৬. আবারো সংঘাত

 ‘ভাল না, বলো তোমার ঠোঁটের মত মিষ্টি।’

 ‘তুমি কি আমার জন্য এ উপহারের কথাই বলেছিলে?’

 ‘আরে না, উপহার হিসাবে কি তোমাকে আমি এত সামান্য জিনিস দিতে পারি! সেদিন দুর্বৃত্তের হাত থেকে তুমি যে সাত রাজার ধন রক্ষা করেছিলে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সে জিনিস আমি তোমার হাতেই তুলে দেবো। কি, বুঝতে পেরেছো?’ বলেই কটাক্ষের বাণ হানলো শায়লা।

 স্তম্ভিত হিশাম অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে রিল বিমুগ্ধ নয়নে, যেন এই মাত্র মধুবর্ষী কোকিলেরা বস্নত উৎসবে মেতে উঠেছে। এরপর থেকে গোপনে তাদের মেলামেশা মিয়মিত চলতে লাগল।

 যেদিন আরসালান আল ইদরিসকে তার যুবক সন্তানদের কথা বলেছিল তার পরের দিনই শায়লার সাথে পরিচয় ঘটে আল হিশামের।

 ‘এক যুবক আমাকে খুব বিরক্ত করছে।’ একদিন অন্তরঙ্গ এক মুহূর্তে হিশামকে বলল শায়লা। ‘ছেলেটা আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছে, ওর প্রস্তাবে সাড়া না দিলে ও আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।’

 ‘যুবকটি কে?’ জানতে চাইল হিশাম। শায়লা এর কোন জবাব না দিয়ে এড়িয়ে গিয়ে বললো, ‘না থাক, যদি বেশি বিরক্ত করে তবে বলবো।’

 যেদিন সন্ধায় হিশামের কাছে এই অভিযোগ করলো শায়লা, ঠিক তার আগের দিন আল ইদরিসের ছোট ছেলে যার বয়স মাত্র সতেরো, তাকেও জালে আটকে ফেলে মেয়েটি। প্রথম দিনেই তার কাছে এমন খোলামেলা প্রেম নিবেদন করলো যে, যুবকটি পতঙ্গের মত নিজেকে ছেরে দিলো তার ইচ্ছার কাছে। গোপনে দুদিন মেলামেশার পর তাকেও বললো, ‘এক যুবক আমাকে খুব বিরক্ত করছে এবং কিডন্যাপ করার হুমকি দিচ্ছে।’

 মুহূর্তে তার রক্ত গরম হয়ে উঠলো। বললো, ‘ছেলেটা কে, কোথায় থাকে? আমাকে সব খুলে বলো। আমি সে বদমাইশের বদমাইশি করার সাধ জন্মের মিটিয়ে দেবো।’

 ‘বাব্বাহ! সাহেবের যে মেজাজ! একটা খুনোখুনি কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে দেখছি। ঠিক আছে বাবা, আর আর বলে কাজ নেই, যদি ছোড়া আবারও বিরক্ত করে তবে ঠিকই তার ঠিকানা আমি তোমাকে দিয়ে দেবো। তখন বাছাধন বুঝবে, মেয়েদের পেছনে ঘুর ঘুর করার মজা কত!’

 সে রাতেই মেয়েটি যখন হিশামের সাথে মিশলো তখন বললো, ‘ছেলেটি আমাকে খুব বেশি বিরক্ত করছে। তোমাকেও খুন করার হুমকি দিয়েছে। তুমি একটু সাবধানে চলাফেরা করো।’

 পরের দিন যখন হিশামের ছোট ভাইয়ের সাথে মিলিত হলো তখন বললো, ‘ ছেলেটা আবারও আমাকে উত্যক্ত করতে এসেছিল। আমি তাকে বলেছি, খবরদার, আমার একজন ভালবাসার মানুষ আছে, তুমি বেশি বিরক্ত করলে আমি কিন্তু সবকিছু তাকে বলে দেবো। ও বলে কি জানো! বলে, তুমি তো তোমার ছায়া। তুমি যেখানেই যাও, আমিও সেখানে যাই। কখনো আমাকে দেখতে পাও, কখনো পাও না। তোমার ভালবাসার ছেলেকে আমি চিনি, ওকে তোমার কাছ থেকে সরে যেতে বলো, নইলে তাকে আমি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবো। আলম, তুমি খুব সাবধান থেকো। আমার বয় হচ্ছে ও না আবার তোমার কোন ক্ষতি করে বসে!’

