৩. সুবাক দুর্গে আক্রমণ

তোমাদের শত্রুরা তোমাদের ধর্ম সম্বন্ধে মানুষের মনে এমন সব প্রশ্ন ও ভুল ধারণার জন্ম দিয়েছে যার কারণে ইসলামের আসল রূপ জনগণ কিছুতেই দেখতে পাচ্ছেন না। দিন যত যাবে এ বিভ্রান্তি কেবল বাড়তেই থাকবে।

ইহুদীরা মুসলিম আলেমের ছদ্মবরণে এতে জুড়ে দিয়েছে অপ্রয়োজনীয় সব বিধানাবলী। ইসলামে সুসংস্কারের স্থান নেই, কিন্তু আজ মুসলমানরা সবচে’ বেশী কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। মাথা নোয়ায় পীর আলীর মাযারে। শিন্নী মানে দরগায়। এমন আরও অনেক নতুন জিনিস তোমাদের ধর্মে সংযোজন করে দেয়া হয়েছে।

আমরাও দীর্ঘ দিন থেকে তোমাদের চিন্তাধারা বদলে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জানি পৃথিবীতে টিকে থাকবে দুটি ধর্ম। একটি খ্রীষ্টবাদ, অন্যটি ইসলাম। যে কোন একটি নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত কেউ থামবে না। তরবারীর জোরে বা বিরোধিতা করে কোন ধর্ম নিঃশেষ করা যায় না। কোন ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করার একটাই মাত্র পথ, ভেতর থেকে রুহটাকে কেড়ে নিয়ে দেহের ওপর রঙের প্রলেপ মাখানো। তুমি কি বলতে পারো কিসের জোরে গুটিকয় মুসলিম সম্রাট নাজ্জাসীর বিশাল দরবারে দাঁড়িয়ে দুঃসাহসীর মত বলেছিল, ইসলাম গ্রহণ কর না হয় জিজিয়া দাও, আর যদি এ দুটোর কোনটাতেই সম্মত না হও তবে তোমাদের ও আমাদের মাঝে ফয়সালা করবে এ তরবারী। এ ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই আমাদের মাঝে।

দুনিয়ার স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধির বিচারে এ ছিল স্রেফ আহাম্মকী। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, ওটা আহাম্মকী ছিলনা, তাদের এ দুঃসাহস ছিল ইসলামের অগ্রযাত্রার চাবিকাঠি। দুনিয়ার মানুষের সাথে মুসলমানতো কেবল এ তিন ধরেনের সম্পর্কই সৃষ্টি করতে পারে। হয় ওরা হবে মুসলমানদের ভাই, নইলে অনুগত, আর নয় শত্রু। আমরা কেবল এ আকিদাটুকুই নষ্ট করতে চাই, যাতে মুসলমানরা শত্রু-মিত্র ও আপন-পর ভেদাভেদ করতে না পারে। আমরা সে পথেই এগিয়ে যাচ্ছি।

এ পথে আমি একা নই, বিরাট একটা দল তোমাদের সভ্যতার ওপর আঘাত করে যাচ্ছি। সংস্কৃতির উপর আঘাত করে যাচ্ছি। তোমরা অর্থনৈতিক মুক্তি ও রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের প্রতিযোগিতার ঘোড়া ছুটাতে থাকবে আর আমরা চুপিসারে তোমাদের ঈমান ও আকিদাটুকু বস্তায় ভরে সটকে পড়ব।’

আলী পায়চারী করছিলেন। মন দিয়ে শুনছিলেন গোয়েন্দা ডিউকের কথা। তিনি ভেবেছিলৈন হাতপা শেকলে বাধা গোয়েন্দাটি নির্যাতনের মুখে সব স্বীকার করবে। কিন্তু তার কথা শুনে বুঝলেন এর কাছ থেকে কথা আদায় করাটা সহজ হবে না।

আলী একজন কারা রক্ষীকে ডেকে তার হাত পায়ের শিকল খুলে দিতে বললেন। বাঁধন মুক্ত হলে খাবারের ব্যবস্থা করে বললেন, ‘কথা বের করার ফন্দি মনে করো না, যে ধর্মেরই হোক, আমি আলেমদের সম্মান করি। তোমাকে আমি কোন প্রশ্ন করব না। যা ইচ্ছে বলতে পার তুমি।’

‘আমি তোমাকে সম্মান করি আলী! আগেও তোমার অনেক প্রশংসা শুনেছি। তোমার ভেতর রয়েছে গোয়েন্দা শিল্পের যোগ্যতা, আবেগের উত্তাপ, খ্রীষ্টান সম্রাটগণ কেন তোমাকে হত্যা করতে চায় এবার আমি বুঝতে পেরেছি।

আমি স্বীকার করছি, তুমি সালাহউদ্দীন এবং নুরুদ্দীন জংগীর সম-পর্যায়ের। তোমরা জন্য এরচে বড় পুরস্কার আর কি হতে পারে!

আলী! শত্রু হলেও তুমি বুদ্ধিমান দুশমন। তোমার অন্ততঃ এটুকু বুঝা উচিত, কোন জাতির সংস্কৃতি বদলে দাও, তার ধ্বংসের জন্য আর যুদ্ধের প্রয়োজন হবে না। জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে অশ্লিলতার প্রসার ঘটাও। বিশ্বাস না হলে মুসলিম শাসকদের দিকে তাকিয়ে দেখ।

আত্মসংযম তোমার নবীর শিক্ষা। একথা আজ কে মানছে? ইহুদী সুন্দরীরা রূপের মায়াজাল বিছিয়ে তোমার জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। আজ বেহায়াপনা আর অশ্লীলতায় ডুবে আছে তোমার জাতি। মুসলমান, সে বিত্তহীন হোক বা বিত্তশারী, একাধিক বিয়ে করতে চায়। কিছু টাকা হাতে টেলেই যুবতীদের দিয়ে হারেমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

পোপ ও পাদ্রীরা তোমাদের চিন্তচেতনায় যৌনতাকে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তোমরা তোমাদের নবীর নির্দেশ পালন করলে মুসলমান পৃথিবীর তিন চতুর্থাংশ জুড়ে থাকত। এখন মুসলমান নামে মাত্র টিকে আছে। সংকীর্ণ হচ্ছে তোমাদের সালতানাত, এ সবাই হচ্ছে আমার মত আলেমদের তৎপরতার ফলে।

