২১. ধাপ্পাবাজ

রমলা থেকে কায়রো, অনেক দূরের পথ। যাত্রাপথও অনেক কঠিন ও কষ্টকর। পাথুরে পার্বত্য এলাকা, ধূসর বালির বিবর্ণ প্রান্তর, মাটির অসংখ্য উঁচু-নিচু ঢিবি এসব পার হয়ে যেতে হয় কায়রো। পার হতে হয় সুদীর্ঘ বিশাল উন্মুক্ত মরুভূমি।

এই পথে অনেক বিপদ ও ভয় হঠাৎ করেই নেমে আসে যাত্রীদের জীবনে। কখনো ভয়ংকর মরু ডাকাত তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। কখনো অচেনা যাত্রী এসে রক্ত ও জীবন চুষে নেয়।

সুলতান আউয়ুবীর পরাজিত সৈন্যরা এই কঠিন পথ ধরেই যুদ্ধের ময়দান থেকে মিশরে যাত্রা করল। তারা সেই দীর্ঘ বো ভয়ংকর রাস্তা পাড়ি দিচ্ছিল, যেখানে যে কোন সময় অজানা বিপদ এসে বিপন্ন করতে পারে তাদের জীবন।

পুরো বাহিনী একসাথ হয়ে আসবে, তেমন সময় ও সুযোগ তাদের ছিল না। তাই ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে পথ চলছিল ওরা।

তাদের ফিরে আসার দৃশ্য ছিল খুবই করুণ ও ভয়ংকর। ওদের অনেকেরই মরুভূমিতে পথ চলার অভ্যাস এবং অভিজ্ঞতা ছিল না। মরুভূমির বালিতে একবার পা ডেবে গেলে সে পা আর তুলতে পারতো না এসব অনাড়ি পথিক। যুদ্ধ নয়, এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়েই অনেকে লাশ হয়ে পড়ে রইল মরুভূমিতে। কেউ হল মরুভূমির শিয়াল ও নেকড়ে বাঘের শিকার। তাদের দেহের হাড্ডি টেনে ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছিল হায়েনার দল।

যারা কাফেলা বেঁধে পথ চলার সুযোগ করে নিতে পারল, তারা এসব পরিণাম থেকে কিছুটা রেহাই পেল। আর যারা উট, ঘোড়া বা খচ্চরের উপর চড়ে রওনা করার সুযোগ পেল, তারা এই কষ্ট ও যাতনা থেকে কিছুটা রেহাই পেল। উত্তপ্ত বালির ওপর দিয়ে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেয়ার শ্রম তাতে কিছুটা লাঘব হলো ওদের।

এমনি ছোট্ট কাফেলা রমলা থেকে কায়রো ফিরছিল মরুভূমির পথ ধরে। কাফেলার সবই ছিল আইয়ুবীর পরাজিত সৈন্য। তাদের কেউ ছিল ঘোরার পিঠে, কেউ উটের পিঠে। রাস্তায় তাদের আরও দু’একজন করে যাত্রী জুটতে লাগল। এক সময় এই ছোট্ট দলটি ত্রিশ-চল্লিশ জনের এক কাফেলায় পরিণত হয়ে গেল।

তারা এক ভয়ংকর মরু অঞ্চল পার হচ্ছিল। আজ এই কঠিন মরু অঞ্চলকে সিনাই মুরুভূমি বলা হয়। তারা সবাই এক সাথে থাকার কারণে তখনো তাদের মনোবল ছিল অটুট। কিন্তু মরুভূমির এই সুদূর বিস্তৃত দিগন্তব্যাপী চরাচরে পানির কোন চিহ্নই দেখতে পাচ্ছিল না কেউ।

যুদ্ধের ময়দান থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছে, এটাই ছিল তাদের বড় শান্তনা। কিন্তু এর চেয়ে বড় বিপদ যে তাদের সামনে আসতে পারে এ কথা কেউ চিন্তাও করেনি।

পরাজিত সৈন্যরা পা টেনে টেনে কদম ফেলছিল আর কাফেলার সাথে তাল মিলিয়ে কোন মতে এগিয়ে যাচ্ছিল। তাদের কারো অবস্থাই এমন ছিল না যে, একে অন্যকে সাহায্য করে। তবে কেউ মরে গেলে তাকে বালির নিচে দাফন করার মত অবস্থা তখনো তাদের ছিল।

আরোহীরা চলতে চলতে এমন এক এলাকায় পৌঁছে গেল, যেখানে মাটির উঁচুনিচু টিলা এবং মস্ত বড় বড় স্তম্ভ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ একজন দূরে একটি টিলার আড়ালে এক লোকের মাথা ও কাঁধ দেখতে পেলো। কিন্তু সে কেবল মুহূর্তের জন্য। চকিতে তা আবার অদৃশ্য হয়ে গেল।