 হো হো করে হেসে উঠল আলম। ‘ঠিক আছে, ওকে বলো, পারলে সে চেষ্টা একবার করে দেখতে। কিন্তু ধমক দিয়ে আমাকে সরানোর চেষ্টা করে কোন লাভ হবে না।’

 এভাবে দুই ভাই একই মেয়ের জালে আটকা পড়ে গেল। দু’জনের কেউ আসল সত্য সম্পর্কে কিছুই জানতে পারল না, শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী অদৃশ্য শত্রুকে খুন করার নেশায় ধারাল ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। মেয়েটি দুই ভাইয়ের সাথেই আলাদাভাবে প্রেমের অভিনয় করে যেতে লাগলো সমান তালে। সপ্তাহ শেষে দেখা গেক, ব্যবসার প্রতি কোন মনোযোগ নেই বড় ভাইয়ের, আর ছোট ভাউ লেখাপড়া লাটে তুলে বন্য জন্তুর মত হিস্র পশু হয়ে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরের অলিগলিতে।

 একদিন সন্ধ্যায় মেয়েটি হিশামকে শহর থেকে একটু দূরে তাদের যে খেজুর বাগান আছে ওখানে জরুরীভাবে দেখা করতে বললো। তারপর এল ছোট ভাইয়ের কাছে। তাকেও ঠিক একই সময়ে একই জায়গায় দেখা করার কথা বললো মেয়েটি।

 ‘ওখানে কেন?’ জানতে চাইল আলম।

 ‘সেই ছোকরা এখনো আমার পিছু ছাড়েনি। বলেছে, আজ আমি যেখানেই যাবো আমাকে অনুসরণ করবে সে। আর আমি যদি আমার পছন্দের প্রেমিকের সাথে দেখা করি তাহলে আমার সামনেই আমার প্রেমিককে হত্যা করবে। আমি তাকে বলেছি, তুমি যদি এতই বীর হও তবে সন্ধ্যায় আমাদের হেজুর বাগানে এসো। যদি তুমি তাকে হত্যা করতে পারো তবে আমি চিরদিনের জন্য তোমার হয়ে যাব। আর যদি না পারো তবে কোনদিন আর তুমি আমাকে বিরক্ত করতে পারবে না। কিন্তু আলম, আমার ভয় হচ্ছে, তোমার যদি কোন বিপদ হয়! নাকি না করে দেবো ওকে আসতে?’

 ‘কি যে বলো! এই দিনটির জন্যই তো এতদিন ধরে আমি অপেক্ষা করছি। তোমার প্রেমই আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে, এ নিয়ে তুমি কোন চিন্তা করো না।’

 ‘এলাকাটা নির্জন। সন্ধ্যায় অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে। আমার যেতে ভয় করছে।’

 ‘তুমি কিচ্ছু ভেবো না। তুমি রওনা হওয়ার পর আমি ধারেকাছেই থাকবো এবং তোমাকে পাহারা দেবো।’

 শায়লা হিশামকে ঠিক একই কথা বলেছিল। দুই ভাই প্রতিদ্বন্দ্বীকে খুন করে প্রিয়াকে আপন করে পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রক্তাক্ত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগল।

 সন্ধ্যায় বড় ভাই খঞ্জর হাতে নিয়ে সেখানে গিয়ে হাজির হলো। সূর্য ডুবেছে এইমাত্র। বাগানটিকে ঘিরে ফেলেছে অন্ধকার। হিশামের মনে হলো, প্রতিটি গাছের গোঁড়ায় একজন করে ঘাতক ওঁৎ পেতে বসে আছে।

 মেয়েটি ওখানে পৌঁছে দেখতে পেলো হিশাম আগেই এসে পৌঁছেছে। শায়লা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো, ‘যাক বাবা, তুমি এসে গেছো! আমার বুকটা এখনো ধরফর করছে। শয়তানটাকে দেখলাম আমাকে অনুসরণ করে পিছু পিছু আসছে।’

 বড় ভাই খঞ্জর বের করে প্রস্তুত হয়ে রইল। দেখতে পেলো, দূর থেকে একটি ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে। মেয়েটি বললো, ‘ওই যে সে এসে গেছে। কিন্তু আমি চাই না কোন খুনখারাবী হোক। ও যদি ভয় পেয়ে ফিরে যায় এবং আর আমাকে বিরক্ত না করার ওয়াদা করে তবে এবারের মত তাকে মাফ করে দিতে চাই। তুমি বসো, আমি ওকে এ প্রস্তাব দিয়ে দেখি ও কি করে।’

 বড় ভাইকে রেখে ছোট ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গেল শায়লা। বললো, ‘ওই হারামী তো আগেই এসে হাজির। কিন্তু ওর হাতে খঞ্জর আছে। তুমি বরং দিরে যাও। শেষে আবার কি না কি ঘটে যায়!’

