২৭. ছোট বেগম

সংকীর্ণ নালা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সামনেই নদী। নদীর কলতানের শব্দ শুনতে পাচ্ছে ওরা। হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘আল্লাহকে স্মরণ করো। মনে হচ্ছে ওদের ফাঁকি দেয়া সম্ভব হবে। এখন আর বৈঠার শব্দ শুনতে পাবে না ওরা। তুমিও একটা বৈঠা হাতে নাও।’

হাবিবুল কুদ্দুস জোহরাকে বললেন, ‘তুমি জিহাদে অংশ নেয়ার ইচ্ছা করেছিলে। আল্লাহ তোমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে।’

’আপনার কি মনে হয় আমরা এখন বিপদ মুক্ত?’

’না, আমরা এখনও বিপদ মুক্ত হইনি। নৌকা ফোরাতের স্রোতে পড়লে বিপদ আরো বাড়বে। এত ছোট নৌকা সেই প্রবল তরঙ্গের ঝাপটা কেমন করে সইবে তাই ভাবছি।’

জোহরা একটা বৈঠা নিয়ে পানিতে ফেললো। হাবিবুল কুদ্দুসের সাথে সমান তালে সে বৈঠা চালাতে লাগলো। দু’জনে বৈঠার ঘায়ে নৌকা এগিয়ে চললো তরতর করে। অল্পক্ষণ পরেই নৌকা নালা থেকে বেরিয়ে স্রোতস্বিনী ফোরাতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

হাবিবুল কুদ্দুস শক্ত হাতে হাল ধরে নৌকার গতি থামাতে চেষ্টা করলো। চিৎকার করে বললো, ‘বৈঠা রেখে পাটাতন আঁকড়ে ধরো জোহরা।’

জোহরা ভয় পেয়ে বৈঠা রেখে পাটাতন আকঁড়ে ধরলো। তাকিয়ে দেখলো, নৌকা তীরের মত মাঝ নদীর দিকে ছুটে চলেছে। হাবিবুল কুদ্দুস সর্ব শাক্তি দিয়ে নৌকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করলো। সে নৌকার মুখ ভাটির দিকে ঘুরিয়ে ধরলো। শেষ পর্যন্ত নৌকা মাঝ নদীতে না গিয়ে তীর ধরে ছুটে চললো ভাটির দিকে।

ওদের দৃষ্টি থেকে পাহাড়ের কালো ছায়ারা ভূতের ধীরে ধীরে পিছনে সরে যেতে লাগলো। দেখতে দেখতে সুউচ্চ পাহাড় শ্রেণী ছোট হয়ে এলো।

নদীতে তখন ভরা জোয়ার। উওাল ঢেউয়ের মাতামাতিকে অগ্রাহ্য করে লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটছে নৌকা। প্রচন্ড ঢেউ এসে গ্রাস করে ফেলতে চাচ্ছে ক্ষুদে নৌকাটি। যখন নৌকা ঢেউ এর ভেতর ঢুকে যায় তখন চারদিকে পানি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। নিচে পানি, মাথার ওপর পানি, মনেহয় পানিময় দুনিয়া।

ভয় ও আতঙ্কে জোহরা চিৎকার দিতেও ভুলে গেল। ভাবলো, পানি নয়, এ তো মৃত্যুদুত আজরাইল।

পরক্ষনে ঢেউয়ের চূড়ায় চড়ে বসে নৌকা। ঢেউয়ের ঝাপটায় ছিটকে আসা পানিতে ভেসে যায় পাটাতন। হাবিবুল কুদ্দুস নৌকাটি তীরের দিকে নেয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকেন।

নদীর মাঝখানে প্রবল স্রোতের বেগ ও ঢেউ। এ ছোট্ট নৌকা নিয়ে মাঝনদীতে যাওয়ার কথা পাগলেও ভাববে না। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে বাচঁতে হলে তাদের নদীর ওপারে চলে যাওয়া উচিত। মাঝ নদীর সেই স্রোত ও ঢেউয়ের মোকাবেলা না করে ওপারে যাওয়ার কোন উপায় নেই।

হাবিবুল কুদ্দুস জানতেন এ ঢেউয়ের কথা। কিন্তু তা এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে ভাবেন নি তিনি। নদীর তীর ধরে এগুনোর মাঝেও বিপদের আশংকা আছে। কোন পাথরে আঘাত লেগে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে নৌকা। ওরা যে পালিয়েছে দুশমন যদি তা কোন মতে টের পায় তবে ঘোড়া নিয়ে ওরা ছুটে আসতে পারে তীর ধরে। মোট কথা, বিপদ সর্বত্র গুখরো সাপের মতোই ফনা তুলে আছে।

প্রবল স্রোতের টানে ভাটির দিকে তীব্র বেগে ছুটছিল নৌকা। উওাল তরঙ্গ দোলায় উপর নিচে উঠানামা করছিল। একবার হারিয়ে যাচ্ছিল ঢেউয়ের ভেতর আবার ভেসে উঠছিল দুই বিস্মিত নর-নারীর চোখের সামনে।

হাবিবুল কুদ্দুস জোহরাকে বললেন, ‘ভয় পেও না। আমরা ডুববো না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ যখন খৃষ্টান দুর্বৃওদের কবল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিয়েছেন, এই উওাল তরঙ্গেও তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন।’

’আপনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না।’ জোহরা বললো, ‘ডুবে গেলেই বা কি? কাফেরদের জাহান্নাম থেকে তো উদ্ধার পেয়েছি।’

হাবিবুল কুদ্দুস শক্ত হাতে হাল ধরে পিছন ফিরে তাকালেন পাহাড়ের দিকে। এখন পাহাড়টিকে মাটির উপরে ছোট্ট এক ঢিবির মতো দেখাচ্ছে। তিনি আকাশের দিকে তাকালেন। তারপর আবেগের সাথে বললেন, ‘আমি এই স্থানটি চিনি। এই পাহাড়ী অঞ্চল ও বিজন মরু প্রান্তরে আমি আমার বাহিনীকে যুদ্ধের ট্রেনিং দিয়েছিলাম। কিন্তু তখন নদীর দিকে আসিনি।

জোহরা, আমরা এখন সোজা কায়রোর দিকে যাচ্ছি। নীল নদের স্রোত আমাদের দ্রুত কায়রোর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাও জোহরা। এটা আল্লাহর অপরিসীম দয়া ও মদদ।’

’আল্লাহ আমাদের নিয়ত ভাল করেই জানেন। আমরা তার দ্বীনের জন্য বাচঁতে চাই, মরলেও দ্বীনের জন্যই মরতে চাই। ফলে আমাদের বাচা বা মরায় কোন পার্থক্য নেই। শুধু দোয়া করুন, তিনি যেন আমাদের কবুল করেন। এখান থেকে কায়রো কতদূর?’