লোকটি তার সঙ্গীকে বললো, ‘ওই টিলায় আমি একজনকে এই মাত্র দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমরা ওখানে গিয়ে থেমে যাবো? ওখানে পানি না পাওয়া যাক, একটু ছায়া তো পাওয়া যাবে।”

কাফেলার যাত্রীদের অধিকাংশই ছিল পিপাসায় কাতর। তাদের গলা শুকিয়ে খরকরে হয়ে গিয়েছিল। মুখ দিয়ে কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছিল। মুখে পানি না থাকলেও জিভ নাড়ানো যে কষ্টের, এ কথা কেউ এতদিন ভেবেও দেখেনি। আজ বুঝলো তার মর্ম।

প্রথম দিকে কাফেলার একজন আরেকজনের সাথে হেসে কথা বলেছিল। যুদ্ধের কথা, বাড়ীর কথা অনেক কিছুই তারা আলাপ করেছে। কিন্তু যতই এগিয়ে গেছে, ততই তাদের কথার বহর কমে এসেছে। কমতে কমতে এক সময় কথা বলা একদম বন্ধ হয়ে গেছে। সত্যি কথা বলতে কি, এখন আর কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।

তাদের পশুগুলোর অবস্তাও একই রকম। যদিও কোন পশু বা যাত্রী এখনও পিপাসায় মারা যায়নি, কিন্তু যে কোন সময় প্রাণ-বায়ু উড়ে যেতে পারে, এ অবস্থা অনেকেরই। মাত্র এক মাইল দূরের টিলা যেন শত মাইল দূরে মনে হচ্ছে।

কাফেলা চলতে চলতে সেখানে পৌঁছে গেল। দু’টি টিলা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। কাফেলাটি দুই টিলার মাঝে গিয়ে টিলার ছায়ায় দাঁড়িয়ে পড়লো।

একটু জিরিয়ে নেয়ার জন্য সকলেই সেখানে পশুগুলোর পিঠ থেকে নেমে এলো। পশুগুলোকে ছায়ায় ছেড়ে দিয়ে নিজেরাও বসে পড়লো। টিলার ছায়াতে।

ছায়ায় বসেও স্বস্তি পাচ্ছীল না কেউ। আগুনের মত গরম বাতাস বইছে। সেই বাতাস আঘাত হানছে যাত্রীদের চোখে-মুখে। তপ্ত বাতাসে ছ্যাকা খাওয়ার পর সেই যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে।

তখনো ওরা সেখানেই বসে আছে, এমন সময় ওরা দেখতে পেল, টিলার অন্য পাশ থেকে এক লোক তাদের দিকেও এগিয়ে আসছে। লোকটি আড়াল থেকে তাদের সামনে পৌঁছেই মূর্তির মত দাঁড়িয়ে গেল।

লোকটির মাথা থেকে পা পর্যন্ত সাদা কাপড়ে ঢাকা। গায়ে ছিল সফেদ লম্বা জোব্বা। জোব্বাটি কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত ছুলে আছে। রোকটি দাড়ি কালো এবং খাঁটো। সে দাড়ি পরিপাটি  করে আঁচড়ানো।

লোকটির হাতে একটি লাঠি। এমন লাঠি সাধারণত: পণ্ডিত ও জ্ঞাণী লোকেরাই ব্যবহার করে। মসজিদে খতিবও মিম্বরে দাঁড়ানোর সময় এমন লাঠিতে ভর করে দাঁড়ান।

লোকটি নীরবে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। লোকটিকে দেখে কাফেলার লোকজন বেশ অবাক হলো এবং লোকটি কি করে বা বলে দেখার জন্য নীরবে তার দিকে তাকিয়ে রইল। তার চেহারায় কোন কষ্ট বা মালিন্যের ছাপ ছিল না।

কাফেলার কেউ একজন আস্তে করে বলল, ‘হযরত খিজির (আ:) হবেন হয়তো।’

‘না ইনি এই পৃথিবীর মানুষ নন!’ পাশের লোকটি প্রতিবাদ করে বলল।

এই বিরাণ মরুভূমিতে লোকটি এমনভাবে চলা ফেরা করছিল, মনে হচ্ছিল, মরুভূমি নয়, লোকটি বিকেলের মিঠে রোদে বাগানে পায়চারী করছে। লোকটির এমন উদ্বেগহীন আচরণে কাফেলার লোকদের মনে কেমন এক ধরণের ভয় এসে জমা হতে লাগলো।