 ছোট ভাইয়ের মাথায় খুন চড়ে গেল। সে এ কথার কোন জবাব না দিয়ে খঞ্জর বের করে অন্ধের মোড় ছুটলো অপর আগন্তুকের দিকে। বড় ভাই যখন দেখলো সেই ছায়ামূর্তি ধেয়ে আসছে তার দিকে, সেও তেড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার ওপর। প্রেমে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে শক্তি পরীক্ষায় মেতে উঠলো দুই যুবক, কিন্তু ওরা কেউ জানতেও পারল না এই প্রতিদ্বন্দ্বী তারই সহোদর ভাই, একই রক্ত বইছে ওদের শরীরে, একই মায়ের দুধ পান করেছে দু’জনে। দু’ভাই পরষ্পরকে ভালওবাসে প্রাণের অধিক।

 প্রবল বিক্রমে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। দু’জনের চোখেই বন্য আক্রোশ, প্রতিহিংসার প্রবল উত্তাপ। ফলে কেউ কাউকে চিলতে পারল না, কেউ কাউকে রেহাইও দিল না। একের পর এক একে অন্যকে প্রবলভাবে আঘাত করেই চললো। সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে উঠল দু’জনের। নিস্তেজ হয়ে এল উভয়ের শরীর। জড়াজড়ি করে উভয়েই মুখ থুবড়ে লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। আবার উঠল। আবার পড়ল। মেয়েটি বার বার চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘লাগাও, খুন করে ফেলো, শেষ করে ফেলো।’

 উভয়েই ভাবছিল শায়লা তাকেই উৎসাহ দিচ্ছে। এ কথা ভাবতেই নিস্তেজ শরীরে আবার একটু ছলকে উঠতো শক্তির বিদ্যুৎ। উভয়েই আরো উত্তেজিত হতো তার উৎসাহে।

 আলী বিন সুফিয়ানের এক অশ্বারোহী ওই পথ দিয়ে গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসছিল, হঠাৎ তার নজরে পড়ে গেল ওরা। অশ্বারোহী দ্রুত তাদের নিকটবর্তী হলো। মেয়েটি ঘোড়ার খুরের আওয়াজ পেয়ে চট করে মুখ ফিরাতেই দেখতে পেল অশ্বারোহীকে। ভয় পেয়ে ওখান থেকে ছুটে পালালো সে। ঢুকে গেল বাগানের ভেতরে, আরো অন্ধকারের দিকে। কিন্তু অশ্বারোহী তাকে বেশি দূর যেতে দিল না। ধাওয়া করে ধরে ফেললো তাকে। মেয়েটিকে নিয়ে লড়াইয়ের ওখানে ফিরে এল অশ্বারোহী।

 ততক্ষণে লড়াই শেষ। দু’জনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। অশ্বারোহী মেয়েটির হাত বেঁধে ঘোড়ার জিনের সাথে আটকে দিল। এরপর ঝুঁকে পড়ে পরীক্ষা করল আহত যুবক দু’জনকে।

 তখনো মারা যায়নি দু’জনের কেউ। তবে অবস্থা একেবারেই শেষ পর্যায়ে। কারোরই সংজ্ঞা আছে কি নেই ভুঝা যায় না, নিঃশ্বাস বইছে খুবই আস্তে।

 ‘কি হচ্ছিল এখানে? এ যুবকেরা কারা?’ মেয়েটিকে প্রশ্ন করলো অশ্বারোহী।

 ‘আমি চিনি না।’ ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল মেয়েটি।

 ‘বাজে কথা রাখো। শহর থেকে দূরে এই নির্জন স্থানে অন্ধকার রাতে তুমি কি তবে হাওয়া খেতে এসেছো? বলো যুবকদের নিয়ে এখানে কি করছিলে তুমি? কেমন করে যুবকদের এ মরণাপন্ন অবস্থা হলো?’

 মেয়েটি এবার জবাব না দিয়ে চুপ করে রইল, কিন্তু প্রহরী তাকে ছাড়লো না। বলল, ‘আমার প্রশ্নের জবাব দাও। বলো, তুমি কে, আর এই যুবকদের পরিচয় কি?’

