১৬. টার্গেট ফিলিস্তিন

‘সে কথাও আমি বলছি তোমাকে’। দাউদ বললো, ‘খেয়ালের বশে হত্যা না করাই উচিৎ। তোমাকে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ ধীরস্থীর মাথায় চিন্তা-ভাবনা করা উঠাতে হবে। এখন সাইফুদ্দিনের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে আমাদের। তাকে অনুসরণ করে জানতে হবে তার পরিকল্পনা কি। তিনি এখন এখানে আত্মগোপন করে আছেন। তুমি এবং আমিও আত্মগোপন করে কৌশলে তার গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকবো। তারপর যখন সময় হবে তখন আমি বলবো, হ্যাঁ, এবার তুমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারো। তার আগে তাকে হত্যা করার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দাও’।

সাইফুদ্দিন তখনো সেই বাড়িতেই এক কামরায় গভীর নিদ্রায় শায়িত। ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। বৃদ্ধ একটু উঁকি মেরে দেখলো তখনো ঘুমিয়ে আছে মুশেলের আমীর। দেখতে দেখতে সূর্য উপরে উঠে গেল। অনেক বেলায় ঘুম ভাঙল তার। হারেসের স্ত্রী ও বোন সকালের নাস্তা নিয়ে প্রবেশ করলো তার কামরায়। সাইফুদ্দিন হারেসের বোনে দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো। নাস্তা রেখে চলে যাচ্ছিল সে, সাইফুদ্দিন তাকে কাছে ডাকলো। বললো, ‘তুমি আমার যে খেদমত করছো, আমি অবশ্যই তার যথাযথ মূল্য দান করবো। যে দান তুমি কোন দিন কল্পনাও করোনি। আমি তোমাকে আমার শাহী মহলে সুখের পায়রা বানিয়ে রাখবো’। ‘যদি আমি আপনাকে এই কুটিরেই মেহমান বানিয়ে রাখি, তাতে কি আপনি খুশী হবেন না?’ মেয়েটি হেসে বললো।

‘আমি তো মরুভূমিতেও থাকতে পারি’। সাইফুদ্দিন বললো, ‘কিন্তু তুমি তো ফুলের সাথে সাজিয়ে রাখার জিনিস’।

‘আপনার কি বিশ্বাস, আপনার ভাগ্যে আবার মহলে ফিরে যাওয়া লেখা আছে?’ মেয়েটি বললো।

‘এমন কথা তুমি কেমন করে বললে?’

‘আপনার অবস্থা দেখে বলছি’। মেয়েটি বললো, ‘আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে, ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার! শাহী মহলের পরিবর্তে লুকিয়ে আছে এক গরীবের কুটিরে। পাইক-পেয়াদা, সৈন্য-সামন্ত, মন্ত্রী-পারিষদ কেউ পাশে নেই। আপনি তো এখন এক রাজ্যহারা রাজা’।

‘না, সবকিছু তুমি জানো না। সৈন্যরা এখনো আমার সঙ্গ ছাড়েনি’। সাইফুদ্দিন বললো, ‘একটু বিশ্রামের জন্য আমি এখানে থেমেছি। মহল শুধু আমার ভাগ্যে নয়, তোমার ভাগ্যেও লেখা আছে। তুমি কি আমার সাথে যেতে রাজী হবে?’

হারেসের স্ত্রী কামরা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল, বোনটি কথা বলছিল সাইফুদ্দিনের সাথে। সাইফুদ্দিনের প্রস্তাব শুনে সে বললো, ‘যদি আপনার জায়গায় আমি হতাম, তবে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীকে পরাজিত না করে মহলের নামও মুখে আনতাম না। যদি আমাকে আপনার পছন্দ হয়ে থাকে, তবে আমার মনোভাবও আপনার জানা দরকার। লুকিয়ে থাকা লোক আমি মোটেও পছন্দ করি না। যদি যোদ্ধার বেশে দুঃসাহসী সেনাপতির মত আপনি প্রকাশ্যে বের হয়ে নিজের সৈন্যদের ঐক্যবদ্ধ করে সুলতান আইয়ুবীকে আক্রমণ করতে পারেন, কেবল তখনই আমি আপনার মহলে যাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি’।