’কায়রো এখনো অনেক দূর।’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘কিন্তু কায়রো পৌছার আগেই আমাদের এক জায়গায় থামতে হবে। পথে কায়রোর আগেই নদীতে একটা বাঁক পড়বে।

সেখানে আমাদের একটি সেনা ছাউনি আছে। নদীতে পাহাড়া দেয়ার জন্য তাদের কাছে শক্ত এবং বড় নৌকাও আছে। আমি তোমাকে সেই শিবিরে রেখে সেখানকার সৈন্য নিয়ে ওই পাহাড়ে অভিযান চালাবো। আমি এই দুর্বৃও কাফেরদের গ্রেফতার করবো।’

’আপনি অভিযানে যাবেন আর আমি বসে থাকবো শিবিরে? না, তা হবে না। আল্লাহ যখন সুযোগ দিয়েছেন তখন আমিও আপনার সাথে জেহাদের ময়দানেই ছুটে বেড়াবো। দয়া করে আমাকে একাকী রেখে আপনি কোথাও যাবেন না।’

কিন্তু তারা তো ততোক্ষণে জেনে যাবে আমাদের পালিয়ে আসার কথা। তারা নিশ্চয়ই সচেতন হয়ে উঠবে এবং আমার জন্য প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষা করবে। ওখানে তোমার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি আমার মত এক মুজাহিদকে দুশমনের কবল থেকে উদ্ধার করে এনেছো, এ কি কম বড় কৃতিত্বের কথা? আল্লাহ তোমাকে এর জাযা দান করুন।’

’আমি আশা করি কাল দুপুর পর্যন্ত তাদের কেউ জেগে উঠবে না।’ জোহরা বললো, ‘আমি নিজ হাতে তাদেরকে প্রচুর মদ পান করিয়েছি। সেই মদের মধ্যে মেশানো ছিল এক প্রকার গুড়োঁ পাউডার।’

’গুড়ো পাউডারটা আবার কি জিনিস?’

’হাশিশ। যেই মেয়েরা আমাকে তাদের দলের একজন বানাতে চেয়েছিল গতকাল তারা আমাকে হাশিশ দেখিয়েছিল এবং তার ব্যবহার শিখিয়েছিল।

তারা একটা কৌটা খুলে হাশিশের পাউডার দেখিয়ে বললো, ‘কোন লোককে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হলে এর সামান্য অংশ সরবত বা পানির সাথে মিশিয়ে অথবা খাবারের সঙ্গে খাইয়ে দিলে তাতেই সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। তখন তাকে যেখানে খুশি নিয়ে যাও, সে কিছুই টের পাবে না।

রাতে যখন আনন্দ উৎসব চলছিল তখন হাশিশের কৌটা থেকে কিছু পাউডার আমি মদের সুরাহীর মধ্যে ঢেলে দিলাম। মেয়েদের কথা যদি সত্যি হয়, তবে যে পরিমাণ হাশিশ মিশিয়েছি তাতে আগামী কাল সন্ধ্যার মধ্যে তাদের চেতনা ফিরে আসবে না।’

হাবিবুল কুদ্দুস আবার পিছন ফিরে তাকালেন পাহাড়ের দিকে। অন্ধকারের জন্য এখন আর পাহাড় দেখা যাচ্ছে না। নৌকা অনেক কিনারে চলে এসেছে। এখানে ঢেউয়ের প্রচন্ডতা কম। হাবিবুল কুদ্দুস আবেগ ভরা কন্ঠে বললো, ‘আমি তোমাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছিলাম জোহরা। আমি তোমাকে যে দুনিয়ার সন্ধান নিতে বলেছিলাম, সে দুনিয়া রহস্যময়। সে দুনিয়া বড় বিচিএ বর্ণিল কিন্তু পাপের কালিমায় ভরা। তুমি আমার জন্য বিরাট কোরবানী দিয়েছো জোহরা।’

’আমি আপনার জন্য নয়, ইসলামের গৌরবের জন্য এ কোরবানী দিয়েছি।’ জোহরা বললো, ’আমি আপনার কাছে এ জন্য কৃতজ্ঞ যে, আপনি আমাকে পবিএ দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দিয়েছেন। পাপের আকর্ষণীয় জগতে পা রেখেও আমি যে আমার পবিএতা রক্ষা করতে পেরেছি, মনে হয় আপনি তা বিশ্বাস করতে পারছেন না।

সত্যি এ এক অভিনব বিচিএ জগত। মনে হয়, এতসব ঘটনা বাস্তবে ঘটেনি, সবই আমার স্বপ্ন বা অলীক কল্পনা। আপনি বুদ্ধি করে আমাকে এখানে না আনলে আমি এই জগতের কিছুই জানতে পারতাম না।’

’আর ওরা যদি তোমাকে বিশ্বাস করে আমার সঙ্গে একাকী রাতে থাকার সুযোগ না দিত তবে আমিও তোমাকে বলতে পারতাম না, আমি কেন তোমাকে ডেকেছি।’

’আমিও জানতে পারতাম না, এরা আপনাকে দিয়ে বিদ্রোহ করানোর জন্য ছিনতাই করে এখানে নিয়ে এসেছে। তবে আমাকে এই মেয়েরা নির্লজ্জ হতে বাধ্য করেছে।’

’কিন্তু তুমি তো এইসব ট্রেনিং পাওয়া মেয়েদেরও টেক্কা মেরেছো। ওদের মনে কোন রকম সন্দেহ না জাগিয়েই ওদেরকে বুঝাতে পেরেছো, তুমি আমাকে ঘৃণা কর এবং সুযোগ পেলেই তুমি ওদের সঙ্গে পালিয়ে যেতে প্রস্তুত।’ হাসি মাখা কন্ঠে বললেন হাবিবুল কুদ্দুস।

হাসি দেখা দিল জোহরার ঠোটেও। বললো, ‘আপনি যখন বললেন, ওই মেয়েদের চরিএ খারাপ এবং আরো বললেন, তাদের সাথে মিশে যেতে, আমি প্রথমে একটু ভয়ই পেয়ে ছিলাম। কারণ আমি কল্পনাও করতে পারিনি, আমি তাদের ধোঁকা দিতে পারবো। কিন্তু আশ্চর্য হলাম যখন দেখলাম সব বিনা চেষ্টাতেই হয়ে গেল।’

এটাই আল্লাহর কুদরত। তিনিই তোমাকে সাহায্য করেছেন। শত চেষ্টা করেও যা তুমি করতে পারতে না, আল্লাহ তোমাকে ‍দিয়ে তাই করিয়ে নিয়েছেন। তোমাকে সফলতাও দান করেছেন।’

’যদি ওই মেয়েরা আমাকে নদী পর্যন্ত রাস্তা না দেখাতো তবে আমরা সেখান থেকে বেরই হতে পারতাম না। আপনি কি আমাকে এই কারনেই এখানে ডেকে এনেছিলেন?’