 মেয়েটি এবার খিল খিল করে হেসে উঠল।

 ধমকে উঠল অশ্বারোহী, ‘খবরদার! হাসবে না, যা জিজ্ঞেস করছি তার জবাব দাও।’

 ‘একজন যুবতীর কাছে যুবকরা কি চায় বুঝ না! কে আগে তাই নিয়ে ঝগড়া করে এবার দু’জনেই মরেছে। হায় আমার কপাল!’

 প্রহরী আবার নাড়ি পরীক্ষা করল আহত যুবকদের। মেয়েটির কথা এবার আক্ষরিক অর্থেই সত্য প্রমাণিত হলো, দেখলো দু’জনই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে প্রায় একই সময়ে।

 লাশ দু’টি ঘোড়ার পিঠে তুলে লাগাম হাতে নিয়ে মেয়েটিকে বললো, ‘চলো।’

 মেয়েটি অশ্বারোহীর গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তাকে লোভ দেখালো। অনুনয় করে বললো, ‘যারা আমাকে ভোগ করার জন্য এখানে এনেছিল তারা নেই, আপনি আমার সাথে যা খুশি ব্যবহার করুন, কিন্তু দোহাই খোদার, আমাকে গ্রেফতার করবেন না।’

 কিন্তু অশ্বারোহী তার কোন কথাই শুনল না, তাকে নিয়ে গেল আলী বিন সুফিয়ানের কাছে।

 লাশ দু’টিও আনা হলো। যখন আলোয় আলান হলো লাশ দু’টি, চমকে উঠলো সবাই, আরে! এরা তো দুজনেই হাকিম আল ইদরিসের ছেলে!

 আল ইদরিসকে সংবাদ দেয়া হলো। তার মাত্র দুটিই সন্তান, দু’জনই একই সাথে মারা গেছে এ দৃশ্য দেখলে তার কি অবস্থা হবে এ কথা ভেবে পেরেশান হলেন আলী বিন সুফিয়ান।

 মেয়েটি উল্টা-পাল্টা কথা বলতে লাগলো। কোন প্রশ্নেরই সে সন্তোষজনক জবাব দিল না। সে কার মেয়ে, কোথায় থাকে, এসব সাধারণ প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে গেল মেয়েটি।

 আল ইদরিস এলেন। দুই সন্তানের লাশের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন তিনি। কিছুই বললেন না, কোন প্রশ্নও করলেন না। বাড়ি দিয়ে ওদের মাকে কি বলবেন সে কথাও জানতে চাইলেন না কারো কাছে।

 সব ঘটনা খুলে বলা হলো তাকে। তিনি বললেন, ‘সন্তান হারানোর বেদনায় ব্যথিত নই আমি, আফসোস তাদের অপমৃত্যুতে। একটি সামান্য মেয়েকে নিয়ে দু’ভাইয়ের মাঝে মালিন্য হয়েছে এবং সেই মনোমালিন্য প্রথমে ঝগড়ায় এবং পড়ে খুনখারাবিতে রূপান্তরিত হয়েছে এমনটি আমি ভাবতে পারছি না। এর মধ্যে কোন ঘাপলা অবশ্যই আছে। দু’ভাইয়ের মধ্যে খুবই সুসম্পর্ক ছিল। আজও সকালে ওরা এক সাথে বসে নাস্তা করেছে, খোশগল্প করেছে, কারো আচরণেই কোন ক্ষোভ বা রাগের কোন আলামত ছিল না। অথচ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ওদের মাঝে এমন কি ঘটল যে, ওরা একে অন্যকে খুন করে বসলো! আমার মনে হয় এ রহস্য এখনই উদ্ঘাটন না করলে জাতিকে তার জন্য বিরাট মাশুল দিতে হবে।’

 আলী বললেন, ‘আমরা রহস্য আবিষ্কারের চেষ্টা করছি। মেয়েটা উল্টা পাল্টা বলে যতই বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করুক, সত্য তাকে প্রকাশ করতেই হবে।’

 ‘ভাল করে চেপে ধরুন। আমাদের জানতে হবে আমার এম্ন সুবোধ দুটোর এ হাল কেমন করে হলো?’

 আলী বিন সুফিয়ানের সামনে হাজির করা হলো মেয়েটাকে। আলী বললেন, ‘সরকারী গোয়েন্দা বিভাগ যে কারো মনের কথা বের করার ক্ষমতা রাখে। আমি সহজভাবে তোমার কাছ থেকে আসল ঘটনা শুনতে চাই। যদি নিজে থেকে বলো, ভালো, না হলে কারো পেট থেকে কথা বের করার জন্য যেসব কৌশল প্রয়োগ করা হয় তা একে একে শুরু হবে। আমি চাই না তুমি সেই পর্যন্ত যেতে আমাকে বাধ্য করো। তুমি কি তোমার পরিচয় এবং সব ঘটনা খুলে বলবে?’