কৈশোরের চাপল্য এখনো কাটেনি ময়েটির। যৌবনের ঘরে সবেমাত্র পা দিতে শুরু করেছে। এ বয়েসী মেয়েদের চেহারায় সারল্য যেমন তিরতির করে, বয়স্ক মেয়েদের মত পাকামীও অদ্ভুত সুন্দর লাগে। তার সে সারল্যভরা গাম্ভীর্যের মোহময় সৌন্দর্য সাইফুদ্দিনের অন্তরে এক ধরনের পুলক ও আকর্ষণ সৃষ্টি করছিল। সাইফুদ্দিন আগ্রহভরে দেখছিল ফুটনোন্মোখ এক পুষ্পের প্রস্ফুটন। মেয়েটির ঠোঁটে এমন হাসি ছিল, যার মধ্য ছিল কিছু দুষ্টুমি, কিছু অনুরাগ।

‘একদম রানীর মত কথা বলেছো তুমি। রাজার ঘর আলোকিত করার জন্য এমন মেয়েই তো চাই!’

‘আমি কোন শাহজাদী নই’। মেয়েটি বললো, ‘এ পাহাড়ী উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেছি আমি। এখানেই লালিত-পালিত হয়ে বড় হয়েছি। আমি এক সৈনিকের কন্যা, আরেক সৈনিকের বোন। মহলে নয়, যদি যুদ্ধক্ষেত্রে রওনা করেন তবে আপনার সাথে যেতে পারি। আপনি তখন আমার সাথে তলোয়ার যুদ্ধ খেলতে পারবেন, পাহাড়ের ওপর ছুটাছুটি করতে পারবেন, ঘোড়দৌড় খেলতে পারবেন। কি, যাবেন যুদ্ধে?’ ‘বাহ! তুমি তো কেবল সুন্দরী নও, বীরাঙ্গনা যোদ্ধাও দেখছি! দেখো তো, পংখীরাজের ঘোড়ায় চড়ে আসা রাজপুত্তুর মনে হয় না আমাকে?’ সাইফুদ্দিন তার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বললো, ‘কি রেশম কোমল চুল! এমন আকর্ষণীয় চুল আমি খুব কমই দেখেছি’।

মেয়েটি তার হাত আস্তে সরিয়ে দিয়ে বললো, ‘আমার চুল নয়, আপনার প্রয়োজন এখন শক্ত বাহুর। বলুন, এখন আপনার কি ইচ্ছা?’

‘আমি কি আমার রানীর ইচ্ছা পায়ে ঠেলতে পারি! তবে ভয় কি জানো, তোমার বাবা অতি ভয়ংকর লোক! মনে হয় সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সমর্থক। আমাকে তেমন পছন্দ করে না। তোমার বাবা তো আমাকে আবার ধোঁকা দেবে না?’

মেয়েটি শিশুর মত হেসে বললো, ‘বাবা বুড়ো মানুষ, জানি না আপনার সাথে কি কথা বলেছে। আমার সামনে রাতে তো বাবা আপনার প্রশংসাই করলো। তিনি সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর শুধু নামই শুনেছেন, কোনদিন চোখেও দেখেননি। বাবার তার সমর্থক হতে যাবেন কেন? বাবাকে নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর তিনি তো বৃদ্ধ মানুষ, আপনার কিইবা ক্ষতি করতে পারবে। আপনার তো বাবাকে দরকার নেই। আমাকে পছন্দ হলে আমাকে বলবেন। আপনার সাথে বাবা যাবেন না, গেলে আমি যাবো’।

সাইফুদ্দিন তার দিকে হাত বাড়ালো। মেয়েটি খিলখিল করে হেসে দ্রুত পিছনে সরে গেল। বললো, ‘অ-মা, সবুরে মেওয়া ফলে তাও জানো না! আমি তো বলেছি,ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকা টিকটিকি আমি একদম পছন্দ করি না। জানো না, বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা। আগে সুলতান আইয়ুবীকে পরাজিত করো। তারপর…’

‘তারপর কি রানী!’

‘কচু!’ মেয়েটি ভেংচি কেটে বললো। তারপর দু’কদম সামনে এগিয়ে স্বর গম্ভীর করে বললো, ‘এখন আপনি বিপদগ্রস্থ। কেন বুঝেন না, এ সময় অন্য কোন চিন্তা মাথায় রাখা ঠিক নয়। এবার বলুন, আপনার ইচ্ছাটা কি? যুদ্ধের ব্যাপারে কি পরিকল্পনা করছেন?’