এমনিতেই দুর্গম পথের আতঙ্ক ও ভীতি লেগেছিল তাদের চোখে, সেখানে এসে ঠাঁই নিল নতুন এক অজানা ভয়ের শিহরণ। আর সে ভয় এমনই তীব্র ছিল যে, এই রহস্যময় লোকটির পরিচয় জিজ্ঞেস করার সাহসও হলো না কারো। লোকটি কে, এই বিজন ও নিষ্ঠুর প্রান্তরে তিনি কি করছেন, কেউ এ কথাটিও জিজ্ঞেস করলো না।

পোড়া মরুভূমির কঠিন উত্তাপ অগ্রাহ্য করে কি করে এমন উজ্জ্বল ও প্রশান্ত চেহারা নিয়ে তিনি তাদের সামনে হাজির হলেন, প্রত্যেকের মনেই এ প্রশ্ন তখন তোলপাড় করছে। লোকটির ধোপদুরস্ত পরিষ্কার পোষাক তাদের ভীতি আরো বড়িয়ে দিল। লোকগুলো হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল লোকটির দিকে।

এ লোক যদি কোন সৈনিক হতো, তবে এই কাফেলার কেউ হয়তো তাকে দেখে ভয় পেতো না। কিন্তু এ লোক সৈনিক নয়, কোন মরু ডাকাতও নয়, খুবই শরীফ ও ভদ্রগোছের কেউ। কোন শাহী দরবারের সম্মানিত ওমরা বা সুফী দরবেশ কেউ হবেন, যাকে দেখলেই মনে শ্রদ্ধা ও ভক্তি জন্ম নেয়। তাহলে কে তিনি? এখানে তিনি কি করছেন? তিনি মানুষ, নাকি মানুষের বেশে কোন ভুত-প্রেত?

কাফেলার লোকগুলো তখনো অনিমেষ নয়নে তাকিয়ে আছে লোকটির দিকে, তখনি ঘটলো দ্বিতীয় বিস্ময়কর ঘটনাটি। টিলার অন্য পাশ থেকে এক যুবতী এসে দাঁড়ালো লোকটির পাশ ঘেঁষে।  এই দেখে লোকগুলো যখন বাকহারা এবং স্তম্ভিত তখন তৃতীয় চমক হয়ে লোকটির পাশে এসে দাঁড়ালো আরো একটি মেয়ে। এতটুকু দেখেই লোকগুলো ভয় ও আতঙ্কে একেবারে দিশেহারা হয়ে গেল।

মেয়ে দুটিই আপাদমস্তক বোরকা পরিহিতা। তাদের মুখে নেকাব আছে, তবে তা হালকা জালের মত পাতলা কাপড়ের। সে জন্য তাদের ফর্সা চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল যাত্রীরা।

বোরখার কারণে মেয়েদের শরীরের আর কোন অংশ দেখা না গেলেও, যেটুকু দেখতে পাচ্ছিল তাতেই লোকজন স্বীকার করতে বাধ্য হলো, মেয়ে দু’টি অসামান্য রূপসী।

লোকটি এমন একটা ভাব করলো, যেন সে এক শাহানশাহ, সম্রাট। তার হাঁটার ভঙ্গিতে গাম্ভীর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পাচ্ছিল। কয়েক কদম এগিয়ে লোকটি কাফেলার লোকগুলোর একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। দুই পর্দানসীন মহিলাও তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে তার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো।

লোকটির সম্মানে কাফেলার এক লোক উঠে দাঁড়ালো। তার দেখা দেখি অন্যরাও উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। তাদের এ সম্মানের সাথে জড়িয়ে ছিল ভয় ও আতঙ্ক।

লোকটি তাদের সামনে বসে পড়ল। মেয়েরাও বসলো তার পাশে। জালের মধ্য থেকে মেয়ে দু’টির পটলচেরা মায়াবী চোখগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল। ওরা পলকহীন চোখে তাকিয়েছিল কাফেলার লোকগুলোর দিকে।

সেই অতিমানবীয় লোকটি হাত ইশারায় সবাইকে বসতে বলল। লোকজন বসলে সে লোক কথা শুরু করল, ‘আমিও সেখান থেকেই এসেছি, যেখান থেকে তোমরা এসেছো।’ কালো দাড়িওয়ালা লোকটি বলল, ‘পার্থক্য শুধু এই, তোমরা ফিরে যাচ্ছো নিজের বাড়ীতে আর আমি আমার বাড়ী ছেড়ে চলে এসেছি।’ লোকটির কণ্ঠ থেকে ঝড়ে পড়ল বিষন্ন উদাসীনতা।

‘আমরা কেমন করে বিশ্বাস করবো, আপনি আমাদের মতই এক সাধারণম মানুষ?’ এক সৈনিক বললো, ‘আমরা তো আপনাকে অভিজাত ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেউ মনে করছি।’