 ‘সবই তো বলেছি।’ মেয়েটি বড় ভাইয়ের লাশের দিকে ইশারা করে বললো, ‘এই লোকটা প্রথমে আমাকে ডাকে। আমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে ওখানে যাই। এমন সময় ওই লোকটা আসে। সম্ভবত শহত থেকেই ও আমাদের ফলো করছিল। আমরা ওখানে গিয়ে বসতেই ও খঞ্জর বের করে প্রথম খঞ্জর বের করে উঠে দাঁড়াল। শুরু হয়ে গেল দু’জনের মধ্যে লড়াই। আমি ভয়ে একদিকে সরে গেলাম। এমন সময় একজন ঘোড়সওয়ার এল। ওকে আসতে দেখেই আমি ছুটে বাগানের গভীরে ঢুকে গেলাম। কিন্তু একজন সৈনিকের সাথে আমি পারবো কি করে? লোকটি আমাকে ধরে ফেললো এবং এখানে নিয়ে এলো।’

 ‘কি নাম তোমার? তোমার বাবার নাম ও ঠিকানা বলো।’

 ‘আমি আমার ও বাবার নাম এ জন্য বলবো না, এতে আমার ও বাবার নামে কলংক ছড়িয়ে পড়বে।’

 আলী বিন সুফিয়ানের স্মরণ হলো, আরসালান ও আলা ইদরিসের মধ্যে যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল তখন একাধিকবার সে আল ইদরিসের যুবক সন্তানদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল।

 আরসালান আগে থেকেই আলীর সন্দেহভাজনদের তালিকাভুক্ত ছিল। তিনি তার মহলের মধ্যে একাধিকবার সন্দেহভাজন বহিরাগতদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বলেও রিপোর্ট করেছে তার ইনফরমার।

 তিনি আল ইদরিসকে ইশারা করে বললেন, ‘এ মেয়ে তার পরিচয় বলতে চাচ্ছে না। আমিও মনে করি এই মেয়ে সত্য কথাই বলেছে। সে একজন নারী হয়ে একা দু’জন যুবককে হত্যা করতে পারে না। এমন দোষে তাকে কেউ অভিযুক্ত করলেও আমি তা মেনে নিতে পারি না।’

 তিনি মেয়েটিকে বললেন, ‘যাও তুমি মুক্ত। ভবিষ্যতে আর যেন কারো সাথে রাতের অন্ধকারে নির্জনে ঘুরাফেরা করতে না দেখি। এমন করলে কখন নিজেই খুন হয়ে যাবে ঠিক নেই।’

 মেয়েটি দ্রুত কামরা থেকে বেরিয়ে গেল। আলী বিন সুফিয়ান দু’জন ইনফরমারকে ডাকলেন। একজনকে বললেন, ‘তুমি দ্রুত আরসালানের মহলের ফটকের কাছাকাছি কোথাও গিয়ে লুকিয়ে থাকো।’ অন্যজনকে মেয়েটির পিছনে এমনভাবে অনুসরণ করতে বললেন, যেন মেয়েটি টের না পায়। আর সে যেখানেই যাক তার সংবাদ যেন সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে পৌঁছে দেয়।

 লোক দু’জন বেরিয়ে গেল। মেয়েটি দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল। সন্তর্পনে তাকে অনুসরণ করলো আলীর গোয়েন্দা। আলী বিন সুফিয়ানের সন্দেহই সত্য প্রমাণিত হলো। মেয়েটি আরসালানের মহলে প্রবেশ করলো।

 সঙ্গে সঙ্গে এ খবর পৌঁছে দেয়া হলো আলীর কাছে। আর ইদরিস এ খবর শুনে আলী বিন সুফিয়ানকে বললেন, ‘আরসালান আমাকে আমার দুই যুবক ছেলে সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। তখন আমি তার ইশারা বুঝতে পারিনি। এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি, এই ষড়যন্ত্র আরসালানের কাজ। কিন ভয়ংকর আর কুটিল তার পরিকল্পনা। দুই ভাইকে সে কেমন নিখুঁতভাবে একে অন্যকে দিয়ে হত্যা করিয়েছে।’