সাইফুদ্দিন ছিল চতুন নারী শিকারী। যুবতী ও সুন্দরী মেয়ে তার কাছে কোন নতুন ও বিরল জিনিস ছিল না। কিন্তু তিনি এ মেয়ের মধ্যে এমন আশ্চর্য সরলতা ও আন্তরিকতা লক্ষ্য করলেন যে, নিজেই অবাক হয়ে গেলেন। সে ডাকলে যে কোন মেয়েই পোষা বিড়ালের মত কাছ চলে আসে। তার ইশারায় তারা হাসে, তার ইশারায় নাচে। কিন্তু এ কেমন অদ্ভুত ময়ে, ধরাও দেয় না, সরেও যায় না! অথচ এ মেয়ে এমন সাংঘাতিক, অবলীলায় তার পৌরুষে আঘাত করতেও ভয় পায় না। এক বাদশাহর সাথে কথা বলতে যে সম্ভ্রম ও সৌজন্য প্রকাশ করতে হয়, এ মেয়ে যেন তা জানেই না।

‘আচ্ছা তাই হবে’। সাইফুদ্দিন বললো, ‘তুমি আমাকে পরীক্ষা করতে চাচ্ছো তো, আমি ওয়াদা করছি, যে পর্যন্ত আমি সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর তলোয়ার কেড়ে নিতে না পারবো সে পর্যন্ত আমি তোমাকে স্পর্শও করবো না। তুমি অঙ্গীকার করো, তার ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়ে আমি যখন তোমার কাছে আসবো, তুমি আমাকে দূরে সরিয়ে দেবে না?’

 ‘অঙ্গীকারের দরকার কি! আপনি আমাকে সঙ্গে করে নিয় চলুন, যুদ্ধের ময়দানেও আমি আপনার পাশে থাকবো’। বললো মেয়েটি।

‘না!’ সাইফুদ্দিন বললো, ‘আমি এখন আমার সৈন্যদের একত্রিত করবো। নতুনভাবে সেনাবাহিনী গড়ে তুলবো। আমি আমার সহকারীকে মোশেল পাঠিয়েছি। তাকে বলে দিয়েছি সৈন্যদের ঐক্যবদ্ধ করতে। যত দ্রুত সম্ভব সৈন্যদের সংগঠিত করেই আমি সালাহউদ্দিনের ওপর আক্রমণ চালাবো। কিছুতেই তাকে আমি আমাদের শহরগুলো অবরোধ করার সুযোগ দেবো না। আজ সন্ধ্যার মধ্যেই আমার পাঠানো দু’জন লোকই ফিরে আসবে। তারা এলেই জানতে পারবো,হলব ও হারানের সৈন্যরা কি অবস্থায় আছে। আমি পরাজয় মেনে নিয়ে পালিয়ে থাকার লোক নই। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, আমি আবার আক্রমণ চালাবো এবং তা অতিশীঘ্রই’।

সাইফুদ্দিন গাজী কি ধরনের লোক বুঝা হয়ে গেল মেয়েটির। লোকটি কেবল চরিত্রহীন নয়, ব্যক্তিত্বহীনও। যে লোক গ্রামের এক কিশোরী কন্যার কথার জালে আটকা পড়ে যুদ্ধের মত স্পর্শকাতর বিষয়ের গোপন কথা ফাঁস করে দিতে পারে, তার মত দুর্বল চরিত্রের লোকের কোন প্রয়োজন নেই দেশ ও জাতির। এ ধরনের লোকেরা লোভে পড়ে নিজের দেশ, এমনকি নিজের ঈমানটুকুও নিলামে বিক্রি করে দিতে পারে। মেয়েটি সাইফুদ্দিনের কথা শুনে এমন একটি ভাব করলো, যেন যুদ্ধ যাত্রার কথা শুনে সে খুব খুশী হয়েছে এবং এ ভাব প্রকাশ করার জন্যই সে তার কাছটিতে গিয়ে তার একটি হাত তুলে নিল নিজের হাতে, চকিতে সে হাতে একটি চুমু খেয়ে দ্রুত ছুটে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল।