’না!’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘এ পথ তোমার আসার পরে এমনিতেই সৃষ্টি হয়ে গেছে। আমি অন্য রকম চিন্তা করেছিলাম। আমার মুক্তির জন্যই তোমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। অর্থাৎ তোমাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে তোমার ঘনিষ্ঠতা দেখে আমার মনে নতুন চিন্তা এলো। তাই তোমাকে খুলে বললাম নতুন পরিকল্পনা। আর তুমিও চমৎকার কাজ করে দেখালে।

তুমি এত সুচারুরূপে কাজ সমাধা করতে পারবে, ধারনা করিনি আমি। তুমি আমার আশার চাইতেও বেশী করেছো। তোমার সাহস ও বুদ্ধিমওায় আমি অভিভূত।’

’আমার ধারণা ছিল, ওরা খুব চালাক ও সাবধান। তাই আমিও সতর্ক ছিলাম। তবে আমার সফলতার কারণ আমি মনে করি আমাদের মহত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আমাদের ঈমান ছিল অটুট। নিজের জ্ঞান বুদ্ধিকে আমরা কাজে লাগিয়েছিলাম নিবিড় করে। তাই আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছেন। আল্লাহর সাহায্য ছিল বলেই আমরা ওদেরকে বোকা বানাতে পেরেছি। মিশরী লোকটি নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করলেও আমি প্রথম ‍দিনই জানতে পেরেছিলাম, লোকটা খৃষ্টান। আমরা যে খৃষ্টানদের ষড়যন্ত্রের জালে ফেঁসে আছি এ কথা আমার সব সময়ই মনে ছিল।’

সেই পাহাড়ী অঞ্চল অনেক পিছনে ফেলে এসেছিল ওরা। নীলনদের গতি তখনো তীব্র। নৌকা প্রকৃতির দয়ার উপর উঠানামা করছিল। হাবিবুল কুদ্দুস চেষ্টা করছিলেন তীরের কাছাকাছি থাকতে কিন্তু বড় বড় ঢেউ বারা বার ঠেলে নৌকা মাঝনদীতে নিয়ে যাচ্ছিল।

স্রোতের টানে নৌকা এগুচ্ছিল দ্রুত গতিতে। হাল ধরে বসে থাকা ছাড়া হাবিবুল কুদ্দুসের করার কিছুই ছিল না। জোহরার কাজ ছিল পাটাতন আকড়ে ধরে নিজেকে রক্ষা করা। দাঁড় টানা বা বৈঠা চালানোর কোন অবস্থা ছিল না, প্রয়োজনও ছিল না।

সামনে নদী কিছুটা চাপা। দুই দিকের পাহাড় এগিয়ে আসার ফলে সংকীর্ণ হয়ে গেছে নদী। ফলে নদীর বেগ ও স্রোত সেখানে তীব্র আকার ধারণ করেছে।

হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘জোহরা সাবধান হও। সামনে বাঁক আছে। এই বাঁকের পরেই আমাদের সেনা ক্যাম্প। কিন্তু বাঁকে স্রোত খুব প্রচন্ড। নৌকার তাল সামলানো কঠিন। আর যদি নৌকা ঘুর্ণিপাকে পড়ে যায় তাহলে মুহুর্তে তলিয়ে যেতে পারে।’

ওরা বাঁকের কাছাকাছি চলে এলো। হাবিবুল কুদ্দুস নিজের সমস্ত মনোযোগ একএ করে শক্ত হাতে বৈঠা ধরলেন। প্রচন্ড আক্রোশে ফুঁসছে নদী। ঢেউ ভাঙার অবিরাম শব্দ বিকট আওয়াজ তুলছে।

ভুস করে নৌকা ঢুকে গেল স্রোতের চক্রে। হাবিবুল কুদ্দুস স্রোতের সাথে দিক বদল করলো নৌকার। নৌকা বিদ্যুৎ বেগে এগিয়ে গিয়ে এক ঘূর্ণিচক্রে পড়ে ঘুরতে লাগল চড়কির মত। মুহূর্তে করণীয় ঠিক করে ফেললো হাবিবুল কুদ্দুস। নৌকার হাল ছেড়ে দিয়ে জোহরাকে নিয়ে লাফ দিল। পলকে দেখতে পেলো ঘূর্ণিপাকের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নৌকা। সঙ্গে সঙ্গে সেই পাঁকে অদৃশ্য হয়ে গেল তাদের দুঃসময়ের একমাএ বাহন নৌকাটি।

ওদের ভাগ্য ভালো, সময় মত লাফিয়ে পড়ে হাবিবুল কুদ্দুস সর্বশক্তি নিয়োগ করে চক্রের বাইরে চলে যেতে পেরেছিলেন।

’জোহরা!’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘তুমি শক্ত করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে পিঠের উপর শুয়ে পড়ো।’

জোহরা তাঁর দুই কাঁধ দু্’হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে পিঠের উপর চড়লো। হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘খুব শক্ত করে ধরে থাকবে, যেন সামান্যও শিথিল না হয়। নইলে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্রোতের টানে হারিয়ে যাবে।’

নৌকা ঘুর্ণিপাকে পড়ায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জোহরাকে নিয়ে লাফিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সৌভাগ্যক্রমে দেহের সর্বশক্তি নিয়োগ করে পাঁকের বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। কিন্তু প্রচন্ড ঢেউ আর স্রোতে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তখনো। এক হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন জোহরাকে, অন্য হাতে চেষ্টা করছিলেন ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে। জোহরা তার কাঁধ আকড়ে ধরলে একটু দম নেয়ার সুযোগ পেলেন হাবিবুল কুদ্দুস।

এখানে নদীর দুই পাড়েই পাহাড়। জোহরা সাতার জানতো না, সে শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগলো।