 আল ইদরিস প্রধান হাকিমকে এ সংবাদ জানালেন। আলী বিন সুফিয়ান সিদ্ধান্ত নিলেন। আরসালানের বাড়িতে অতর্কিতে পুলিশের আক্রমণ চালিয়ে সবাইকে গৃহবন্দী করতে হবে। পুলিশ সুপার গিয়াস কামালকে সে কথা বললেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে ঘেরাও করে ফেলল আরসালানের মহল।

 ‘এখন আমি আল ইদরিসকে বলবো, কেন আমি এত সাহসিকতার সাথে কথা বলছিলাম সেদিন।’ আরসালান মেয়েটির মুখে সমস্ত কাহিনী শুনে বললো, ‘আমি তাকে আরো বলবো, দেখ আমি কি করতে পারি?’

 সে মেয়েটির হাতে তুলে দিল শরাবের গ্লাস। তারপর দু’জনই সফলতার অপার আনন্দে মেতে উঠলো উৎসবে।

 তাদের সে আনন্দ উৎসব তখনো শেষ হয়নি, হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত সেখানে প্রবেশ করলো এক লোক। এ ব্যক্তির নাম আল ইদরিস। তিনি আরসালান ও মেয়েটিকে নেশায় মত্ত বেহাল অবস্থায় দেখতে পেলেন।

 আরসালান নেশা জড়ানো কন্ঠে বললো, ‘আরে বাবা! এ যে দেখছি আল ইদরিস। কি মনে করে এলে? ছেলেরা তোমাকে না বলেই মরে গেছে! এ্যা, তুমি বাবা আবার কেন এলে? আমি তো তোমাকে এখনি খুন করবো বলে ঠিক করিনি।’

 তারপর হঠাৎ যেন তার হুশ ফিরে এল। সে চিৎকার করে ডাকলো, ‘দারোয়ান! দারোয়ান কোথায়? এই লোক আমার বিনা অনুমতিতে আমার জান্নাতে কেমন করে প্রবেশ করেছে?’

 ‘তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য!’ আল ইদরিস বললেন, ‘আমি আমার সন্তান হত্যার প্রতিশোধ নিতে আসিনি। আমি তোমাকে গাদ্দারদের কি পরিণতি হয় তাই দেখাতে এসেছি।’

 ইতিমধ্যে শহরের প্রধান হাকিম, যিনি এখন ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন, ভেতরে প্রবেশ করলেন। তার সাথে পুলিশ প্রধান গিয়ান কামাল ও গোয়েন্দা প্রধান আলী বিন সুফিয়ান। মেয়েটিকে গ্রেফতার করা হলো। আরসালানের সমস্ত চাকর-চাকরানী ও বাড়ির অন্যান্য লোকদেরকে মহলে নজরবন্দী করে সেখানে সেনা প্রহরা বসানো হলো। মহলের ভেতর পাওয়া গেল একটি গোপন কক্ষ। কামরাটি গভীর ও প্রশস্ত। সেখানে তীর, ধনুক ও বর্শার স্তূপ। তলোয়ার ও খঞ্জরের ছড়াছড়ি। খৃস্টানদের উদ্ভাবিত নতুন এক জাতের আগ্নেয়াস্ত্র। কয়েকটি সিন্দুক ভরা গাঁজা, হাশিস, হেরোইন ও বিষ। আরেকটি কামরায় পাওয়া গেল সোনার ইট ও আশরাফীর থলি।

 আরসালান তার দুই স্ত্রী ও সন্তানদেরকে বাইরে কোথাও পাঠিয়ে দিয়েছিল। বাড়িতে পাওয়া গেল অনিন্দ্য সুন্দর তিনটি যুবতী মেয়েকে। এদের মধ্যে কে যে কার চেয়ে বেশি সুন্দরী সে বিচারের ভার কাউকে দিলে সে সাত দিন পর্যন্ত গালে হাত দিয়ে বসে থাকবে, কিন্তু মুখ খুলবে না। তিনটি মেয়েই খৃস্টান।

 রাতের মধ্যেই মহলের চাকর-বাকরদের জবানবন্দী নেয়া হলো। দেখা গেল তাদের মধ্যে তিনজন খৃস্টানদের গোয়েন্দা।

 ‘তুমি কি স্বেচ্ছায় বলবে তোমার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা কি?’ প্রধান হাকিম আরসালানকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই ধন-দওলত, এই অস্ত্রশস্ত্রে স্তূপ তোমার মৃত্যুদণ্ডের জন্য যথেষ্ট।’

 ‘তবে মৃত্যুর শাস্তিই দিয়ে দাও।’ সে নেশার ঘোরে বললো, ‘যদি মরতেই হয় তবে নীরব থেকেই মরি না কেন?’