সাইফুদ্দিনের যে দুই সঙ্গীর একজন মুশেল ও অন্য  জন হলবে গিয়েছিল, তাদের কেউ তখনো ফিরে আসেনি। মেয়েটি কামরা থেকে বেরিয়ে সোজা তার বাবা, ভাই হারেস ও দাউদ যে রুমে বসেছিল, সেখানে চলে গেল। তাদের সে শোনাল সাইফুদ্দিনের পরিকল্পনার কথা। বললো, ‘তার পরিকল্পনা হলো, তিনটি বাহিনীকে একত্রিত করে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর ওপর দ্রুত আক্রমণ করা, যাতে আইয়ুবী অগ্রসর হয়ে তাদের শহর ও এলাকা অধিকার ও অবরোধ করতে না পারে। যে দুই লোক চলে গেছে, তারা এসে বলবে, সৈন্যরা যুদ্ধের অবস্থায় আছে, কি নেই’।

এ মেয়েটির নাম ছিল ফৌজি। সে কেবল রূপসীই ছিল না, অসম্ভব চালাক এবং বুদ্ধিমতিও ছিল। দাউদ তাকে বললো, ‘তুমি খুব মূল্যবান খবর এনেছো! ট্রেনিং ছাড়াই তুমি এসব খবর কেমন করে তার পেট থেকে বের করলে?’

‘রাতে আপনি বলেছিলেন, সাইফুদ্দিনের পরবর্তী পরিকল্পনা কি তা জানা আপনার খুবই দরকার। তাই একটু চেষ্টা করে দেখলাম’।

‘খুবই ভাল করেছো। আমি তোমাকে কি করে গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে হয় শিখিয়ে দেবো’।

দাউদ ফৌজিকে গোয়েন্দা হিসাবে কাজকর্ম করার জন্য প্রাথমিক কিছু নিয়ম কানুন শিখিয়ে দিল। তারপর বললো, ‘সাইফুদ্দিন দুশ্চরিত্র ও আরামপ্রিয় লোক। তার প্রতারণার জাল থেকে সাবধান থাকবে’।

ফৌজি এ দায়িত্ব খুশী মনে গ্রহণ করলো। সে যেভাবে সাইফুদ্দিনের কাছ থেকে কথা বের করে নিয়েছিল, তাতে দাউদ বুঝতে পেরেছিল, এ মেয়ে সাইফুদ্দিনকে ঠিকই ঘায়েল করতে পারবে।

গভীর রাত। হঠাৎ কোন আওয়াজে বৃদ্ধের ঘুম ভেংগে গেল। ঘুম ভাঙতেই মনে হলো কেউ দরজায় করাঘাত করছে। বৃদ্ধ বিছানায় উঠে বসলো। এ সময় কানে এলো ঘোড়ায় হ্রেষা ধ্বনি। দ্রুত উঠে গিয়ে দরজা খুললো বৃদ্ধ। বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল সাইফুদ্দিনের সহকারী সেনাপতি। বৃদ্ধ তোর ঘোড়া নিয়ে বাড়ীর পেছনে বেঁধে রাখলো। কামরায় এলে সাইফুদ্দিন তাকে বললো, ‘তুমি গিয়ে শুয়ে থাকো’।

বৃদ্ধ আদবের সাথে সালাম করে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। ভেতরের কামরায় গিয়ে ডেকে তুললো দাউদকে। ফিসফিস করে বললো, ‘সহকারী সেনাপতি ফিরে এসেছে!’ তারা উভয়েই দরজায় কান লাগিয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলো।

‘গুমাস্তগীন সম্পর্কে জানতে পারলাম,তিনি আল মালেকুস সালেহের সাথে হলবে আছেন’। সহকারী সেনাপতি বললো, ‘মুশেলের অবস্থা তেমন খারাপ নয়। আমাদের যে সৈন্যরা ওখানে আছে তাদের যখন ইচ্ছা ময়দানে নিয়ে নেয়া যাবে। আমাদের অর্ধেকের বেশী সৈন্য ফিরে আসতে পেরেছে। অবশিষ্ট সৈন্যদের কিছু নিহত হয়েছে, অধিকাংশই বন্দী হয়েছে। সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী অগ্রাভিযান বন্ধ করে দিয়ে তুর্কমানে ক্যাম্প করে অবস্থান নিয়েছেন। খৃস্টান গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তারা আল-জাজায়ের, বাকার, দাইয়ার ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে লোকদেরকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করছে। মনে হয়, আইয়ুবী সহসা কোন অভিযানের চিন্তা করছে না। হয়তো সে অবস্থাও তার নেই’। সাইফুদ্দিন বললো, ‘তুমি আইয়ুবীকে চেনো না। সে অবশ্যই অভিযান চালাবে! আর তার সে অভিযানের গতি হবে ঝড়ের মত দ্রুত!’