বন্ধু আমার! এ তৎপরতা চলতে থাকবে। আমি ভবিষ্যতবাণী করছি, একদিন পৃথিবীতে ইসলাম থাকবে না। থাকলেও তা হবে বিকৃত। জীবন্ত ইসলমের পরিবর্তে থাবে ইসলামের রঙচঙা লাশ। ইসলামের অনুসারীরা অশালীনতায় ডুবে যাবে। যে কেউ সালাহউদ্দীন বা সুরুদ্দীন জংগী হতে পারে না। এ দু’জনকে একদিন মরতে হবে। আ্গামী প্রজন্মকে আমরা জৈবিক চেতনার সাগরে ভাসিয়ে দেব। ওরা হবে নফসের গোলাম। বিবেক বলে কিছু থাকবেনা ওদের কাছে।

আমাকে মেরে ফেসতে পারবে। মরবে না আমাদের তৎপরতা। মানুষ মরে গেলেও তার উদ্দেশ্যের মৃত্যু হয় না। আর একজন এসে আমার স্থঅন দখল করবে। ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করেই তবে আমরা থাকব। এবার ইচছে করলে আমাকে জল্লাদের হাতে তুলে দিতে পার। আমি আর কিছুই বলব না।’

আলী তাকে আর কোন প্রশ্ন করেননি। হয়ত ভাবছিলেন কত কঠিন, কত বন্ধুর তার চলার পথ। খ্রীষ্টান গোয়েন্দার প্রতিটি কথা, প্রতিটি বর্ণ সত্য। এক ঝাঁক জীবানু জাতির নৈতিকতাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আরবের আমীল ওমরারা তো শেষ হয়েই গেছে। বিশাল ইসলামী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছেন আয়ুবী। কিন্তু ওরা এমন একদিক থেকে আক্রমণ করছে যা বন্ধ করা সুলতানের পক্ষে দুঃসাধ্য।

কারা কক্ষের দরজা বন্ধ করে মেয়েদর কক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন আলী। তালা খুলে ভেতরে ঢুকলেন। তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল মেয়ে দুটো। আলী কতক্ষণ অপলক চোখে তাকিয়ে রইলেন ওদের দিকে। এরপর কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন।

***

জরুরী মিটিং ডেকেছেন সুলতান আয়ুবী। উপস্থিত সদস্যরা গোয়েন্দাদের গ্রেফতারের কথা জানত। জানত, এ ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় সে পরামর্শের জন্যই এ সভা।

সালাহউদ্দীন আয়ুবী আসন গ্রহণ করে সবার দিকে তাকালেন। মনে হল খুঁজছেন কাউকে।

‘বন্ধুগণ!’ তিনি বললেন, ‘আপনারা শুনেছেন এক মসজিদ থেকে এক খ্রীষ্টান গোয়েন্দাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে ছিল সে মসজিদের পেশ ইমাম।’

সুলতান সবার সামনে গোয়োন্দাকে কিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে সে ঘটনা শোনালেন। ইমামরূপী গোয়েন্দা ডিউক আলীকে যা বলেছে তাও বললেন।

‘খ্রীষ্টান গোয়োন্দাদের অপতৎপরতা থেকে সতর্ক থাকুন, এ ওয়াজ করার জন্য আপনাদে ডাকিনি। যারা শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব করবে তারা জাহান্নাতে যাবে, একথাও বলব না। এখন থেকে কোন গাদ্দারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মুক্তি দেব না। গাদ্দারের সামনে এবং পেছনে ‘আমি গাদ্দার’ লিখিত সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে তাকে বাজারের অলিগলিতে ঘুরানো হবে। চৌরাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। মৃত্যু হবে ক্ষুধা তৃষ্ণায়। কাউকে তার জানাযা বা দাফন করার অনুমতি দেয়া হবে না।’

‘আমার প্রিয় বন্ধুরা! এতে শত্রুর কোন ক্ষতি হবে না। ওরা অন্য গাদ্দার তৈরী করে নেবে। যতদিন ওদের কাছে বারী, বেহায়াপনা আর অর্থ আছে ্মাাদে দুর্বল ঈমানের লোকেরা গাদ্দার হতেই থাকবে। বেঈমান কোরা হাতে নিয়ে আপনাদের মসজিদে আপনাদের নবীর বানী বিকৃত করছে, এ কি আপনাদের বিবেকের জন্য চ্যালেঞ্জ নয়?

একবার ভেবে দেখুন, যে সব মেয়েদর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এদেশে পাঠানো হয় তার অধিকাংশই মুসলামন। শিশুকালে ওদের তুলে নেয়া হয়েছে কোন কাফেলা থেকে। ওদের অশ্লীলতার ট্রনিং দেয়া হয়েছে। শেখানো হয়েছো পুরুষ ঘায়েল করার নানান কায়দা কানুন। ট্রেনিং দিয়েছে বেহায়াপনার।

অমুসলিমরা ফিলিস্তিন দখল করে রেখেছে। মুসলমানদের ওপর চলছে সীমাহীন অত্যাচার। লুণ্ঠিত হচ্ছে ওদের সম্পদ। প্রতিবাদী কণ্ঠগুলোকে কারাগারে অকথ্য নিস্পেষণে স্তব্ধ করে দেয়া হয়। সুন্দরী শিশু মেয়েদের অপহরণ করে বেহায়াপনা আর গোয়োেন্দা বৃত্তির ট্রেনিং দেয়া হয়। এরপর পাঠানো হয় মুসলিম জনপদে।

ওরা নিজের মেয়েদেরও এ কাজের জন্য ব্যবহার করে। খ্রীষ্টানদের কাছে নৈতিকতা বা ইজ্জত-আব্রুর কোন বালাই নেই। ফিলিস্তিন দখল করে ওরা নতুন বিপ্লব এনেছে, সে বিপ্লব হল নির্বিচারে মুসলিম হত্যা, লুটপাট, মুসলিম শিশুদের অপহরণ। যুবতীদের ইজ্জত বিকাতে বাধ্য করা। সুন্দরী যুবতীদের প্রশিক্ষণ দিে মুসলিম আমীল ওরাদের হারেমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। এমনকি মুসলিম শিশুদের গলায় ওরা ক্রুশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিয়েছে।

মুসলিম দেশ সমূহে আশ্রয়প্রার্থী অসংখ্য কাফেলাকে পথিমধ্যে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ইজ্জ হরণ করেছে আমাদের বোনদের, আমাদের মেয়েদের। আমাদের ভায়েরা বাধা দেয়নি।

খ্রীষ্টানরা চায় পৃথিবীতে নামমাত্র মুসলমান থাকুক। মুসলিম মেয়েদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসুক ক্রুশধারী খ্রীষ্টান। আমরা ভুলে গেছি সে সব নির্যাতীত বোনদের। ওরা আমাদের অভিশাপ দিচ্ছে। বলছে, খ্রীষ্টান বর্বরতার শিকার শহীদদের কথঅ আমাদের মনে নই। কোন নির্দেশ দেয়ার পূর্বে আমার পশ্ন, বলুন এখন আপনারা কি করবেন? আপনাদের মধ্যে রয়েছে অভিজ্ঞ সেনা কমাণ্ডার, যোগ্যতর প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সম্মানিত আমীর!’