 ‘সেটা তোমার ইচ্ছা। মৃত্যু মানেই তুমি আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে যাচ্ছো। আল্লাহ বড় মেহেরবান। এমনও তো হতে পারে, আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে তোমার যেসব বন্ধুরা কাজ করছে তাদের নাম এবং পরিকল্পনার কথা যদি বলে যাও, তিনি তোমাকে মাফও করে দিতে পারেন।’ প্রধান হাকিম বললেন, ‘আমি দোয়া করবো, তোমার এই পূন্য কাজের জন্য আল্লাহ যেন তোমাকে এতবড় পাপ থেকেও ক্ষমা করে দেন।’

 ‘তোমরা তো আর আমাকে ক্ষমা করবে না?’ আরসালান বললো।

 ‘সুলতান আইয়ুবী এর চেয়েও বড় পাপীকে ক্ষমা করেছেন এমন দৃষ্টান্তের কথা তোমার জানা আছে।’ আলী বিন সুফিয়ান বললেন, ‘তোমার বাঁচার পথ বের হতে পারে যদি তুমি বলে দাও এখানে কি ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ চলছে এবং যারা করছে তাদের ধরার ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করো।’

 আরসালান মদের প্রভাবে ঠিকমত দাঁড়াতে পারছিল না। সে এদিক-ওদিক টলছিল আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল সবাইকে। আল ইদরিসের কোমরে ক্ষুদে তলোয়ারের মত লম্বাটে খঞ্জর ঝুলছে।’

 আরসালান টলতে টলতে এক সময় তার কাছাকাছি হলো এবং অকস্মাৎ কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই দ্রুতবেগে সে খঞ্জর টেনে বের করে নিজের বুকে বসিয়ে দিল।

 আলী বিন সুফিয়ান ঝাঁপিয়ে পড়ে খঞ্জরটি কেড়ে নিতে চেষ্টা করলেন কিন্তু হাতের বেকায়দা চাপে তা পেটের আরও গভীরে ঢুকে গেল। আরসালান রক্তাক্ত বুকে লুটিয়ে পড়ল তার মূল্যবান লাল গালিচার ওপর।

 পুলিশ সুপার খঞ্জরটি টেনে বের করতে চাইলে আরসালান হাত ইশারায় তাকে নিষেধ করে বলল, ‘আগে আমার কথা শোন, আমি মরে গেলে তখন ওটা বের করে নিও।

 আমি আমার পাপের শাস্তি নিজেই নিলাম। আমি আর জীবিত অবস্থায় সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সামনে উপস্থিত হতে চাই না। কারণ তিনি আমাকে একজন পরম বিশ্বাসী ও একান্ত বন্ধু বলে মনে করতেন। আমি যা বলছি তার বাইরে আমি তোমাদের কোন প্রশ্নের জবাব দেবো না। মিশর এক ভয়াবহ সংকটে পড়ে গেছে। মিশরে যে সেনাবাহিনী আছে তারা বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সৈন্যদের রসদপত্রের ঘাটতির ব্যবস্থা আমিই করেছি। সৈন্যদের খাবারের কোন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না এই প্রচারণা ছড়াচ্ছে খৃস্টানরা। আমার দলে অনেক ভাল লোকও আছে। আমি কারো নাম বলবো না। ফেদাইন ও ফাতেমীয় দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে মিশরের ধ্বংসের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে। তোমরা বিদ্রোহকে ঠেকাতে পারবে না। নতুন সৈন্য নিয়ে এসো তোমাদের নিয়ন্ত্রনের ………’ আর কোন কথা সে বলতে পারলো না, তার প্রাণবায়ু শেষ হয়ে গেল।

 তার বাড়িতে যে তিনজন মেয়ে পাওয়া গেলো, তাদের সম্পর্কেও সে কিছু বলতে পারলো না। ফলে মেয়েদের জবানবন্দীই গ্রহণ করতে হলো সত্য বলে। তারা নিজেদের সম্পর্কে বললো, তাদেরকে নৈতিক চরিত্র ধ্বংস করার জন্য পাঠানো হয়েছে।

 আরসালানের বাড়িতে রাতে গোপন আসর বসতো। এ আসরে বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা ও সামরিক অফিসাররা আসতো। এরই ফাঁকে চলতো তাদের গোপন বৈঠক। আসরকে মাতিয়ে রাখার কাজে ব্যবহার করা হতো মেয়েদের।