হাবিবুল কুদ্দুস তার ভার পিঠে নিয়ে সেই উওাল ঢেউ ও স্রোতের মধ্য দিয়ে সাঁতরে চললেন তীরের দিকে। তারঁ সবচেয়ে বড় ভয়, স্র্রোত টেনে নিয়ে যে কোন সময় শক্ত পাথরের উপর আছরে ফেলতে পারে। সে জন্য তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন নিজের ও জোহরার মুখটা পানির উপর রাখতে। কিন্তু প্রবল ঢেউ বার বার তাদের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। তখন আর কিছু দেখতে পাচ্ছিল না তারা।

শিঘ্রই তারা বাঁক পেরিয়ে নদীর সংকীর্ণ মুখ থেকে প্রশস্ত এলাকায় গিয়ে ঢুকলো। হাবিবুল কুদ্দুসের বাহু ও পা ততোক্ষনে শিথিল ও নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে। তিনি তার শেষ শক্তি প্রয়োগ করে বাঁচার চেষ্টা করছিলেন।

তিনি অনুভব করলেন, জোহরার বাহু বন্ধন শিথিল হয়ে আসছে। তিনি জোহরাকে ডাকলেন, কিন্তু কোন সাড়া পেলেন না। তার বাহু সম্পূর্ণ ঢিলা হয়ে গেলো।

তিনি বুঝতে পারলেন, জোহরার নাক মুখ দিয়ে সমানে পানি ঢুকছে। অজ্ঞান জোহরাকে বাঁচানো ও তাকে নিয়ে সাঁতার দেয়া কঠিন হয়ে গেল হাবিবুল কুদ্দুসের জন্য। তারপরও তিনি এক হাত দিয়ে জোহরাকে ধরে রাখলেন এবং অন্য হাত দিয়ে প্লাবনের গতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালালেন।

স্রোতের বেগ আগের চাইতে এখানে কম ছিল। কিনারা তখনো দূরে। ঢেউয়ের চাপ কম থাকায় সাঁতার দেয়া সহজ হয়ে উঠলেও এতটা পথ জোহরাকে নিয়ে সাঁতরে পার হওয়া তার কাছে অসম্ভব বলেই মনে হলো। তিনি সাহায্যের আশায় চিৎকার দিতে শুরু করলেন।

তিনি তীরের দিকে আরো কিছু দূর এগিয়ে গেলেন। হঠাৎ তার আড়ষ্ট হাত থেকে ফসকে গেল জোহরা। তিনি ডুব দিয়ে আবার তাকে ধরে ফেললেন। এ সময় একটি নৌকা তাদের কাছে এসে গেলো। তিনি জোহরাকে ধরে সাঁতার বাদ দিয়ে কেবল ভেসে থাকার চেষ্টা করলেন। এ সময় তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন, ‘আপনি কে?’

নৌকাটিকে দেখতে পেলেন তিনি। একদম কাছে এসে গেছে। তিনি উওর না দিয়ে থাবা দিয়ে ধরে ফেললেন নৌকার কাঠ। আস্তে করে বললেন, ‘আগে একে আমার পিঠের উপর থেকে উঠিয়ে নাও।’

নৌকার সিপাইরা তার পিঠ থেকে জোহরাকে টেনে নৌকায় তুলে ফেললো। জোহরা তখনও অজ্ঞান। নৌকাটি তাদেরই ছিল, কারণ ‍সুলতান আইয়ুবী এখানে একটি সেনা ক্যাম্প করেছিলেন নদীতে পাহারা দেয়ার জন্য।

তারা হাবিবুল কুদ্দুসের চিৎকার শুনে ছুটে এসেছিল কোন বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করতে। কিন্তু তারা জানতো না তাদেরই এক সেনাপতি সাহায্যের জন্য ডাকছে।

জোহরাকে তোলার পর তারা তাকেও টেনে নৌকায় তুলে নিল। তারপর তাদের নিয়ে গেল সেনা ফাঁড়িতে।

ক্যাম্পে গিয়ে তিনি বললেন, ‘আমি সেনাপতি হাবিবুল কুদ্দুস। আগে মেয়েটির জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করো। কিভাবে কি ঘটেছে আমি সব বলছি।’

ফাড়ির কমান্ডার তাঁকে চিনতে পারলেন এবং তাকে এভাবে দেখতে পেয়ে খুবই বিস্মিত হলেন। জোহরা তখনো বেহুশ হয়ে পড়েছিল। হাবিবুল কুদ্দুসের নির্দেশ পেয়ে কমান্ডার জোহরাকে মাটিতে শুইয়ে দিলেন এবং তার পেটে ও পাশে প্রবল চাপ দিলেন। চাপ খেয়ে জোহরার মুখ ও নাক দিয়ে হরহর করে বেরিয়ে এলো পানি।

হাবিবুল কুদ্দুস উঠে বসলেন। জোহরার জ্ঞান তখনও ফেরেনি। তিনি কমান্ডারকে বললেন, ‘দুটি বড় নৌকায় দশ জন করে বিশ জন সৈন্য দাও।’

তিনি কমান্ডারকে জানালেন সেই দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মহলের কথা। বললেন, ‘ওখানে এখনি অভিযান চালাতে হবে। সেই পাহাড়ী অঞ্চলের দুর্ভেদ্য ভগ্নাবশেষের মধ্যে কয়েকজন খৃষ্টান দুর্বৃও বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। তাদের পাকড়াও করতে হবে। এমনও হতে পারে, সেখানে তাদের আরও কিছু লোক আছে, যাদের আমরা দেখিনি।’

’নৌকা নিয়ে উজান ঠেলে ওখানে পৌছতে অনেক সময় ব্যয় হয়ে যাবে।’ কমান্ডার বললো, ‘আমরা স্থলপথে যেতে পারি না?’