আয়ুবী থামলে একজন কমাণ্ডার বললেন, ‘প্রতিবেশী মুসলমান নির্যাতীত হলে তাদের সহযোগিতা করা ফরজ। এ হচ্ছে খোদার হুকুম। এ ফরজ আদায় করা থেকে আপনি আমাদের বিরত রাখতে পারেন না। অনতিবিলম্বে মজলুম ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া জরুরী। আমার মনে হয়, মুহূর্তমাত্র কালবিলম্ব না করে আমাদের ফিলিস্তিন আক্রমণ করা উচিত।’

এবার উঠে দাঁড়ালেন একজন সহকারী সেনাপ্রধান। আবেগ ভরা কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘অমুসলিমদেরকে আক্রমণ করার পূর্বে আমাদের উচিত গাদ্দার মুসলিম শাসকদেরকে আক্রমণ করা। সবচে’ লজ্জাস্কর কথা হল, আমাদে মধ্যেও বিশ্বাসঘাতক রয়েছে। ফয়জুল ফাতেমির মত লোক গাদ্দারী করলে কাকে আর বিশ্বাস করবো আমরা? একজন মুসলিম যুবতীর ইজ্জতের জন্য সমগ্র জাতিকে যেখানে মোকেবেলায় দাঁড় করিয়ে দেয়ার কথা সেখানে অসংখ্য নারীল ইজ্জত নষ্ট করা হচ্ছে, আর আমরা ভাবছি কি করব?

খ্রীষ্টানরা আমাদে মেয়েদের অশ্লীল কাজের ট্রেনিং দিয়েছে আর আমরা আমাদেরই মেয়েদের সাথে অশ্লীল কাজ করে যাচ্ছী। সম্মানিত আমীর। আমার কথাগুলোকে উদ্বেলিত ভাবাবেগ না ভাবলে বলব, এ মুহূর্তেই আমাদের ফিলিস্তিন দখল করা উচিত। আমাদের প্রথম কিবলা ওরা কুকর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।’

আরো একজন উঠে দাঁড়ালেন। হাতে ইশারায় তাকে বসিয়ে দিলেন সুলতান। বললেন, ‘আপনাদের মুখে এ কথাই আমি শুনতে চেয়েছি। যারা আমার কাছে থাকেন নিশ্চয়ই জানেন আমার প্রথম লক্ষ্য ফিলিস্তিন। মিসরের দায়িত্ব নেয়ার পরই আমি ফিলিস্তিন আক্রমণ করতে চেয়েছিলাম। দু’বছর চলে গেছে। বেঈমানদের অপতৎপরতায় আমি সময়ের চোরাবালীতে আটকে গেছি।

গত দু’ বছরের ঘনটাবলী স্মরণ করুন। আপনারা খ্রীষ্টান গুপ্তচর আর গাদ্দারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আমাদের লোকেরাই সুদানীদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। সুদানের কাফ্রীদের দিয়ে মিসর আক্রমণ করিয়েছে আমাদের সেনাপতি এবং কমাণ্ডাররাই। এরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন গ্রহণ করে। দেশের মানুষ আল্লাহার নামে এ টাকা কোষাগারে জমা দেয়।

বেঈমানদের নিশ্চিহ্ন করে আমি ফিলিস্তিন আক্রমণ করব এ আশায় আমি দু’বছর কাটিয়েছি। কিন্তু এখন বুঝেছি, খ্রীষ্টানদের গোয়েন্দা তৎপরতা কখনও শেষ হবে না। এ জন্য আমি এর মূলৈ আঘাত হানতে চাই। আমাদের মধ্যে গাদ্দার তৈরী করার জন্য আমরাই খ্রীষ্টানদের সুযোগ দিচ্ছি।

আজ আপনাদের সামনে আমি অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করছি, সহসাই আমরা ফিলিস্তিন আক্রমণ করতে যাচ্ছী। সেনা প্রশিক্ষণ আরও জোরদার করুন। দীর্ঘদিন আবরুদ্ধ থাকার এবং অবরোধ করার মত ট্রেনিং দিয়ে প্রস্তুত করুন তাদের।

তুর্কী এবং সিরিয় বন্ধুদের আমি বিশ্বাস করি। মিসরী এবং অনুগত সুদানী সৈন্যদের মাঝে জেহাদের জযবা সৃষ্টি করতে হবে। শত্রুর বিরুদ্ধে ওদের অনুভূতি শানিয়ে তুলুন। ওদের বলুন, তোমাদের মা-বোন খ্রীষ্টান পশুদের হাতে নির্যাতীত। তোমাদের মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে ওরা। ওদের বিবেকের দুয়ারে আঘাত করে ওদের জাগিয়ে তুলুন।

এ সময় প্রশানস কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অনেক। ইমাম সাহেবদেরকে প্রতিটি মসজিদে জিহাদের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে বলুন। যুবকদের সামরিক ট্রেনিং নেয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ইমাম সাহেবদেরকে ওয়াজ করতে বলবেন। কোন ইমাম ইসলামী সংস্কৃতির বিরুদ্দে কোন কথা বললে তাদের ইমামতি থেকে সরিয়ে দেবেন। আমাদের নৈতিক মনোবল দৃড় হলে কেউ আমাদের অনিষ্ট করতে পারবে না। খেয়াল রাখতে হবে কেউ যেন অলস বসে থাকতে না পারে। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। ওখানে শত্রু তাড়াতাড়ি বাসা বাঁধতে পারবে। কবে এবং কখন ফৌজ রওয়ানা করবে পরে বলা হবে। আল্লাহ আপনাদের সাহায্য করুন।

সাতদিন পর গোয়েন্দা ডিউক এবং মেয়ে দুটোকে সুলতান আয়ুবীর সামনে হাজির করা হল। ওদের হাতে বেড়ি, পায়ে শিকল। সুলতানের নির্দেশে পাশের কক্ষে রাখা হল ওদের। সালতানের খাস কামরা আর ওদের কক্ষের মাঝে একটি দরজা। দরজার পাল্লা দুটো আলতো করে ভেরানো। মাঝখানের সামান্য ফাঁক ভাল করে খেয়াল না করলে কারো নজরে পড়ার কথা নয়।

সুলতান কক্ষে পায়চারি করছিলেন। বললেন, ‘সিদ্ধান্ত নিয়েছি ক্রাক আক্রমণ করব।’