‘কিন্তু তাদের ক্যাম্পের অবস্থা বলছে, তারা সেখানে দীর্ঘদিন থাকবে। আমি খবর পেয়েছি, তারা ভাবছে, আমরা যুদ্ধ করার অবস্থায় নেই। আমাদের বহু সৈন্য তাদের হাতে বন্দী হওয়ায় তারা ভাবছে, আমরা যুদ্ধ করার অবস্থায় নেই। আমাদের বহু সৈন্য তাদের হাতে বন্দী হওয়ায় তারা ভাবছে, আমরা শেষ হয়ে গেছি। উঠে দাঁড়াতে হলে আমাদের অনেকদিন লাগবে’।

‘তাহলে আমরা যদি এক কাজ করি, আমাদের হাতে যে সৈন্য আছে তা নিয়ে এখনি সুলতান সালাহউদ্দিনের ওপর আক্রমণ করে বসি, তাহলে কেমন হয়?’ সাইফুদ্দিন তাকে প্রশ্ন করলো, ‘অযাচিত হামলার শিকার হলে ওরা নির্ঘাত ধরা খাবে। মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়ার আগেই আমরা ওদের তছনছ ও নাস্তানাবুদ করে দিতে পারবো!’

‘শুধু আমাদের সৈন্য এ আক্রমণের জন্য যথেষ্ট নয়’। সহকারী সেনাপতি উত্তরে বললো, ‘আল মালেকুস সালেহ ও গুমাস্তগীনকেও সঙ্গে নেয়া প্রয়োজন। খৃস্টান উপদেষ্টারা আমাকে এ পরামর্শই দিয়েছে।‘

‘তুমি কি তাদের বলে দিয়েছো, আমি কোথায়?’ সাইফুদ্দিন জিজ্ঞেস করলো।

‘আমি এখানকার ঠিকানা বলিনি!’ সহকারী সেনাপতি উত্তর দিলো, ‘আমি তাদের বলেছি, আপনি তুর্কমানের আশে পাশেই ঘোরাফেরা করছেন। সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর গতিবিধি লক্ষ্য করে পাল্টা হামলার চেষ্টা করছেন। আমার মনে হয়, এখানে বেশী দিন থাকা আপনার ঠিক হবে না। তিন-চার দিনের মধ্যেই আপনার মুশেল চলে যাওয়া উচিৎ’।

‘আগে আমাকে হলবের সংবাদ জানতে দাও!’ সাইফুদ্দিন বললো, ‘কমান্ডার আজ না এলেও আগামীকালের মধ্যেই ফিরে আসবে। তুমি জানো, গুমাস্তগীন শয়তান প্রকৃতির লোক! তার তো নিজের দূর্গ হারানে চলে যাওয়া উচিৎ ছিল। সেখানে না গিয়ে হলবে বসে কি করছে গুমাস্তগীন? শোন, আমি মুশেল যাওয়ার আগে হলবে যাবো। গুমাস্তগীন আমাদের ঐক্যজোটের শরীক হলেও তাকে আমি বন্ধু বলতে পারি না। সে ওখানে কি করছে দেখতে হবে আমাকে। তাছাড়া আল মালেকুস সালেহের সাথেও সামনের লড়াই সম্পর্কে একটা বোঝাপড়া করতে হবে। আমরা আক্রমণ করতে যত দেরী করবো ততই সুলতান আইয়ুবীর লাভ। আমরা এ সুযোগ তাকে দিতে পারি না, এ বিষয়টিও সালেহকে বুঝাতে হবে। নষ্ট করার মত সময় আমাদের হাতে নেই, যা করার জলদি করতে হবে’।

‘হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে, এবার আর তিন বাহিনীকে আলাদা রাখা যাবে না। তিনটি বাহিনীই একটি একক কমান্ডের অধীনে যুদ্ধ করবে। আর সম্মিলিত বাহিনীর হাইকমান্ড থাকবে যোগ্য সেনাপতির হাতে’।