‘না, এখন আমি তোমাদেরই মতই এক সাধারণম মানুষ! আর এ মেয়ে দু’টি আমার কন্যা।’ দরবেশ ব্যক্তিটি উত্তরে বলল, ‘আমিও তোমাদের মত রমলা থেকে পালিয়ে এসেছি। যদি আমার মুরশিদ আমার উপর দয়া না করতেন তবে খৃষ্টানরা আমাকে খুন করে ফেলতো আর আমার এই দুই কন্যাকে ধরে নিয়ে যেতো। এটা আমার মুরশিদেরই কৃতিত্ব যে, তিনি আমাদের হেফাজত ও নিরাপত্তা দিয়ে ধন্য করেছেন। আমি রমলার বাসিন্দা। শিশুকাল থেকেই ধর্ম শিক্ষার প্রতি আমার গভীর আগ্রহ ছিল। ওস্তাদের কাছ থেকে আমি অনেক এলেম হাসিলও করেছি।’

কথা বলছে লোকটি, তন্ময় হয়ে শুনছে কাফেলার যাত্রীরা। লোকটি বলে চলেছে, ‘শিক্ষা জীবন শেষ করার পর ওস্তাদের পরামর্শে আমি মসজিদে ইমামতি শুরু করি। আল্লাহই তার রাসূল ও দ্বীনের অনুসারীদের প্রতিপালন করেন। এক রাতে আমি স্বপ্নে হুকুম পেলাম, ‘বাগদাদ চলে যাও, আর সেখানে বাগদাদের শাহী মসজিদের ইমাম সাহেবের শাগরেদ হয়ে বসবাস করতে থাকো।

আমি পায়ে হেঁটেই বাগদাদ রওনা দিলাম। আমার কাছে টাকা পয়সা তেমন কিছু ছিল না। আমার মা বাবা ছিল খুবই দরিদ্র। ছোট একটা মশকও আমার ভাগ্যে জোটেনি যে, রাস্তায় পানি পান করবো। বিদ্যার নেশা আমাকে ঘর থেকে বের করে দিল। সবাই বললো, এ ছেলে রাস্তাতেই মারা যাবে। আমার মা অনেক কাঁদলেন, বাবাও কাঁদলেন। কিন্তু আমি বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাত্রা করলাম।

দিনের বেলায় ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় আমার জান বের হয়ে যেত। সন্ধ্যার পরে আমি এই আশা নিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়তাম, যেন এভাবেই আমার মৃত্যু হয়। কিন্তু ঘুম থেকে জেগে দেখতাম, আমার পাশে এক পিয়ালা পানি ও কিছু খাবার রাখা।

প্রথম প্রথম আমি ভয় পেতাম ও এগুলো কোন জ্বীন-পরীর কাজ মনে করতাম। কিন্তু রাতে স্বপ্নে আমাকে জানানো হলো, এসব কোন এক মুরশিদের কেরামতি। কিন্তু আমি জানতাম না, সে মুরশিদ কে ও কোথায় থাকে। আমি খেয়ে পিয়ে আবার গভীর নিদ্রায় শুয়ে পড়তাম। সকালে উঠে দেখতাম, সেখানে পিয়ালা পানি কিছুই নেই, রুটিও না।

বাগদাদ পর্যন্ত পৌঁছতে দুইবার নতুন চাঁদের উদয় হলো। সে এক দীর্ঘ এবং কষ্টকর যাত্রা। প্রতি রাতেই আমি পানির পিয়ালা ও খাবার প্যাকেট পেতাম। বাগদাদ শাহী জামে মসজিদের ইমাম আমাকে দেখে আমার পরিচয় না নিয়েই বলতে লাগলেন, ‘আমি কত দিন ধরে তোমার অপেক্ষায় আছি।’

তিনি আমাকে তার হুজরার মধ্যে নিয়ে গেলেন। আমি সেখানে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম, প্রতি রাতে যে থলে ও পিয়ালায় করে আমাকে খাবার ও পানি দেয়া হতো সেই থলে ও পিয়ালা সেখানে রাখা। খতিব সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার খাবার ঠিকমত পৌঁছতো তো?

আমি উত্তরে বললাম, ‘জি হ্যাঁ।

কিন্তু আমি এই ভেবে অবাক হলাম, প্রতি রাতে এই থলে ও পিয়ালা কে আমার কাছে বহন করে নিয়ে যেত? আর কেইবা সেগুলো এখানে ফিরিয়ে আনতো?