ক্রাক ফিলিস্তিনের একটি জিলা, আরেক বিখ্যাত জিলা সুবাক। সুবাকে রয়েছে খ্রীষ্টানদের সুদৃঢ় কেল্লা, যাকে কেন্দ্র করে খ্রীষ্টানরা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেনানায়ক এবং সম্রাটগণ এখানেই মিলিত হন। এখানেই গোয়েন্দা সংস্থার হেড কোয়ার্টার, ওদের ট্রেনিং হয় এখানেই।

সেনানায়ক এবং প্রশাসনের পদস্থ কর্তকর্তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, সুলতান প্রথম সুবাক আক্রমণ করবেন। খ্রীষ্টানদের কেন্দ্র পরাভূত করতে পারলে ওদের কোমর ভেংগে যাবে। কিন্তু প্রথম কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি কেন আক্রমণ করতে চাইছেন তিনি তা কারো বুঝে আসছিল না।

একজন লেফট্যানেন্ট জেনারেল বললেন, ‘সম্মানিত আমীর। আপনার নির্দেশ আমরা নির্দ্বিধায় পালন করব। তাবে আমার মনে হয় আগে সুবাক দখল করলে ভাল হয়। দুশমনের কেন্দ্রশক্তি প্রথম ধ্বংস করা উচিৎ। সুবাক হাতে এলে ক্রাক দখল করা আমাদের জন্য পানির মত সহজ হয়ে যাবে। ক্রাকে আমাদের শক্তি ক্ষয় হলে সুবাক দখল করা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।’

দরজার ফাঁক দিয়ে পাশের কক্ষের সবকিছুই শোনা যাচ্ছিল। সুলতানের কণ্ঠ ছিল পরিষ্কার। গোয়েন্দা ডিউক উৎকর্ণ হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল দরজার কাছে। সুলতান বললেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে অগ্রসর হব। সুবাকের চাইতে ক্রাক দখল করা সহজ হবে। তখন ওখানেই আমরা আমাদের কেন্দ্র করতে পারব। এরপর সামরিক শক্তি সঞ্চয় করে পূর্ণ শক্তিতে সুবাক আক্রমণ করব। গোয়েন্দাদের রিপোর্ট অনুযায়ী সুবাকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত দৃঢ়। সুবাক আক্রমণ করলে আমাদের হয়ত দীর্ঘদিন অবরোধ করে রাখতে হবে। আমার ধারণা, ক্রাকে আমাদের বেশী শক্তি ক্ষয় হবেনা। প্রথমে আমাদে রএমন এক কেন্দ্র প্রয়োজন যেখান থেকে সহজে সামরিক সাহায্য এবং রসদ পাওয়া যায়।’

গোয়েন্দা ডিউক দরজায় কান লাগিয়ে কথা শুনছিল। মেয়ৈ দু’টোও এসে দাঁড়াল তার পাশে। এমন গোপন তথ্য পাশের কক্ষ থেকে শুনতে পেয়ে পুলকিত হলো ওরা। ভাবল, আলী হয়ত খেয়াল করেননি বা তিনি ভেবেছিলেন এরা তো আর ফিরে যাবেনা, শুনলেইবা কি?

ডিউক মেয়েদের কানে কানে বলল, ‘ইস, আমাদের একজনও যদি বেরিয়ে যেতে পারতাম! মূল্যবান তথ্য। আগেভাগে সুবাক পৌঁছতে পারলে পথেই ওদের শেষ করা যেত, ওদের আর ক্রাক যেতে হত না।’

‘আমাদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।’ সুলতানের কণ্ঠ। ‘খ্রীষ্টানরা আগেভাগে টের পেলে আমরা ক্রাক পৌঁছতে পারব না। পথেই বাধা দেবে। সমস্যা হল ওদের চাইতে আমাদে সেনা শক্তি দুর্বল। অস্ত্রশস্ত্রও কম। আমাদের তীরন্দাজরা ওদের বর্মধারীদের মোকাবিলা করতে পারবে না। খোলা ময়দানে যুদ্ধ করলে পেছন থেকে ওরা আমাদের রসদের পথ বন্ধ করে দেবে। তখন আমাদেরকে পিছিয়ে আসতে হবে, নয়তো বরণ করতে হবে পরাজয়। সেজন্য আমরা এগোব জারিবের পার্বত্য পথে। বিশাল বিস্তীর্ণ এলাকায়, ওদের মুখোমুখি হওয়া ঠিক হবে না। পথে বাধাপ্রাপ্ত হলে আমাদেরকেই পরাজয় মেনে নিতে হবে।

ফৌজকে তিন ভাগে ভাগ করব। প্রথম দল মার্চ করবে সন্ধ্যা রাতে। মাঝ রাতে যাবে দ্বিতীয় দল। তৃতীয় দল যাত্রা করবে শেষ রাতে। দিনে কোন তৎপরতা থাকবে না।’

আলী বললেন, ‘পথে অপরিচিত কাউকে দেখলে আটক করতে হবে। ক্রাক দখল করার আগ পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে ওদের। এভাবেই ঠেকাতে হবে ওদের গোয়েন্দা তৎপরতা।’

একদিকে পাশের কামরায় বসে যুদ্ধের গোপন পরিকল্পনা শুনছিল তিন গোয়েন্দা। অন্যদিকে সুবাক কেল্লায় চলছিল খ্রীষ্টান রাষ্ট্র প্রধানদের গোপন মিটিং। মিটিংয়ে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিল হাতেম আল আকবর।

হাতেম একজন মিসরীয় মুসলমান। খলিফা আল যায়েদ, রজব, তিনটি গোয়েন্দা মেয়ে এবং ফয়জুল ফাতেমীল মৃত্যুর বিস্তারিত বিবরণ শোনাল সে। বলল, ‘ডিউক গুপ্তচর মেয়ে ‘দু’টো সহ ধরা পড়েছে।’

‘এতে বোঝা যায় আয়ুবীর গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত সতর্ক।’ খ্রীষ্টান সম্রাট এবং সেনানায়ক কোনার্ড বললেন, ‘মেয়ে দু’টোকে মুক্ত করা কি সম্ভব নয়? দীর্ঘ সময়, শ্রম আর অর্থ ব্যয় করে এ মেয়েগুরোকে ট্রেইন্ডআপ করা হয়েছে। এর একেকটা মেয়ে আমাদের কাছে যথেষ্ট মূল্যবান।’

‘ক্রুশের জন্য এ ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।’ খ্রীষ্টান সেনাপতি লুজিনাম বললেন। ‘ওদের বাঁচাতে গেলে মারা পড়ব আমরা নিজেরাও। যারা ধরা পড়েছে ওদের ভুলে যান। ওখানে পাঠাতে হবে অন্য লোক। ধরা পড়া মেয়ে দু’টো এবং রজবের নামে পাঠানো মেয়ে তিনটে কোত্থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল?’