‘তুমি ঠিকই বলেছো। আমরা শুধু এ কারণেই পরাজিত হয়েছি, আমাদের সৈন্যরা পৃথক পৃথক কমান্ডে লড়াই করেছিল। আমরা একে অন্যের যুদ্ধের চাল সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। নইলে মুজাফফরুদ্দিন সুলতান আইয়ুবীর বাহিনীর পাশ থেকে যে প্রচন্ড আক্রমণ চালিয়েছিল, তার কখনো ব্যর্থ হওয়ার কথা ছিল না’।

‘আমার আরেকটি কথা, কেন্দ্রীয় কমান্ড আপনার হাতেই থাকতে হবে’। সহকারী সেনাপতি বললো।

‘এবং আমাদের বন্ধুদের দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে’। হেসে বললো সাইফুদ্দিন, ‘খৃস্টানরা কি আমাদের ঠিক মত সাহায্য দিবে?’

‘তারা তো আর সৈন্য দিয়ে সাহায্য করবে না’। সহকারী সেনাপতি বললো, ‘উট, ঘোড়া, অস্ত্রশস্ত্র এসব সরবরাহ করবে’।

সহকারী সেনাপতি কথার মোড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘এখানে আপনার কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?’

‘না!’ সাইফুদ্দিন বললো, ‘বৃদ্ধকে বিশ্বাসযোগ্য বলেই মনে হচ্ছে। তার মেয়েটাও জালে আটকা পড়ে গেছে। মেয়েটা বড় আবেগী আর স্ফূর্তিবারজ। সে আমাকে বলে কি জানো, আগে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীকে পরাজিত করেন, তার তলোয়ার কেড়ে নিয়ে তার অশ্বপৃষ্ঠে চড়ে বিজয়ীর বেশে আসুন, আমি আপনার সাথে যাবো’।

সহকারী সেনাপতি হো হো করে হেসে উঠলো। হারেস, তার বাবা এবং দাউদ দরজায় কান লাগিয়ে ওদের সব কথাই শুনছিল। সাইফুদ্দিন ও তার সহকারী জানতেও পারেনি, এ বাড়ীতে বৃদ্ধ এবং দু’টি মেয়ে মানুষ ছাড়া আরো দু’জন নওজোয়ান আছে, যারা যে কোন সময় তাদের হত্যা করতে পারে। সাইফুদ্দিনের দুর্ভাগ্য, ফৌজিকে জালে জড়ানোর পরিবর্তে নিজেই যে এক কঠিন জালে আটকা পড়ে আছে, এ কথাটাও জানতো না সাইফুদ্দিন, এমনকি এরকম কোন সন্দেহও তার মনে জাগেনি কখনো।

সারাদিন দাউদ ও হারেস ঘরের বাইরে এলো না। বাড়ীর একদম পেছনের কামরায় চুপচাপ দুই বন্ধু আত্মগোপন করে রইলো। বাইরের দিকের কামরায় সাইফুদ্দিন ও তার সহকারী দরজা বন্ধ করে শুয়ে বসে সময় কাটালো, তারাও কেউ ঘরের বাইরে গেল না।

অতিরিক্ত চারজন বলিষ্ঠ পুরুষ এ বাড়ীতে আছে, পাড়াপড়শীরা এ জন্যই তা টের পেলো না। বুড়োও এসব দিকে খেয়াল রাখছিল। বাড়ীর বাইরে সামনের চত্বরে এটা ওটা করার বাহানায় বলতে গেলে সারাটা দিন বুড়ো বাইরেই কাটিয়ে দিল।

দিনের বেলা ফৌজি বেশ কয়েকবার তার কামরায় গিয়েছিল। সে সাইফুদ্দিনের সাথে কথা বলতো, কিন্তু ধরা দিতো না। তার এ লুকোচুরি স্বভাবের কারণে সাইফুদ্দিন আরো গভীরভাবে ঝুঁকে পড়লো মেয়েটির দিকে। স ফৌজিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা! তোমার যে ভাই আমার বাহিনীতে সৈনিক হিসেবে আছে, তাকে যদি আমি কমান্ডার পদে উন্নীত করে দেই, কেমন হয়?’

‘কেমন আবার! যেমন হবার তেমন হয়!’ তরল কোমল কৌতুক মেশানো কন্ঠ ফৌজির।

‘আর যদি তোমাকে, তোমার ভাবী ও বাবাকে আমি যাবার সময় সঙ্গে নিয়ে যাই, তাহলে কেমন নয়!’

‘পঁচা হয়!’

‘কেন?’

