত করে একেকটা খুটির সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ রশি কেটে দিতে হবে।

রশি কাটার পর কয়েকটা ঘোড়াকে খঞ্জর দিয়ে আঘাত করবে। এরপর সুযোগ পেলে উটের রশিও কেটে দেবে’।

বারজেস মেয়েদের পোশাক পাল্টে দিলেন। একজনকে চাকরানী সাজিয়ে তারহাতে মুখে ছাই মেখে দেয়া হল।

এরপর বারজেস ওসমান এবং তার সংগীদের সাথে কথা বললেন। তাদেরকে অভিযানের সমস্ত পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিলেন।

প্রত্যেককে একটি করে খঞ্জর দেয়া হল। প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। অনেক সময় কেটে গেছে। ওসমানের সংগীরা ছটফট করতে লাগল।

বারজেস বললেন, ‘এখনও শহর জেগে আছে। শহর ঘুমুলেই কেবল জেগে উঠে প্রাসাদের পানশালা’।

রাত আরেকটু গভীর হলো। কমে এলো শহরের কোলাহল। এক সময় বারজেস বললেন, ‘এবার উঠা যায়’।

একজন একজন করে বেরিয়ে পড়ল সবাই। ছেলে এবং মেয়েদের পথ ভিন্ন। ওরা যে যার পথে পা বাড়াল।

আগুন লাগানোর জন্য মেয়েদেরকে একটা নির্দিস্ট সময় ঠিক করেদেয়া হল। সে মুহুর্তে ওসমানরা থাকবে প্রাসাদের কাছে।

বিপজ্জনক অভিযান। সামান্য ভুল বা সময়ের ঈষৎ হেরফের হলেই অভিযান ব্যর্থ হয়ে যাবে। ওদের ভাগ্যে ঘটবে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু।

মেয়েদের কাজ ছিল আরও বিপজ্জনক। ধরা পড়লে ওদের কি অবস্থা হবে কল্পনাও করা যায় না। আল নূর বললো, ‘ধরা পড়লে আমরা আত্মহত্যা করবো। জীবিত থেকে কিছুতেই বেঈমানদের ভোগের সামগ্রী হবো না’।

সমগ্র শহরে নীরবতা নেমে এলো। কোন বাড়ীতে আলো নেই। সুনসান সড়ক।কেবল মাত্র সম্মিলিত সামরিক হেড কোয়ার্টারে এখনও আলো জ্বলছে।

পানশালায় হাজির হয়েছেন খ্রীষ্টান সম্রাটগণ। জমে উঠল পানশালা। আজকের আলোচনার বিষয় অপহৃত দু’জন মুসলিম যুবতী এবং লুণ্ঠিত ধন-সম্পদ।

একজন প্রশ্ন করল, ‘মেয়ে দুটো কি কাজে আসবে?’

জবাবে একজন সেনা কমাণ্ডার বললো, ‘মেয়েরা বুদ্ধিমতি এবং প্রাপ্ত বয়স্কা। একজনের বয়স ষোল, দ্বিতীয় জনের বাইশ। ওদেরকে দিয়ে গুপ্তচরের কাজ করানো যাবে না। কিছুদিন আনন্দ উপভোগে ব্যবহার করা যায়’।

‘এরপর কোন সেনা অফিসারের হাতে তুলে দিলেই হবে’। চীফ কমাণ্ডার বললেন। ‘অফিসাররাত াদের বিয়ে করে নেবে’।

মেয়েদের নিয়ে অশ্লীল আলোচনা চলল দীর্ঘক্ষণ। ওরা তখন ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে।

পেজঃ ১ম পেজ | ← পূর্বের পেজ | ... | 2 | 3 | 4 | 5 | ... | পরের পেজ → | শেষ পেজ | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top