‘এদের দু’জন খ্রীষ্টান।’ গোয়েন্দা প্রধানের জবাব, ‘খ্রীষ্টান দু’টো ইটালীর। মুসলমান তিনটাকে শৈশবেই তুলে এনেছিলাম। ওরা যে মুসলমান এখন ওদের তা মনেও নেই। ছোট থেকেই ওদের ট্রেনিং শুরু করেছি। এ জন্য ওরা আমাদেরকে ধোকা দিয়েছে এ সন্দেহ করা যায় না।’

‘হলই বা মুসলমান’, হাতেম আল্ আকবরের দিকে আঙুলি নির্দেশ করে বলল কোনার্ড, ‘আমাদের প্রিয় বন্ধুও মুসলমান। সেতো ধর্মের ধার ধারেনা।’

মদের গ্লাস হাতেমের হাতে তুলে দিয়ে আবার বলল, ‘হাতেম জানে আয়ুবী মিসরকে দাসত্বের শৃংখে বন্দী করতে চায়। কার্য সিদ্ধি করতে চায় ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে। আমরা চাই মিসরকে মুক্ত করতে। এর একটাই পথ, আয়ুবীকে নিশ্চিন্তে বসতে দেয়া যাবে না।’

মদে মাতাল হাতেম মাথা দুলিয়ৈ সায় দিল। ‘ওখানে এমন ব্যবস্থা করব তোমাদের কোন লোক আর ধরা পড়বে না।’ হাতেমের জড়ানো কণ্ঠ।

‘মিসরে বিশৃংখল সৃষ্টি করে না রাখলে অনেক পূর্বেই আয়ুবী আমাদের আক্রমণ করে বসত।’ বলল এক কমাণ্ডার।

‘তার শক্তি তার লোকদের মধ্যে নিঃশেষ করলেই আমরা সফল।’

কোনার্ড প্রশ্ন করল, ‘আলীকে নিকেশ করার কোন ব্যবস্থা এখনও হল না?’

‘কয়েকবার চেষ্টা করা হয়েছে।’ জবাব দিল গোয়েন্দা প্রধান। ‘কিন্তু সফল হয়নি। আলী এবং সালাহউদ্দীন দু’জনই পাথর। মদও ছোয়না, মেয়েদের প্রতিও লোভ নেই। এ জন্য মদের সাথে কিছু মিশিয়ে বা মেয়েদের দ্বারা ওদের হত্যা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা এক অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছি। ঘাতক দলের চারজন সদস্যকে তার দেহরক্ষীদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সুযোগ পেলেই ওরা আলী বা আয়ুবীকে শেষ করে দেবে।’

‘আমাদের এদিকেও কি আয়ুবীর গুপ্তচর রয়েছে বলে মনে কর?’ লুজিনাম প্রশ্ন করল।

‘অবশ্যই রয়েছে। যেদিন থেকে আমরা মিসর এবং সিরিয়ায় গুপ্তচরগিরি শুরু করেছি, সেও শুরু করেছে তখন থেকেই। আয়ুবীর দু’জন গোয়েন্দা ধরা পড়েছে। মুখ বুঁজে নির্যাতন সহ্য করতে করতে মরে গেছে, তবু কারও নাম বলেনি।’

‘এক্ষেত্রে সে কদ্দুর সফলতা লাভ করেছে?’

‘অনেক। ক্রাকে আমাদের রসদে ওরাই আগুন লাগিয়েছে। আমাদের যুদ্ধের সব খবরই আয়ুবী পেয়ে যায়। জীবন বাজি রেখে তার গোয়েন্দারা কাজ করে। এ জন্য ওরা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।’

এভাবে ওদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ চলল। হাতেম আয়ুবীর দুর্বল দিকগুরো তুলে ধরর। সিদ্ধান্ত হর মিসর এবং সিরিয়ায় গুপ্তচর বৃত্তির কাজ আরও জোরদার করতে হবে। গোয়োন্দা কাজের জন্য আপাততঃ হাতেমকে দেয়া হবে তিনজন উদ্ভিন্নযৌনা যুবতী।

***

কক্ষে আলী এবং দু’জন কমান্ডার। ক্রাক আক্রমণের ব্যাপারে কথা বলছিলেন সুলতান আয়ুবী। তিনি আক্রমণের সময় নির্ধারণ করলেন বিশ দিন পর।

গোয়েন্দা ডিউক এবং মেয়ে দু’টো সব কথাই শুনছিল। মেয়েদের দিকে তাকালেন ডিউক। কণ্ঠে একরাশ দুঃখ, ‘এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েও সুবাক পৌঁছাতে পারছী না!’

এক যুবতী বলল, ‘চেষ্টা করব আয়ুবীর মন ভুলানোর? সামান্য সময়ের জন্য ওকে একা পেলে দেখতাম ও কেমন পুরুষ। কোন জীবন্ত মানুষ আমার ফাঁদ কেটে বেরিয়ে যাবে তা হতেই পারেনা। শুধু একটিবার সুযোগ পেলে তার বুদ্ধি বিবেক আপন হাতের মুঠোয় বন্দী করা কোন ব্যাপারই না।’

‘জানিনা কেন আমাদের ডেকেছেন।’ ডিউক বলল, ‘মনে রেখ, একজন একজন করে ডাকলে তাকে পশুতে পরিণত করতে হবে। এত মদ খাওয়াবে যেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলৈ। এখান থেকে পালিয়ে কার কাছে যাবে নিশ্চিয়ই জান? মসজিদের সোজা উল্টো দিকে তার বাড়ী।

‘চিনি।’ মেয়েটা বরর, ‘মেহদি আবদাল।’

‘হ্যাঁ, তার কাছে পৌঁছতে পারলে ও-ই তোমাকে সুবাক পৌঁছে দেবে। আমার পালানোর তো প্রশ্নই উঠে না। তোমরা আয়ুবীর পরিকল্পনা শুনেছ। রওনা হওয়ার তারিখ মনে রেখ। ওরা চলবে রাতে। দিনে কোন তৎপরতা দেখাবে না। আক্রমণ করবে ক্রাক। আগে ভাগে সংবাদ পেলে পথেই সৈন্যদের থামিয়ে দেয়া যাবে। পথে আক্রমণ হতে পারে বলে আয়ুবী শংকিত। একটা কথা অবশ্য।ি বলবে, আয়ুবীর লোকবল কম। সে খোলা ময়দানে সামনা সামনি যুদ্ধ করতে চায় না।’

মিটিং শেষ হয়েছে। কমান্ডাররা বেরিয়ে যাচ্ছেন, তিন গোয়েন্দাই পূর্বের স্থানে ফিরে এসে বসে রইল হাঁটুতে মাথা রেখে। যেন ওরা কিছুই জানেনা। কক্ষে কারও পায়ের শব্দ শোনা গের। কারো হাতের আলতো স্পর্শে মাথঅ তুলল গোয়েন্দা ডিউক।