তিনি বললেন, ‘আল্লাহ যখন হযরত মুসা (আ:) কে সাহায্য করতে চাইলেন, তখন তিনি নীল দরিয়াকে আদেশ করলেন, ‘রাস্তা দিয়ে দাও।’ নদীর উজানের পানি উজানে ও ভাটির পানি ভাটিতে দাঁড়িয়ে গেল আর মাঝখান দিয়ে মোটা রাস্তা অতিক্রম করে হযরত মুসা (আ:) তাঁর দলবলসহ নদী পার হয়ে গেলেন। কিন্তু ফেরাউন যখন তার অনুসরণ করে সেই রাস্তায় প্রবেশ করলো তখন দু’দিকের পানি আবার এক হয়ে গেল। নদী আবার পূর্বের মত প্রবল বেগে প্রবাহিত হতে লাগল। ফেরাউন নদীতে ডুবে মারা গেল।’

লোকটি বলতে লাগলো, ‘সম্মানিত খতিব বললেন, আমি সেই মহান মালিকের অধীন, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি আমার কাজ শেষ হয়ে গেলে আবার তার কাছে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেবন। তার যে বান্দা তার প্রেমে মাতোলারা থাকে এবং তার জ্ঞান হাসিলের জন্য পাগলপারা হয়ে যায়, যেমন তুমি হয়েছ, তাকে তিনি মরতে দেন না। কঠিন মরুভূমিতে তার খাবার ও পিপাসার পানি তিনিই সরবরাহ করেন। উত্তাল জোয়ারের সময় নদীতে পরড়ে গেলেও তিনিই তাকে রক্ষা করেন।

করুণার আধার আমার সেই মালিক আমাকে হুকুম করলেন, ‘এক বান্দাকে আমি তোর কাছে আসতে বলেছি।’ তিনি আমাকে তোমার ছবি দেখিয়ে বললেন, ‘এই ছেলে এরই মধ্যে তোর কাছে রওনা হয়ে গেছে। হে খতিব, তোর ভেতরে যে জ্ঞান ও ইলম রয়েছে সেই জ্ঞান ঐ ছেলেটার অন্তরে দিয়ে দিবি। আর আমি তোর খেদমতের জন্য যে জ্বীনদের নিযুক্ত করে রেখেছি, তাদের বলবি, তারা যেন ছেলেটাকে নিয়মিত রোজ রাতে খাবার ও পানি পাঠাতে থাকে।

আমি মহান আল্লাহর আদেশ পালন করেছি মাত্র। প্রতি রাতে এখান থেকে তোমার জন্য খাবার ও পানি পাঠানো হতো। আর সে খাবার যথাসময়ে পৌঁছে  যেতো তোমার কাছে। ওহে বালক, অবাক হয়ো না, অধীর হয়ো না। খুব কম লোকের ভাগ্যেই এ বিদ্যার আলো জোটে। এই নূরে আলোকিত হয় অন্তর। তুমি বড় ভাগ্যবান। যে আলো আমার মাঝে আছে সে আলো তুমি পাবে। তবে তোমাকে সৎ হতে হবে, আর মনে আল্লাহকে খুশী করার ইচ্ছা থাকতে হবে। তখন জ্বীন ও মানুষ তোমার তাবেদার হয়ে যাবে। ‘

‘জ্বীনেরা কি আপনার গোলমা? এক সিপাই প্রশ্ন করলো।

‘না, তা নয়।’ লোকটি উত্তর দিল, ‘আমরা সবাই আল্লাহর গোলাম। জ্বীন ও ইনসান কেউ কাউকে গোলাম বানাতে পারে না। আমরা সবাই তাঁরই গোলামী করি, যাঁর কাছে উঁচু-নিচু, ধনী-গরীবের পার্থক্য নেই। ঈমানের দৃঢ়তা ও দুর্বলতা দ্বারাই মানুষ বড়-ছোট হয়।’

লোকটির কথায় এমন প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি ছিল যে, সকলের মনই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেল। তারা মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনতে লাগলো।

লোকটি বলতে লাগলো, ‘বাগদাদের খতিব আমার আত্মাকে জ্ঞান দ্বারা আলোকিত করে দিলেন। তিনি আমার বিয়েও দিয়ে দিলেন। সেখানেই আমার এ দু’টি মেয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। আমি অনেক সাধনা করে আল্লাহর মহিমার কয়েকটি গোপন রহস্য পেয়েছি।

এক রাতে আমার উস্তাদ খতিব সাহেব আমাকে বললেন, ‘এখন তুমি এখান থেকে চলে যাও। গিয়ে সেই সব আল্লাহর বান্দার খেদমত করো, যারা আল্লাহর বান্দা হয়ে তার কেদমত করতে চায়।’

তিনি আমাকে আমার দেশ রমলা যাওয়ার আদেশ দিলেন। দু’টি উট দান করলেন, যেন আমার সফর আরামদায়ক হয়। পথে খরচ দান করলেন আর বললেন, ‘দেখো, জীবনে আর কোন পাপ ও অন্যায়ের চিন্তাও করবে না। রমলা যখন পৌঁছবে, তখন এক রাতে  তুমি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই উঠে একদিকে যাত্রা শুরু করবে। হয়তো তোমাকে বেশী দূর যেতে হবে না। কিন্তু যেখানে তোমার পা নিজে নিজেই থেমে যাবে সে স্থানটি এক পবিত্র স্থান। তুমি সে স্থানেই তোমার আস্তানা বানিয়ে নেবে।