’স্থলপথে যাওয়ার রাস্তা আমার জানা নেই।’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন।

’আমার জানা আছে।’ কমান্ডার বললো, ‘স্থলপথে যাওয়া অনেক সহজ হবে।’

’ঠিক আছে। তাহলে বিশ জন অশ্বারোহীকে তৈরী হতে বলো।’

কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশ জন অশ্বারোহী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে হাজির হলো হাবিবুল কুদ্দুসের সামনে। তার জন্য ব্যবস্থা করা হলো শুকনো কাপড়ের। তিনিও পোশাক পাল্টে প্রস্তুত হলেন। ততোক্ষণে জ্ঞান ফিরে এলো জোহরার। কিন্তু সে খবর না নিয়েই তিনি ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলেন।

বিশজন অশ্বারোহীর অগ্রভাগে হাবিবুল কুদ্দুস ও সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার। প্রভাতের আলো তখনো স্পষ্ট হয়নি। যখন তারা পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশ করলো তখন তিনি হুকুম দিলেন, ‘ঘোড়া এখানেই রাখো। অশ্বখুরের আওয়াজ তাদের কানে পৌঁছুক, চাই না আমি।’

নিরবতার খাতিরে অশ্বগুলো পাহাড়ের বাইরে রেখে পায়ে হেঁটে অগ্রসর হলো তারা। নদীতে সাঁতরানোর কারনে হাবিবুল কুদ্দুসের অবস্থা ছিল কাহিল। তবুও তিনি দুর্বল শরীর নিয়েই হাঁটতে লাগলেন সৈনিকদের সাথে। আবেগ ও আক্রোশ তার শরীরের দুর্বলতা দূর করে দিয়েছিল।

তিনি এখনো জানেন না, ক্যাম্পে তাঁর স্ত্রীর জ্ঞান ফিরেছে কি না। তা দেখার মত সময় তার হাতে ছিল না। তিনি তখন অনুভব করছিলেন দুর্বৃওদের ধরার ব্যাঘ্র ব্যাকুলতা।

তিনি পাহাড় ও জঙ্গলের আঁকাবাঁকা গোলক ধাঁধাঁর রাস্তা অতিক্রম করে দ্রুত সেই মহলে পৌছতে চাচ্ছিলেন, যেখানে রাতে তাদের হাশিশ মেশানো মদ পান করানো হয়েছিল। কিছু দুর যেতেই তার সামনে ভেসে উঠলো সেই পুরাতন ধ্বংসাবশেষ ও মহল। মহলে প্রবেশ করলেন হাবিবুল কুদ্দুস ও তার বাহিনী। তাদের সামনে প্রথমেই পড়লো সেই খৃষ্টান নেতা। তখনও নেশায় তার পা টলমল করছিল। তাকে গ্রেফতার করা হলো। পরিপূর্ণ জ্ঞান ফিরে আসার আগেই গ্রেফতার হওয়ায় সে বুঝতে পারলো না কি ঘটেছে। সে গালাগালি ও বকবক শুরু করে দিল।

বাকীদেরও বেহুশ অবস্থায় পাকড়াও করা হলো। মেয়ে দুটিকে পাওয়া গেল মিশরী ও সুদানী লোক দুটির রুমে। ওদেরও বন্দী করা হলো। মহলে যত আসবাবপএ ও সোনা রূপা ছিল উঠিয়ে নিল সৈনিকরা। তারপর সবাইকে অশ্বপিঠে চাপিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে আসা হলো।

ক্যাম্পে ফিরেই হাবিবুল কুদ্দুস খোঁজ নিলেন স্ত্রী জোহরার। জানতে পারলেন জোহরার জ্ঞান ফিরেছে।

দিনের প্রথম প্রহর যখন শেষ হলো তখন দুর্বৃওদের জ্ঞান ফিরলো। হাবিবুল কুদ্দুসের বাহিনী তখন দুর্বৃওদের নিয়ে কায়রোর পথে রওনা হয়ে গেছে।

দুর্বৃওরা সজাগ হয়ে নিজেদের আবিষ্কার করলো অশ্বপৃষ্ঠে। হাত পা বাধাঁ অবস্থায় তারা তখন বিশজন সৈনিকের পাহারায় এগিয়ে চলেছে কায়রোর দিকে।

জ্ঞান ফিরলেও হাবিবুল কুদ্দুস তাদের সাথে কোনো কথাই বললেন না। তার নির্দেশে কোন রকম বিরতি ছাড়াই কাফেলা এগিয়ে চললো।

কায়রো শহর। মধ্য রাত। চমৎকার ‍নিরবতা বিরাজ করছিল শহর জুড়ে। হাবিবুল কুদ্দুস কাফেলা নিয়ে সোজা হাজির হলেন গভর্ণর হাউজে। ঘুম থেকে জাগানো হলো কায়রোর ভারপ্রাপ্ত আমীরকে।

একটু পর আলী বিন সুফিয়ানের চাকর তাকে জাগিয়ে বললো, ‘আমীর সাহেব আপনাকে এখুনি তার মহলে যেতে বলেছেন।’ বড় রকমের কোন সমস্যা হয়েছে ভেবে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হলেন। হাবিবুল কুদ্দুসকে সঙ্গে নিয়ে গিয়াস বিলকিস বসে ছিলেন সেখানে। আলী বিন সুফিয়ান গিয়াস বিলকিসের সঙ্গে হাবিবুল কুদ্দুস কে বসে থাকতে দেখে যারপরনাই বিস্মিত হলেন।

হাবিবুল কুদ্দুস আবার তার অপহরণ হওয়া থেকে শুরু করে মুক্তি ও দুর্বৃওদের পাকড়াও করার অভিযান কাহিনী ওদের সামনে তুলে ধরলেন। এরপর তিনি সবাইকে চমকে দিয়ে এমন কয়েকজন সামরিক অফিসার ও বেসামরিক নেতার নাম উল্লেখ করলেন, যারা ছিল খৃষ্টান ষড়যন্ত্রকারী দুর্বৃওদের দোসর। এ নাম কয়টি তিনি পেয়েছিলেন বন্দী অবস্থায় খৃষ্টান নেতা এবং মিশর ও সুদান থেকে আগত দুই আগন্তুকের কাছ থেকে।

এই অফিসার ও নেতারা সবাই গাদ্দার ও ষড়যন্ত্রকারী ছিল। আলী বিন সুফিয়ান বললেন, ‘এরা সত্যি বিদ্রোহ সফল করার কাজে জড়িত ছিল কিনা আগে তা প্রমাণিত হওয়া দরকার। সত্যি ওরা দোষী সাব্যস্ত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে ওদের।’

আমীরের আদেশে তখুনি কমান্ডো বাহিনী রাতের আধারে সংশ্লিষ্ট অফিসার ও নেতাদের বাড়ীগুলো ঘিরে ফেললো। বাড়ীতেই পাওয়া গেল সবাইকে। কমান্ডোরা তাদের সবাইকে গ্রেফাতার করে নিয়ে এলো দরবারে। তাদের ঘরে যে সব উপঢৌকন ও বিলাস সামগ্রী পাওয়া গেল তাতেই তাদের অপরাধ সত্য বলে প্রমাণ হয়ে গেল।

সে সময় সুলতান আইয়ুবী হলব শহর অবরোধের জন্য শহরের পাশেই আল আখদার ময়দানে সামরিক ঘাটি করে অবস্থান করছিলেন। তিনি সিরিয়া ও বিভিন্ন রাজ্যে তার যে সেন্য ছিল তা থেকে কিছু কিছু অংশকে ডেকে নিজের বাহিনীর সাথে সামিল করার কাজে ব্যস্ত।