‘উঠে এসো।’ আলী তিনজনকে সুলতানের কক্ষে নিয়ে গেলেন।

‘আমি তোমাদের জ্ঞান এবং মেদার প্রশংসা করছি।’ ডিউককে বললেন সুলতান আয়ুবী। ‘ওদের শিকল খুলে দাও আলী।’

আলী ওদের শিকল খুলে দিল। সুলতান চেয়ারের দিকে ইংগিত করে বললেন, ‘তোমরা এখানে বস।’

বেরিয়ে গেলেন আলী বিন সুফিয়ান। সুলতান আবার বললেন, ‘কিন্তু তোমরা সে জ্ঞান শয়তানী কাজে ব্যয় করছ। এখানে এসে আপন ধর্শের প্রচার করলে হৃদয়ের গভীর থেকে তোমাকে ধন্যবাদ দিতাম। তোমার ধর্ম কি তোমকাে বলেছে অন্য ধর্মের ইবাদতখানায় দাঁড়িয়ে তার ধর্মকে বিকৃত কর? এ মহা পাপ করতে গিয়ে কি পবিত্র ক্রুশ, হযরত ঈসা (আঃ) এবং মা মরিয়মের কথা একবারও মনে পড়েনি তোমার?’

‘এভাবে বিকৃত করা আমাদের কর্তব্য। যা করেছি পবিত্র ক্রুশের জন্যই করেছি।’

‘তুমিই বলেছ বাইবেল এবং কোরান গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছ তুমি। দুই কিতাবের কোথাও কি যুবতীদেরকে অশ্লীল কাজে নিয়োজিত করার অনুমতি দিয়েছে? অনুমতি দিয়েছে কি ওদেরকে পর পুরেষের সংগী করে গোপন উদ্দেশ্য সাধন করতে? মেয়েদের ইজ্জত আব্রু অন্যের ভোগের সামগ্রীতে পরিণত কররার অধিকার কি বাইবেল তোমাকে দিয়েছে? মুসলিম মেয়েদেরকে কোরান এবং ইসলামের নামে পর পুরুষের কাছে নিজের ইজ্জত বিকাতে দেখছ কখনো?’

‘ইসলামকে আমরা খ্রীষ্টানদের শত্রু মনে করি। যে বিষ হাতে পাব তাই ইসলামের স্নায়ুতন্ত্রীতে ঢুকিয়ে দেব।’

‘তোমাদের এ বিষ গুটিকতক মুসলমানের নৈতিকতাকে বিপন্ন করতে পারবে, কিন্তু ইসলামের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।’

মেয়েদের দিকে ফিরলেন তিনি। বললেন, ‘বলতে পার তোমরা কোন বংশের মেয়ে, জানলে আমায় বল।’

দু’জনকে নিরব দেখে সুলতান আবার বরলেন, ‘তোমরা নিজের চরিত্র নষ্ট করেছ। এখনও ইচ্ছে করলে কোন সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানিত স্ত্রী হতে পার।’

‘আমি সম্মানিত স্ত্রী হতে চাই।’ একটা মেয়ে বরল, ‘আপনি কি আমায় গ্রহণ করবেন? তা না হলে আমাকে একজন সম্মানিত স্বামী দিন। আমি মুসলমান হয়ে পাপের জন্য ক্ষমা চাইব।’

সুলতান আয়ুবী মৃদু হাসলেন। খানিকটা ভেবে নিয়ে ডিউকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি চাইনা তোমার জ্ঞান জল্লাদের তরবারীল রক্তে ডুবে যাক। যুবতীর অনন্য রূপ যৌবন কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে পনিঃশেষ  হয়ে যাক তাও চাইনা। শোন মেয়েরা! সত্যিই যদি পাপের ক্ষমা চাও তোমাদেরকে তোমাদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছী। কিন্তু ওই দেশ তোমাদের নয়, আমাদের। একদিন না একদিন তোমাদের সম্রাটদের কাছ থেকে আমরা আমাদের দেশ ছিনিয়ে আবন। দেশে গিয়ে তোমরা কাউকে বিয়ে কর। আমি তোমাদের তিনজনকেই মুক্তি দিচ্ছি।’

অবাক বিস্ময়ে চ মকে উঠল তিন গোয়েন্দা। যেন ওদের গায়ে কাঁটা ফোটানো হয়েছে।

কামরায় এলেন আলী। সুলতানের নির্দেশে খুলে দেয়া হল ওদের হাত ও পায়ের বেড়ি।

‘আলী! আমি ওদের মুক্ত করে দিয়েছি।’

স্তব্ধ বিস্ময়ে সুলতানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন আলী বিন সুফিয়ান।

‘আলী।’ সুলতান বললেন, ‘ওদের জন্য তিনটে উট এবং চারজন সশস্ত্র রক্ষীর ব্যবস্থা কর। রক্ষীরা হবে সাহসী এবং মেধাবী। তিনজনকে সুবাক কেল্লায় রেখে ওরা ফিরে আসবে। পথের খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে দিয়ে দিও। আজই রওয়ানা করিয়ে দাও ওদের।’

ডিউকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওখানে গিয়ে আবার বলোনা আয়ুবী গোয়েন্দাদের ক্ষমা করে দেয়। গোয়েন্দাকে আমি বীজের মত যাতাকলে পিষে হত্যা করি। তুমি আলেম বলে তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছী। তোমার জ্ঞানের আলোর দিকটা দেখার সুযোগ দিচ্ছি। আমার কেন জানি মনে হচ্ছৈ কোরআনের যে জ্ঞান তোমার আছে তাই তোমাকে একদিন ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসবে। বিশ্বাস কর এ পথেই তোমার মুক্তি। যদি কোন দিন ইসলামের পথে ফিরে আসো চেষ্টা করো তোমার ও বোনদেরকে সে পথে আনতে। ইসলামের অনেক বড় খাদেম হতে পারবে তুমি। তোমার সুবুদ্ধি এলে আমাকে জানিও, আমি তোমাকে দ্বীনের তাবলীগে লাগাতে চাই। তোমাদের মুক্তি দিয়ে আমি দাওয়াতের যে নতুন পদ্ধতি পরীক্ষঅ করতে চাই আশা করি আমি তাতে সফল হবো। আল্লাহ আমার স্বপ্ন পূরণ করুন, খোদা হাফেজ।’

***

এখনো সূর্য ডোবেনি। উটে সওয়ার হল মুক্তিপ্রাপ্ত খ্রীষ্টান গোয়োন্দা ডিউক ও যুবতীদ্বয়। সাথে চারজন দেহরক্ষী।