 যে মেয়েটি দুই ভাইকে পরষ্পরের বিরুদ্ধে উস্কিয়ে তাদের খুন করিয়েছে সে হত্যার পুরো ঘটনা বর্ণনা করলো। সে বললো, সে প্রথমে আল ইদরিসের বড় ছেলেকে তার ভালবাসার জালে ফাঁসিয়ে নেয়। আরসালান প্রথমে তার ছেলেদেরকে আল ইদরিসের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পরে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে মেয়েটিকে বলে, ‘তার দুই সন্তানকে হত্যা করার ব্যবস্থা করো।’

 এক রাতে প্রায় আড়াইশ উট কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা অফিসের সামনে এনে হাজির করা হলো। এগুলোর ওপরে খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী বোঝাই। এই উটগুলো কয়েকটি কাফেলায় বিভক্ত ছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে দের ধরে আনা হয়েছে। দেশের খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করার জন্য সর্বত্র ঠল বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছিল। এটাই এই টহলদার বাহিনীর প্রথম সফলতা।

 এইসব কাফেলার সঙ্গে যেসব লোক পাওয়া গেল তারা শহরের কয়েকজন বড় বড় ব্যবসায়ীর নাম বললো। এই ব্যবসায়ীরা সবাই ছিল আড়তদার। তারা খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে সেগুলো মাটির তলে গোপন কক্ষে লুকিয়ে রাখতো। এরপর গভীর রাতে অচেনা বেপারীরা এসে ওদের কাছ থেকে সেসব মাল চড়া দামে কিনে নিতো।

 লোকগুলো এমন কিছু ঠিকানাও দিল যেখানে এ সকল অপরিচিত ব্যবসায়ীরা গোপনে বাস করতো এবং খাদ্যশস্য ও জিনিসপত্র মজুত করে পরে সুযোগমত দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতো।

 উটের আরোহীরা সীমান্তের কয়েকটি স্থানের কথা বললো, যেখান থেকে এইসব মালামান সুদানে পাচার করা হয়। সেখানে সীমান্ত পারাপার করার জন্য বিশেষ বাহিনী সর্বদা উপস্থিত থাকে। এরা সীমান্তে নিয়োজিত বিভিন্ন কমান্ডারদের সাথে আঁতাত করে এবং তাদের মোটা রকমের ঘুষ দিয়ে কাফেলা পারাপারের ব্যবস্থা করে। এসব কাজ আরসালানের ছত্রছায়ায় এবং তারই পৃষ্ঠপোষকতায় সম্পন্ন হতো।

 আল ইদরিসের সন্তানদের বিপথগামী করার ঘটনা যে সব শত শত ঘটনার একটি, যা সুলতান আইয়ুবির অনুপস্থিতির সুযোগে মিশরে বন্যার মত ছড়িয়ে পড়েছিল।

 আল ইদরিস এবং অন্যান্য সকল হাকিম মিশরের এ অরাজক অবস্থা, আরসালানের বিশ্বাসঘাতকতা ও আল ইদরিসের দুই যুবক সন্তানকে হত্যা করার প্রতিবাদের এক প্রতিবাদ সভা আহ্বান করলো। বক্তৃতায় আলী বিন সুফিয়ান, গিয়াস কামালসহ সকলেই বললো, মিশরের অবস্থা এখন চরম বিশৃংখলা হয়ে পড়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় কথা, মিশরে যদি বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে কিংবা ফাতেমী ও ফেদাইনরা যদি প্রভাবশালী লোকদের হত্যা করতে শুরু করে তবে এর দায়দায়িত্ব আমাদের ঘাড়েই পড়বে। এ ধরনের ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগেই সমস্ত পরিস্থিতি সুলতান আইয়ুবীকে অবগত করানো উচিত। সুলতানকে অনুরোধ করা দরকার, যেন তিনি কারো ওপর যুদ্ধের দায়িত্ব ন্যস্ত করে কায়রো চলে আসেন।

 সে বক্তব্যের সূত্র ধরে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, আলী বিন সুফিয়ান যুদ্ধ সেক্টরে সুলতান আইয়ুবীর কাছে যাবেন পরিস্থিতি তুলে ধরতে।

 

পেজঃ ১ম পেজ | ← পূর্বের পেজ | ... | 5 | 6 | 7 | 8 | পরের পেজ → | শেষ পেজ | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top