হলব সম্পর্কে তিনি তার সেনাপতিদের আগেই জানিয়ে ছিলেন, এই শহরের নাগরিকবৃন্দ দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, তারা আগেও এমন প্রমান রেখেছে। ফলে এখানে বিজয় পেতে হলে কঠিন মোকাবেলার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ওদিকে তার গোয়েন্দা সংস্থা হলবের অভ্যন্তরীন অবস্থা সম্পর্কে যে রিপোর্ট দিয়েছে তার চিএ ভিন্ন। গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন গৃহযু্দ্ধ করার ফলে তাদের আগের সেই অবস্থা নেই। গৃহযুদ্ধের ফলে শুধু শক্তির দিক দিয়েই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন নয়, তাদের চিন্তা-চেতনা এবং মানসিকতায়ও পরিবর্তন এসেছে। এ ক্ষেত্রে সুলতান আইয়ুবীর গোয়েন্দারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সেখানকার শাসক সুলতান ইমামুদ্দিনকে এখন হলবের অধিকাংশ নাগরিক ক্ষমতালোভী ও সৈরাচারী মনে করে। বিলাসবহুল জীবন যাপনের কারনে তিনি এখন জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন।

সুলতান আইয়ুবী এ সব শোনার পরও তার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হলেন না। কারণ ইমামুদ্দিন যথেষ্ট হুশিয়ার ও কুশলী সমরনায়ক। ইয়াজউদ্দিনের চাইতে তিনি সাহসীও বটে। তাই সুলতান এদিক ওদিক থেকে সৈন্য এনে আল আখদার ময়দানে জড়ো করতে থাকেন।

সৈন্য সংগ্রহ শেষ হলে তিনি তার সেনাপতিদের একত্রিত করলেন। অভিযান শুরুর আগে তিনি সেনাপতিদের শেষ বারের মতো নির্দেশ দিচ্ছিলেন। এ সময় কায়রো থেকে তার কাছে এক কাসেদ এলো।

কায়রোর কাসেদ এসেছে শুনেই তিনি বক্তৃতা বন্ধ করে কাসেদকে ডাকলেন। কাসেদ তাঁর হাতে আলী বিন সুফিয়ানের চিঠি তুলে দিলো।

আইয়ুবী মনোযোগ দিয়ে চিঠিটি পড়লেন। খুশীতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো তার চেহারা। তিনি হাসিমুখে সেনাপতিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমার মন বলছিল, হাবিবুল কুদ্দুস আমাকে ধোঁকা দিতে পারে না। আল্লাহ ইসলামের প্রত্যেকটি মেয়েকে যেন জোহরার মত ঈমান ও জোশ দান করেন।’

আলী বিন সুফিয়ান সেনাপতি হাবিবুল কুদ্দুসের অন্তর্ধান থেকে শুরু করে ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতার করার কাহিনী পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে লিখেছেন চিঠিতে। সব শেষে তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘সেনাবাহিনীর যেসব অফিসার এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত হয়েছিল তাদের ব্যাপারে আপনার নির্দেশ কি?’

তিনি দেরী না করে চিঠির উওর লিখতে বসে গেলেন। তিনি লিখলেন, ‘গাদ্দারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার, যাতে অন্যরা লোভে পড়ে এই রোগে আক্রান্ত হতে সাহস না পায়। ‍তুমি তাদের জন্য সে রকম শাস্তিরই ব্যবস্থা করবে। তাদেরকে ঘোড়ার পেছনে বেঁধে শহরের রাস্তায় ঘোড়া ছুটিয়ে দেবে। যতোক্ষণ তাদের মাংস ও চামড়া শরীর থেকে খসে না পড়বে ততোক্ষণ ঘোড়া থামাবে না।’

কাসেদকে বিদায় করার দু্’দিন পর। সুলতান আইয়ুবী তার মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে হলবের উপর প্রচন্ড আক্রমণ চালালেন। এবার আর অবরোধ নয়, সরাসরি আক্রমণ।

বড় মেঞ্জানিক দিয়ে শহরের মূল ফটকে পাথর ও পেট্রোলের বোমা নিক্ষেপ করা হলো। শহরের দেওয়ালেও নিক্ষেপ করা হলো পাথর। দূর থেকে দেয়ালের ওপর দিয়ে শহরের ভেতরে পেট্রোলের হাড়ি নিক্ষেপ হলো। প্রাচীরের উপর থেকে যেসব সৈন্য তীর বর্ষণ করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছিল তাদের ওপর চালানো হলো অগ্নি তীর।

মেঞ্জানিকের পেট্রোল বোমা ও অগ্নি তীরের তুমুল আক্রমণের ফাঁকে একদল সৈন্য ছুটে গেল দেয়ালের পাশে। তারা ওখানে পৌঁছেই দেয়াল ভাঙ্গার কাজ শুরু করে ‍দিলো।

কিন্তু আইয়ুবীর বাহিনীর এই প্রবল আক্রমণের তুলনায় শহরবাসীর প্রতিরোধ ছিল খুবই অনুল্লেখযোগ্য। জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ততা তো ছিলই না, শহরের সৈন্যদের তরফ থেকেও প্রতিরোধের ধরন ছিল মামুলী।

কাজী বাহাউদ্দীন শাদ্দাদ লিখেছেন, হলবের আমীর ইমামুদ্দিন, তার মন্ত্রীবর্গ ও অফিসাররা খৃষ্টানদের কাছ থেকে সামরিক সাহায্য ছাড়াও প্রচুর আর্থিক সাহায্য পেয়েছিলেন। তারা খৃষ্টানদের কাছ থেকে নিয়োমিত সোনা, রূপা ও মূল্যবান উপহার সামগ্রী পেতো। ইমামুদ্দিন, তার মন্ত্রী ও অফিসারদের দৃষ্টি সবসময় সেদিকেই নিবদ্ধ ছিল।

তারা জানতো এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতো, একদিন সুলতান আইয়ুবী নিশ্চয়ই হলব আক্রমণ করবেন। ইমামুদ্দিনও আগে থেকেই সুলতান আইয়ুবীর প্রচন্ড আক্রমণের আশঙ্কা করছিলেন। ফলে তাদের মধ্যে আইয়ুবী আতঙ্ক এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে, আক্রান্ত হওয়ার পর তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো।