আলী বললেন, ‘যে করেই হোক ওদেরকে খ্রীষ্টান কমান্ডারদের কাছে পৌঁছতে হবে। পথে মরু ডাকাতের ভয় আছে জানি। সে জন্যই তোমাদের সতর্ক করা জরুরী মনে করছি। সব সময় চোখ-কান খোলা রেখে পথ চলবে।’

ওরা রওনা হল। উন্নত জাতের উটের পিঠে পথ চলার সামগ্রীসহ চড়েছে গোয়েন্দারা। উঁচু জাতের তেজী ঘোড়ায় সওয়ার হয়েছে রক্ষী চারজন। আয়ুবীর এ দীল-দরিয়ায় সবাই আশ্চর্য। গোয়েন্দাদের তিনি কখনও ক্ষমা করেননি। আলী জিজ্ঞেস করেছিলেন।

‘বলেছিলাম না নতুন একটা খেলা খেলতে চাই।’ সুলতানের জবাব। ‘এ সেই খেলা। হেরে গেলৈ শধু তিনটে গোয়েন্দা হারাব, এর বেশী নয়।’

বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন আলী। ‘সময় এলে দেখতে পাবে’ বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন সুলতান।

মুক্তিপ্রাপ্ত তিন বন্দীদের অন্তরে খুশীল অন্ত নেই। শুধু মুক্তির জন্য নয়, মূল্যবান গোপন তথ্য নিয়ে যাচ্ছে ওরা সাথে করে।

কায়রো পেরিয়ৈ অনেক দূর চলে এসেছে ওরা। উট তিনটি পাশঅপাশী চলছে। রক্ষীদের দু’জন সামনে, দু’জন পেছনে। গোয়োন্দারা আঞ্চলিক ভাষায় নিজেদের মধ্যৈ কথা বলছিল। রক্ষীরা সে আঞ।চলিক ভাষার কিছুই বুঝতে পারছিল না।

ডিউক মেয়েদর বলল, ‘পবিত্র যিশুর মাজেযা দেখলে! বাুঝা যাচ্ছে তিনি আমাদের ভাল বাসেন। বিজয় আমাদেরই হবে। সালাহউদ্দীন আর আলী বে-আক্কেলের মত বিপজ্জনক তথ্য আমাদে রশুনিয়ে দিল। আমাদে সেনাবাহিনীকে সব কথা বললে ওরা আয়ুবীর সৈন্যদেরকে মুরুভূমিতেই শেষ করে দেবে। আয়ুবী জিন্দেগীতে আর ক্রাক পৌঁছার সুযোগ পাবেনা।’

‘আমর বিশ।বাস সেনাপতি ওদেরকে আক্রমণ করেই ক্ষান্ত হবে না। সহজেই ফৌজ শূন্য মিসরও দখল করে নিবেন, কি বলেন?’ বলল এক যুবতী।

অন্য যুবতী বলল, ‘আপনি একজন অভিজ্ঞ আলেম। আপনার বিবেচনাই হয়তো ঠিক। তবু আপনার দেখা মাজেযায় আমি বিপদের গন্ধ পাচ্ছি। রক্ষীরা হয়ত আমাদের হত্যা করে ফিরে যাবে। সালাহউদ্দীন আমাদের সাথে উপহাস করেছেন। জল্লাদের হাতে তুলে দেয়ার পরিবর্তে আমাদেরকে এদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। এরা আমাদেরকে নষ্ট করে শেষে মেরে ফেলবে।’

ডিউক এ কথার প্রতিবাদ করল না। আশঙ্কার মেঘ তার মনেও ভিরড় করেছে। সে সায় দিয়ে বলল, ‘তাছাড়া আমরা নিরস্ত্র। তোমার ধারনাই হয়ত ঠিক। কোন শাসকই শত্রুর গুপ্তচরকে ক্ষমা করতে পারে না। মুসলমানরা যা কামুক, তোমাদের মত সুন্দরী মেয়েদের এভাবে ছেড়ে দেবে ভাবা যায় না।’

এতক্ষণে খুশী খুশী ভাব হঠাৎ করেই তাদের চেহারা থেকে সরে গেল।

‘রাতে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।’ বলল এক যুবতী।

দ্বিতীয় মেয়েটা বলল, ‘রাতে ঘুমালে ওদের অস্ত্র দিয়েই ওদের শেষ করতে হবে। শুধু একটু সাহসের প্রয়োজন।’

‘এ সাহস আমাদের করতেই হবে।’ ডিউক বলল, ‘এবং আজ রাতেই। সকাল পর্যন্ত আমরা অনেক দূর চলে যেতে পারব।’

রক্ষীরা গল্প গুজব করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছীল। দু’জন সুন্দরী যুবতী ওদের হাতের মুঠয় যে এ কথা কারো মনেই নেই।

সূর্য ডুবে যাচ্ছে, এগিয়ে চলছে কাফেলা। গভীর হচ্ছে মরুভূমির রাত। তিন গোয়েন্দা চলছে পাশাপাশি। রক্ষীদের হত্যার পরিকল্পনা করছে ওরা।

সামনে শ্যামল ভূমি দেখে রক্ষীরা থেমে গেল। তাবু টানিয়ে প্রথশে গোয়েন্দাদের খেতে দিল। এরপর নিজেদের খাওয়অ সেরে শুয়ে পড়ল তিনজন রক্ষী সেনা। একজন রইল পাহারায়।

এক তাবুতে শুলো রক্ষীরা, পাশের তাবুতে ডিউক এবং মেয়েরা। ডিউক রক্ষীদের তাবুর দিকে ফিরে নিজেদের তাবুর পাশ ঘেষে শুয়ে রইল। দৃষ্টি তার রক্ষীদের তাবুর দিকে। ষষ্ঠইন্দ্রিয়ে টানটান সতর্কতা।

তাবুর চারপাশে ঘুরছে একজন সেন্ট্রি। দুই ঘন্টা পর ঘুমন্ত এক রক্ষীকে জাগাল সে। তাকে পাহারায় রেখে নিজে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়র। আগের মতই সেন্ট্রি তাবুর চারপাশ ঘিরে চক্কর দিতে লাগল।

ডিউক মেয়েদের বলল, ‘আমরা সফল হতে পারছি না। বদমাইশটা শুধু ঘোরাঘুরি করছে। যা হবার হবে এখন ঘুমিয়ে পড়।’

তিনজনই একসময় ঘুমিয়ে পড়ল। ভোরের হালকা আলো ফুটতেই রক্ষীরা ওদের ডেকে তুলল। আবার রওনা হল কাফেলা।

আগের নিয়মে এগিয়ে চলছে ওরা। তিন গোয়েন্দা পাশাপাশি। রক্ষীদের দু’জন সামনে, দু’জন পেছনে।