কিন্তু খুব শীঘ্রই ভবিষ্যতের অন্ধকার ঢাকা এক সময় তোমার সামনে হাজির হবে। তখন তোমার পাপ ও অন্যের পাপের শাস্তিও তোমাকে ভোগ করতে হবে। অবস্থা তখণ এতটাই নাজুক হয়ে যেতে পারে যে, তোমাকে সেখান থেকে হিজর করতে হবে।’

আমি যখন আমার স্ত্রী ও এই দুই মেয়েকে নিয়ে পথে বের হলাম, তখন সূর্যের তেজ ও প্রখরতা আমার এ ছোট্ট পরিবারের জন্য ঠাণ্ডা ও শীতল হয়ে ধরা দিল। আমরা আল্লাহর মর্জি সে স্থানেও পানি পেলাম, যেখানে বালির কণা ছাড়া এক ফোটা পানিও ছিল না।

আমি রমলা পৌঁছে দেখলাম, ততদিনে আমার মাতাপিতা মারা গেছেন। আমার স্ত্রী সেই বিরান বাড়ীকে আবার আবাদ করে তুললো। আমি জ্ঞান সাধনার সাগরে ডুবে রইলাম। আমার মেয়ে দু’টি আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো।

একদিন আল্লাহতায়ালা তাদের মাকেও তাঁর কাছে ডেকে নিলেন। তখন মেয়েরাই আমার দেখাশোনা ও বাড়ীর কাজ করতে লাগলো। পরে এক রাতে আমি গভীর ঘুম থেকে কারো ডাকে জেগে উঠলাম। কিন্তু কে আমাকে ডেকে তুলল বুঝতে পারলাম না।

আমি উঠে একেবারে দাঁড়িয়ে গেলাম। বাগদাদ জামে মসজিদের খতিবের অনেক পুরানো কথা আমার মনে পড়ে গেল, ‘তুমি সহসাই জেগে উঠবে ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও যাত্রা করবে।’

ঠিক তাই হলো। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি বাড়ী থেকে বের হয়ে এলাম এবং একদিকে হাঁটা ধরলাম।

হাঁটতে হাঁটতে আমি আমার গ্রাম ও লোকালয় ছেড়ে এলাম। আমি থামতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমার পা আমাকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে চললো। আমি চলতেই লাগলাম।

জানি না তোমরা সে স্থানটি দেখেছো কি না। সেখানে গভিল খাদ ছিল এবং খাদের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হচ্ছিল। খৃস্টানদের অসংখ্য সৈন্য সেই খাদের গভীরে লুকিয়েছিল। আমি শুনেছিলাম, সুলতান আইয়ুবী অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন। তিনি মাটির দেয়াল ভেদ করে লুকানো শত্রু দেখতে পারেন। কয়েক মাইল দূর থেকে শত্রুর গন্ধ পেয়ে যান। শিকারী জন্তু যেমন গন্ধ শুঁকে শিকারের কাছে চলে যায়, তেমনি তিনি শত্রুর গন্ধ শুঁকে শত্রুর কাছে চলে যেতে পারেন।

হয়তো আল্লাহ সত্যি সত্যি আইয়ুবীকে এমন শক্তি দিয়েছিলেন। আর সেই শক্তির বলেই তিনি বার বার যুদ্ধে জিতে ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ অহংকারী মানুষ পছন্দ করেন না। বিজয়ের পর বিজয় তার মনে অহংকার জন্ম দিয়েছিল।

তাই এবার যখন তিনি অভিযানে বের হলেন, আল্লাহর রহমত তার কাছ থেকে বিদায় হয়ে গেল। আল্লাহ তাকে যে নেয়ামত দিয়েছিলেন, তা উঠিয়ে নিলেন। তাঁর চোখের উপর আল্লাহ এমন পট্টি বেঁধে দিলেন যে, শত্রু তো দূরের কথা, তিনি নিজে কোথায় আছেন তাও জানতে পারলেন না। তাই ক্রুসেড বাহিনী তোমাদেরকে তাদের ফাঁদে ফেলে দিল। তারপর তারা খাদের ভেতর থেকে স্রোতের মত বেরিয়ে এলো এবং তোমাদের আক্রমণ করলো। তারপরের অবস্থা তো তোমরাই ভাল জানো।