ইমামুদ্দিন অবস্থা বেগতিক দেখে হলবের কেল্লাধিপতি হিশামুদ্দিনকে পাঠালেন সুলতান আইয়ুবীর কাছে। তিনি হিশামুদ্দিনের মাধ্যমে সুলতানের কাছে এই আর্জি পাঠালেন, ‘মাননীয় সুলতান, এই কেল্লা ও রাজ্য আপনি গ্রহণ করুন। বিনিময়ে আমাকে এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিন।

আপনি যদি আমাকে মুশেলের কোথাও থাকার অনুমতি দান করেন তাহলে আমি ওয়াদা করছি, আমি আর কখনো আপনার বিরুদ্ধে কোন তৎপরতায় অংশ নেবো না।’

সুলতান আইয়ুবী তার এ শর্ত মেনে নিলেন। এ সংবাদ যখন শহরে পৌছলো তখন শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত বিদ্যুতবেগে ছড়িয়ে পড়লো এ খবর। শহরের জনগন দলে দলে এসে ইমামুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলো, ‘আমরা যা শুনছি তা কি সত্য?’

ইমামুদ্দিন বললেন, ’এ সংবাদ সত্য। আমি হলব শহর ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। তোমরা ইচ্ছে করলে নতুন আমীর মনোনীত করে সুলতান আইয়ুবীর কাছে পাঠাতে পারো। তোমরা সুলতানের সাথে আপোষও করতে পারো আবার ইচ্ছে করলে লড়াইও করতে পারো। আমি আর এসবের মধ্যে নেই, তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো।’

শহরের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ জার্দুক আন নুরী ও জয়নুদ্দিনকে প্রতিনিধি করে সুলতান আইয়ুবীর কাছে পাঠালেন। জার্দুক আন নুরী ছিলেন দাস বংশের। ১১৮৩ সালের জুন মাসে তারা সুলতান আইয়ুবীর কাছে গেলেন।

সুলতান আইয়ুবীর সাথে আলাপ শেষে তারা শহরে এসে সমস্ত সৈন্যদেরকে নিয়ে শহরের বাইরে গেলো এবং হলবের সেনাবাহিনীকে সুলতান আইয়ুবীর কাছে সমর্পণ করে দিল।

সেনাবাহিনীর সাথে হলবের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ইমামুদ্দিনের উজির ও সভাসদবৃন্দও সুলতান আইয়ুবীর সামনে হাজির হয়ে তার বশ্যতা স্বীকার করে নিল। তিনি সবাইকে মূল্যবান পোষাক পরিচ্ছদ প্রদান করে তাদের বরণ করে নিলেন।

অভিযানের ষষ্ঠ দিন। হলবের বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী মুজাহিদ বাহিনীর বিজয় সুসম্পন্ন হয়েছিল। সুলতান আইয়ুবী এই সফলতার আনন্দে ছিলেন উৎফুল্ল। সেই মুহূর্তে তার কাছে সংবাদ এলো, তাঁর ভাই তাজুল মুলক মৃত্যুবরণ করেছেন। তাজুল মুলুক এই রণাঙ্গনেই আহত হয়েছিলেন। তার শাহাদাতের খবর সুলতান আইয়ুবীর আনন্দকে নিরানন্দে পরিনত করে দিল।

তাজুল মুলকের জানাজা অনুষ্ঠিত হলো হলবের এক বিশাল ময়দানে। সুলতানের বাহিনী ছাড়াও এই জানাজায় শরীক হলো হলবের আত্মসমর্পিত বাহিনী। ইমামুদ্দিন তখনো হলব ত্যাগ করেননি। তিনিও জানাজায় শরীক হলেন।

জানাজার পর তাজুল মুলুককে নিয়ে যখন বিশাল মিছিল রওনা হলো তাকে দাফন করতে, ইমামুদ্দিন তখন তার দীর্ঘদিনের মসনদ, পরিচিত শহর ও তার সকল অনুগত সৈন্য, উজির-নাজির, চামচা-চাটুকার সবাইকে রেখে হলব থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলেন মুসলের দিকে।

সুলতান হলবকে নিজের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে সেখানে নতুন প্রশাসক নিয়োগ করলেন। এরপর তিনি মনযোগ দিলেন নতুন একটি বিষয়ের প্রতি।

তার যে সমস্ত সৈন্য দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ করছিল তাদেরকে সাময়িক বিশ্রামের সুযোগ দেয়ার কথা ভাবলেন তিনি। তিনি পুরনো সৈন্যদের কিছুদিনের ছুটি দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দিলেন। নিজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন হলবের শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো ও নবাগত সৈন্যদের প্রশিক্ষণ কাজে।

তার চোখে তখনো ভাসছিল অবরুদ্ধ বায়তুল মোকাদ্দাস। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বাহিনীকে সংগঠিত করে তাদের উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস উদ্ধারে বেরিয়ে পড়তে চান তিনি। তিনি সেনাপতিদের হুকুম দিলেন, ‘আমার মূল বাহিনীর সদস্যরা ছুটি থেকে ফিরে আসার আগেই হলবের এই বাহিনীকে উপযুক্ত করে গড়ে নাও। এবার আমাদের টার্গেট হবে ফিলিস্তিন। আমাদের প্রথম কেবলা দুশমন মু্ক্ত না হওয়া পর্যন্ত আরামে ঘুমানোর কোন সুযোগ নেই।’

সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর চেহারায় খেলা করছিল আনন্দের আলো। তার এ উৎফুল্ল ভাব দেখেই তার সেনাপতি ও কমান্ডাররা বুঝে নিলেন, সুলতান কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌছে গেছেন। কারন তাদের জানা ছিল, সুলতানের মুখে এমন আনন্দের আভা তখনি দেখা দেয়, যখন তিনি কোন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পৌছে যান।

কোন সিদ্ধান্তে পৌছার আগে তিনি বিস্তর ভাবেন। তখন তার চেহারায় খেলা করে গাম্ভীর্য। তিনি বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে আলাপ করেন। উপদেষ্টা ও সেনাপতিদের সাথে মত বিনিময় করেন। সবার মতামতের সাথে নিজের প্রজ্ঞা ও বুদ্ধি মিলিয়ে তিনি যখন কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছান তখনই এমন আলোকিত হয়ে উঠে তার চেহারা।

একটি কথা তার শএুরাও জানে, তিনি কোন ব্যাপারে একবার সিদ্ধান্ত নিলে সেখান থেকে সহজে ফেরেন না। শত বিপদ মুসিবতেও তিনি তার গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে থাকেন সদা তৎপর।