রক্ষীরা সন্দেহজনক কোন কথা বলেনি। এখন পর্যন্ত কারো সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেনি। এমন কোন আচরণ করেনি যাতে ওদেরকে বদমাশ বলা যায়।

সূর্য উপরে উঠে এল। অভিযাত্রী দল প্রবেশ করল এক পার্বত্য এলাকায়। পাহাড়ের গা দেয়ালৈর মত খাড়া। গিরিপথে পাহাড়ের ঘন ছায়া। মেয়েগুরৌ ভয় পেয়ে গেল। ফ্যাকাশে হয়ে গেল ওদের চেহারা। হত্যা করার জন্য উপযুক্ত স্থান। কিন্তু রক্ষীরা ওদের দিকে ফিরেও চাইলনা।

‘ওদেরকে বলুন আমাদের সাথে কথা বলতে।’ ডিউককে বলল একটি মেয়ে। ‘ওরা নিরব কেন। আমাদের ব্যাপারে ওরা এত উদাস কেন! মারতে হলৈ মেরে ফেলতে বলুন। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ভীষণ কষ্টকর।’

ডিউক নিরব রইল, কোন কথাই বলতে পারলাম সে। বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা আর যে কোন সময় মৃত্যুর হিমশীতল সম্পর্শের আশঙ্কা ওকে যেন বোবা করে দিয়েছে। এখন সে মেয়েদের কোন সাহায্য করতে পারছে না। তিনজনই রক্ষীদের দয়ার ওপর বেঁচে আছে।

সূর্য মাথার উপর উঠে এসেছে। থামাল ওরা। এখানে পাহাড় ছাদের মত নুয়ে আছে। ফলৈ ছায়া রূপ নিয়েছে আঁধারের।

শঙ্কায় বুক শুকিয়ে এল গোয়েন্দাদের। চেহারা থেকে সরে গেল রক্ত।

‘ঈশ্বর, তুমি আমাদের জন্য মৃত্যুকে সহজ করে দাও।’ স্বগতোক্তির মত বলল ডিউক।

কিন্তু না, তেমন কিছুই ঘটল না। রক্ষীরা আগের মতই নির্বিকার। ওরা ওখানে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা কলর। গোয়েন্দারা ভাবল, মারার আগে শেষবারের মত খাইয়ে নিচ্ছৈ। মৃত্যুভয় ওদের ক্ষুধা দূর করে দিল, কিছুই খেতে পারল না ওরা।

একজন রক্ষী বলল, ‘কি ব্যাপার, তোমরা খাচ্ছা না কেন?’

ডিউক বলতে চাচ্ছিল, ‘আর খাওয়ার দরকার নেই, তোমরা তোমাদের কর্তব্য পালন কর, হত্যা করতে চাও তাড়াতাড়ি করে ফের। শধু শুধু আমাদের পেরেশানী বাড়াচ্ছ কেন?’ কিন্তু কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘তোমারা আমাদের সাথে কথা বলছ না কেন?’

‘কর্তব্যের মধ্যে নয় এমন কথা আমরা বলিনা।’ কমান্ডার বলল। ‘কোন বিশেষ কথা থাকলে বলতে পার, জবাব দেব।’

‘আমাদের পরিচয় তোমরা জান?’

‘তোমরা গোয়েন্দা। মেয়েগুলো নষ্ট। আমাদের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবহার করতে চাও, এদেরকে দিয়ৈ তাদের পাকড়াও কর। সুলতান কেন তোমাদের ক্ষমা করেছেন জানিনা। তোমাদেরকে সুবাক ফৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা এখন সে নির্দেশ পালন করছি। কিন্তু একথা জিজ্ঞেস করছ কেন?’

‘তোমাদের সাথে কথা বলতে মন চাইছে। দীর্ঘ সফল। আমাদের ব্যাপারে তোমরা কেমন উদাসীন। তোমাদের এ ছাড়াছাড়া ভাব আমাদের খুব কষ্ট দিচ্ছে। আমাদের সাথে কথা বলতে বলতে চল।’

‘আমরা সবাই সহযাত্রী। কিন্তু আমাদের পথ ভিন্ন। দু’দিন পর আমরা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাব।’

ডিউক কমান্ডারের কথা শুনল কি শুনলনা, তার দৃষ্টি ছুটে গেল দুরে। সে ছিল মরু ভেদি। মরুর বিপদ সম্পর্কে অভিজ্ঞ।

তাকিয়ে রইল সে। আতংকে বিস্ফারিত চোখ দুটো বেরিয়ে আসছে যেন। ডিউকের দৃষ্টি অনুসরণ করল কমান্ডার। চোখ বড় হয়ে গেল তারও। শ’খানেক গজ দূরে উঁচু জায়গায় দুটো উট। পিঠে দু’জন লোক নেকাবে ঢাকা মুখ। মাথায় কাপড় বাঁধা। উটের পা দেখা যাচ্ছেনা। ঢালে দাঁড়িয়ে আছে, আরোহীরা নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে কাফেলার দিকে।

বলতে পার ওরা কারা?’ কমান্ডার ডিউককে প্রশ্ন করল।

‘মরু দস্যু। জানিনা ওরা ক’ন।’

তা দেখা যাবে।’ কমান্ডার এক সংগীকে ইশারা করে বলল, ‘আমার সাথে এসো।’

দু’টো ঘোড়ায় চেপে দস্যুদের দিকে এগিয়ে গেল দু’জন। তরবারী ছাড়াও ওদের হাতে বর্শা।

ওদের দু’জনকে এগুলো দেখে উষ্ট্রারোহীরা ঢালের দিকে নেমে গেল। গোয়েন্দাদের একা রেখে বাকী দু’জন রক্ষীও পাহাড়ে উঠে গেল অবস্থা বুঝতে।

ডিউক মেয়েদের বলল, ‘আমার ধারণা এবং তোমাদের আশংকাই ঠিক। ওরা দস্যু নয়, সালাহউদ্দীনের পাঠানো লোক। দেখলে না বির্ণয়ে এরা ওদের কাছে চলে গেছে। আয়ুবী তোমাদেরকে চরম অপমান করবে। আমার তো মৃত্যু অবধারিত, তোমাদের ভাগ্যেও রয়েছে কঠিন শাস্তি।’

‘এর অর্থ আমরা মুক্ত নই?’ একটা মেয়ে বলল, ‘আমরা এখনও বন্দিনী?’

‘তাইতো মনে হয়।’ দ্বিতীয় মেয়েটার জবাব।

পেজঃ ১ম পেজ | ← পূর্বের পেজ | 1 | 2 | 3 | 4 | ... | পরের পেজ → | শেষ পেজ | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top