এই যুদ্ধের কয়েক বছর আগের কথা। আমি কোন অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে একদিন এই খাদের কাছাকাছি এক জায়গায় এসে পৌঁছলাম। সেখানে আমার পা হঠাৎ করেই থেমে গেল।

তখন ছিল চাঁদনী রাত। আমি সেখানে এক মাজার দেখতে পেলাম। কবরের চারপাশ পাথরের দু’হাত উঁচু দেয়াল দ্বারা বাঁধানো। আমি পরীক্ষা করার জন্য অন্য দিকে ফিরলাম। কিন্তু আমার পা আমাকে আবার কবরের দিকেই ঘুরিয়ে দিল।

এবার আমি কবরের  দিকে এগিয়ে গেলাম। আমার যাওয়ার জন্য পাথরের রাস্তা বানানোই ছিল। সেই পথ ধরে আমি কবরের চৌহদ্দিতে প্রবেশ করলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত দোয়ার জন্য উঠে গেলো।

আমার মনে হতে লাগলো, চাঁদ যেন আরও বেশী উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। আমার মনে হলো, আমার ওস্তাদ মনে হয় আমাকে এই স্থানের কথাই বলেছিলেন। আমি কবরের পাশে বসে গেলাম ও করবের উপর হাত রেখে আবেদন করলাম, ‘আমার মত দাসের উপর আপনার কি আদেশ?’

আমি এ প্রশ্নের কোন উত্তর পেলাম না। আমার মন বলল, এখানে কিছু চাইতে নেই। যে কল্যাণ ও সুবিধা তোমার পাওয়া উচিত তা স্বাভাবিক ভাবেই তার তরফ থেকে হয়ে যাবে।

আমি রাতটা সেখানেই কাটিয়ে দেলাম। সকালে নদীতে অজু ও গোছল করতে গেলাম। তারপর কবরের কাছে এসে নামাজ পড়লাম।

সেখান থেকে যখন বিদায় হলাম তখন মাতালের মত আমার নেশা নেশা ভাব হলো। আমার মাথা ঘুরতে লাগল। আমার মনে হলো, এটাই সে জায়গা, যেখানে আমাকে আস্তানা গাড়তে বলেছিলেন আমার ওস্তাদ।

তারপর থেকে আমি নিয়মিত সেই মাজারে যাতায়াত শুরু করলাম। বলতে গেলে সেখানেই আমার আস্তানা বানিয়ে নিলাম। সেই কবরের পাশে দাঁড়ালে আপনাতেই আমার মনে নতুন নতুন ভাব জাগতো। তাপর সেটাই আমার বিশ্বাসে পরিণত হতো।

আমি কবরের উপর উঁচু করে গুম্বুজ বানিয়ে নিলাম। লোকজন জোর করে আমার মুরীদ হতে লাগলো। ক্রমে আমি দূর দূরান্ত পর্যন্ত সফল শুরু করলাম। হাজার হাজার মানুষ আমার মুরীদ হয়ে গেল। আমি হলব এবং মুশেলের বিভিন্ন অঞ্চলে গেলাম। এমনকি বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফল করলাম।

কিছুদিন থেকে আমি দিনের বেলাতেই উমন সব ইশারা পেতে লাগলাম, যা খুব ভাল নয়। মনে হলো, যে মহামানব এই মাজারে শুয়ে আছেন তার আত্মা অশান্ত হয়ে উঠেছে।

কবরের উপর আমি সবুজ চাদর বিছিয়ে দিলাম। এক রাতে চাদরে ফড়ফড় শব্দ হতে লাগল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি চাদরের উপর হাত দিয়ে বললাম, ‘মুরশিদ! আমার জন্য কি আদেশ?’

মাজারের মধ্য থেকে শব্দ হল, ‘তুমি দেখছোনা, মুসলমানরা এখন মদ পান করতে শুরু করেছে?’ এর আগে আমি আর এমন শব্দ কোনদিন শুনিনি। তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি মুসলমানদেরকে মদের অপকারিতা সম্পর্কে সাবধান করো।’

আমি তার আদেশ অনুযায়ী কাজ শুরু করলাম। কিন্তু দেখতে পেলাম, গরীবরা কেউ মদ পান করে না। মদ পান করে বড় বড় অফিসার ও আমীররা। তাদের কান পর্যন্ত আমার সাবধান বাণী পৌঁছতো না।

আবারও এক রাতে কবরে চাদর ফরফড় করে আমাকে জানিয়ে দিল, মিশর থেকে আসা সৈন্যরা মুসলিম এলাকায় মুসলমানদের সাথে ঠিক সেই ব্যবহার করছে, যেমন ব্যবহার ক্রুসেড বাহিনী করে থাকে। সে সময় সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর সৈন্য দামেশকেও ছিল।