১১৮৭ সালের মার্চ মাস। হিজরী সন অনুযায়ী মুহাররম মাস চলছে। তিনি দামেশকে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে তিনি সমস্ত মুসলিম জাহানের শাসকদেরকে তারঁ অধীনে নিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন।

কেউ তার আনুগত্য কবুল করেছেন সানন্দে, কেউ বা নিরূপায় হয়ে। তিনি তার এই বিশাল বাহিনীর প্রত্যেকের ওপর কড়া নজর রেখেছিলেন। ছোট ছোট কেল্লার আমীররা কি করছে এটা যেমন তিনি জানতেন, তেমনি জানতেন দুশমনরা এখন কি ভাবছে। আর এ সবই সম্ভব হচ্ছিল তার চৌকশ গোয়েন্দা বাহিনীর কল্যাণে।

এখন তিনি জানেন, প্রকাশ্যে এমন একজন মুসলিম শাসকও নেই যিনি খৃষ্টানদেরকে তার বন্ধু বলে ঘোষনা করতে পারে। যারা খৃষ্টানদের বন্ধু বানিয়ে রেখেছিল এবং তাদের নিয়ে জোটবদ্ধ হয়েছিল, তিনি সেই সব গাদ্দারকে ক্ষমতার মসনদ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। আর এ কাজ তাকে কঠোর হাতেই সমাধা করতে হয়েছিল। এদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশী বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন হলব ও মুসলের আমীর ইয়াজউদ্দিন ও ইমামুদ্দিনের কাছ থেকে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গৃহযুদ্ধের পর তারা সুলতান আইয়ুবীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তিনি তাদের পরাজিত করে তাদের সৈন্যবাহিনী নিজের সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত করে নিযেছিলেন। এভাবেই মুসলিম বিশ্বের বিশাল সামরিক শক্তি একটি একক কমান্ডের অধীনে চলে আসে।

তিনি তখনই দামেশকে ফিরে গিয়েছিলেন যখন তিনি তার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছিলেন। তিনি শপথ করেছিলেন, ফিলিস্তিন আক্রমণের আগে তিনি সমস্ত গাদ্দারদের বিষঁদাত ভেঙ্গে দিবেন। তিনি বিশ্বাসঘাতকদের মাথা হাটুঁর নিচে নামিয়ে তারপরই দামেশকে ফিরেছিলেন।

অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝেছিলেন, যতবার তিনি ফিলিস্তিন অভিযানকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবেন ততবারই জাতির ভেতর লুকিয়ে থাকা সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে পেছন থেকে তাকে ছোবল মারার জন্য ফনা তুলবে। তাই তিনি চাচ্ছিলেন, প্রথম কেবলা উদ্ধার অভিযানের প্রাক্কালে আর যেন তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে না হয়।

কিন্তু তিনি সাপের বিষদাঁত ভাঙতে গিয়ে জাতির শিরা উপশিরাকে রক্তাক্ত করতে চাচ্ছিলেন না। তিনি যেসব গাদ্দারকে তলোয়ারের ঝলক দেখিয়ে পথে এনেছিলেন তাদেরকে শুধু একারনেই নিঃশেষ করে দেন নি। তিনি তদের সঠিক পথে এনে কখনোই বলেননি, ‘দেখো, সুলতান আইয়ুবীর তলোয়ারের ধার দেখো।’

তিনি তাদের কথা স্মরণ করে শুধু একটি কথাই বলতেন, ‘হায়, ইসলামের ইতিহাসে এই অধ্যায়টা বড়ই ঘৃণিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। কারণ ইতিহাসে লেখা থাকবে, সুলতান সালাউদ্দিনের যুগটা ছিল অন্ধকার যুগ। ফেতনার তুফানের মোকাবেলা করতে ‍গিয়ে তিনি সত্যের বীজটুকু বোনার মত সময়ও পাননি।

ইতিহাস আরো লিখবে, হাজার হাজার খোদার সৈনিক বর্তমান থাকার পরও মুসলমানদের প্রথম কেবলা খৃষ্টান বিধর্মীদের দখলে ছিল। তারা যখন বায়তুল মোকাদ্দাসে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বসেছিল তখন মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে প্রকারান্তে মদদ যোগাচ্ছিল খৃষ্টানদের। আর যদি আমরা সবাইকে একত্রিত করে ফিলিস্তিন অভিমুখে অভিযান চালাতে পারি তখন ঐতিহাসিকরা লিখবে, ঐক্যবদ্ধ মুসলিম শক্তি খৃষ্টানদের পরিকল্পনা ধ্বংস করে ছিল।

সেদিন যখন সুলতান আইয়ুবী তাঁর সেনাপতি ও উপদেষ্টাদের সভা আহবান করেন, সবাই সুলতান আইয়ুবীর চেহারায় খুশীর ঝলক লক্ষ্য করে নিজেরাও উৎফুল্ল হয়ে উঠছিল। তারা বুঝতে পারছিল, সুলতান কোন অভিযানে বেরিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। আর তাঁর সেই অভিযানের লক্ষ্যস্থল যে বায়তুল মোকাদ্দাস তাও তারা অনুমান করতে পারছিল।

তারা এ ব্যাপারে সুলতানের মুখ থেকে ঘোষণা শুনতে চাচ্ছিল। তারা জানতে চাচ্ছিল, কোন দিন কোন সময় তারা যুদ্ধ যাএা করবেন আর কি প্রক্রিয়ায় তিনি যুদ্ধ চালাবেন। তারা এটাও জানতে চাচ্ছিল, এ অভিযান কোন রাস্তা ‍দিয়ে অগ্রসর হবে।

 ’হে আমার বন্ধুগণ! হে আমার সঙ্গীগণ!’ সুলতান আইয়ুব থেমে থেমে বলতে লাগলেন, ‘আপনারা অবশ্যই আমার কথা বুঝতে পেরেছেন। আমরা এখন বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে যাএা করার জন্য প্রস্তুত। আজ আমি আপনাদের সামনে যে কথা বলবো, আমি জানি তা একদিন ইতিহাস হয়ে থাকবে।

আপনারাও এ অভিযানের ব্যাপারে খোলামেলা মতামত প্রকাশ করুন। আপনাদের মতামত, আপনাদের সংকল্প ও প্রতিজ্ঞা সবই একদিন ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত হবে।

পেজঃ ১ম পেজ | ← পূর্বের পেজ | ... | 3 | 4 | 5 | 6 | পরের পেজ → | শেষ পেজ | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top