দামেশক থেকে হলব পর্যন্ত এবং হলব থেকে রমলা পর্য়ন্ত সৈন্যদল স্থানে স্থানে ছড়ানো ছিটানো ছিল। এই সব সৈন্যদের কমাণ্ডাররা মুসলমান বাড়ীতে ঢুকে মূল্যবান জিনিস ও নগদ অর্থ জোর করে কেড়ে নিতো। তারা পর্দানশীল মেয়েদের উপরেও হাত বাড়াল।

তাদের দেখাদেখি সাধারণ সৈনিকরাও লুটপাট শুরু করে দিল এবং নারীদের লাঞ্ছিত করতে লাগল। এমন সংবাদও পাওয়া গেছে, সেনাপিত ও কমাণ্ডাররা মুসলমান মেয়েদেরকে ধরে নিয়ে তাদের ক্যাম্পে তুলেছে।

মাজার থেকে  আমাকে আদেশ দেয়া হলো, তুমি সলতান আইয়ুবীর কাছে যাও। তাঁকে বলো, এই সৈন্য তো খেলাফতে বাগদাদের বাহিনী,  মিশরের ফেরাউনের বাহিনী নয়। তারা যদি এমন পাপ কর্ম চালু রাখে, তবে তাদের হাশর ফেরাউনের মতই হবে।

সে সময় সুলতান আইয়ুবী হলবের নিকটে ক্যাম্প করেছিলেন। আমি এত দূর রাস্তা অতিক্রম করে তাঁর সঙ্গে যখন দেখা করতে গেলাম, তখন তাঁর রক্ষীরা বললো, ‘তুমি সুলতাদের সাথে কেন দেখা করতে চাও?’

আমি বললাম, ‘আমি রমলা থেকে এসেছি ও একটি সংবাদ এনেছি।’

তারা জিজ্ঞেস করলো, ‘সংবাদ কে দিয়েছে?’

আমি বললাম, ‘সংবাদ যিনি দিয়েছেন, তিনি জীবিত নন।’

রক্ষীরা হো হো করে হেসে উঠলো। তাদের কমাণ্ডার উচ্চস্বরে বললো, ‘ওগো, তোমরা যদি পাগল দেখতে চাও তো আসো। এই লোক বলছে সে কবর থেকে সুলতানের জন্য সংবাদ এসেছে।’

অন্য একজন বললো, ‘এ লোক নিশ্চয় শেখ মান্নানের চেলা। বেটা ফেদাইন দলের লোক, সুলতানকে হত্যা করতে এসেছে। একে, ধরো, বন্দী করো।’

অন্য একজন বললো, ‘এ লোক খৃষ্টানদের চর! একে হত্যা করো।’

আমি বন্দী হওয়ার ভয়ে বললাম, ‘আমি সত্যি একজন পাগল!’

আমি সেখান থেকে পালিয়ে এলাম। আমি স্বচক্ষে দেখলাম, সুলতান আইয়ুবীর ক্যাম্প থেকে দু’টি মেয়ে মাথা বের করে পাগলের তামাশা দেখার জন্য আমার দিকে তাকিয়ে আছে।’

‘আমারা তাঁর কোন সৈন্যের কাছে কোন মেয়ে দেখিনি।’ এক সৈনিক বললো।

‘তোমরা কি সেই সময় যখন তাঁর সৈন্যরা দামেশকে গিয়েছিল, তখন তাদের সাথে ছিলে? সাদা পোষাকধারী লোকটি প্রশ্ন করলো।

‘আমরা তো এই প্রথমবারের মত এদিকে এসেছি।’ এক সিপাই বললো, ‘আমরা সৈন্য বিভাগে নতুন ভর্তি হয়েছি। তখন আমরা সুলতাদের বাহিনীতে ভর্তিই হইনি তো সেখানে থাকবো কেমন করে?’

‘আমি পুরাতন সৈন্যদের কথা বলছি।’ লোকটি বললো, ‘সেই কমাণ্ডার ও সৈন্যদের কথাই বলছি, যাদের পাপের শাস্তি তোমাদের মাথার ওপর এসে পড়েছে। তোমরা নতুন তো, সে জন্য কোন পাপের সাথে জড়াতে পারোনি। এ জন্যই তোমরা এখনো জীবিত আছো, নিপরাপদে ফিরে আসতে পেরেছো। কিন্তু যারা মুসলমান হয়েও মুসলমানদের বাড়ীতে লুটপাট করেছে ও পর্দানশীন নারীদের উপর হস্তক্ষেপ করেছে, তারা সবাই মারা গেছে। আর যারা পাপী ও চোনাহগার তাদের কারো ঠ্যাং কেটেছে, কারো বাহু ও হাত কেটেছে।

 

পেজঃ ১ম পেজ | 1 | 2 | 3 | 4 | ... | পরের পেজ → | শেষ পেজ | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top