‘বাহ, কনের সাথে কেউ তার বাবাকে আর ভাবীকে নেয় নাকি! কি বোকা বোকা কথা!’

এভাবেই হাস্য-তরল আলাপের মধ্য দিয়ে দিনটি কাটিয়ে দিল সাইফুদ্দিন। ফৌজির বাবাও দু’একবার সে কামরায় ঢু দিয়েছে। তাদের কিছু লাগবে কিনা, কোন কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা, এইসব খোঁজখবর নিয়েছে। মূলতঃ সাইফুদ্দিনকে বৃদ্ধ বুঝাতে চাচ্ছিলো, সে তার খুব বাধ্য ও অনুগত একজন প্রজা।

দিন পেরিয়ে রাত এলো। বৃদ্ধ উতকর্ণ হয়ে বসেছিল, কখন আবার দরজায় করাঘাত শুনবে। রাতের প্রথম প্রহরেই এলো সে কমান্ডার। দরজায় করাঘাত শুনেই বৃদ্ধ এগিয়ে দরজা খুলে ধরলো। বাইরের সাইফুদ্দিনের হলব থেকে আগত কমান্ডার দাঁড়িয়ে ছিল। বৃদ্ধ তাকে সাইফুদ্দিনের কামরায় পাঠিয়ে দিয়ে ঘোড়াটি অন্য ঘোড়াগুলোর পাশে নিয়ে বেঁধে রাখলো।

বৃদ্ধ যখন ঘরে ঢুকলো তখন কমান্ডার বলছিল, ‘সারা পথ আমি খুব দ্রুত বেগে ছুটে এসেছি। রাস্তায় কোথাও থামেনি। সে কারণে রাস্তায় আমার খাওয়া দাওয়াও সম্ভব হয়নি’।

এ কথা শুনেই বৃদ্ধ কমান্ডারের খাবার আনতে ভেতরে চলে গেল। ফৌজি বললো, ‘বাবা, তুমি শুয়ে পড়োগে। আমি নিজেই ওর খাবার নিয়ে যাচ্ছি’।

ফৌজির বুড়ো বাপ বাধ্য ছেলের মত বিছানায় উঠে গেল। কমান্ডারের জন্য খাবার নিয়ে কামরায় ঢুকলো ফৌজি। সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল কমান্ডারের কথা। সাইফুদ্দিন হেসে বললো, ‘তুমি কথা বলো, এ মেয়ে এখন আমাদেরই একজন’।

ফৌজি কমান্ডারের সামনে খাবার রেখে সাইফুদ্দিনের পাশে গিয়ে বসলো। এই প্রথম সে সাইফুদ্দিনের খুব কাছাকাছি গিয়ে বসেছিলো। সাইফুদ্দিন তার একটি হাত নিজের হাতে টেনে নিল। ফৌজির দিনের চাপল্য কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল। নিস্তরঙ্গ রাত যেন তার মধ্যেও নিবেদনের এক ধরনের আর্তি নিয়ে এসেছে। সে হাত ছাড়িয়ে না নিয়ে মুগ্ধ চোখে সাইফুদ্দিনের হাতের আংটির সৌন্দর্য দেখতে লাগলো। ফৌজির এ আচরণ যে খৃস্টানের এক বন্ধুকে হাতের মুঠোয় আটকানোর কৌশল, সাইফুদ্দিন তা একটুও টের পেলো না।

‘হলবের সামরিক অবস্থা প্রশংসার যোগ্য’। কমান্ডার আবার কথা বলা শুরু করলো। ফৌজি ছোট্ট খুকির মত সাইফুদ্দিনের আঙ্গুলের হীরার আংটি নাড়াচাড়া করতে লাগলো। সে এমন তন্ময় হয়ে আংটি দেখছিল, কমান্ডারের কথা দিকে তার যেন কোন খেয়ালই নেই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার কান ছিল সম্পুর্ণ সজাগ। মাথা নিচু করে সে কমান্ডারের প্রতিটি কথা গিলছিল।

‘আল মালেকুস সালেহ সুলতান আইয়ুবীকে সন্ধির প্রস্তাব পাঠিয়ে চিঠি দিয়েছেন’।

‘কি! সন্ধির চিঠি?’ সাইফুদ্দিন চমকে উঠে বললো।

‘জ্বী! আপোষ-মিমাংসার চিঠি!’ কমান্ডার বললো, ‘কিন্তু আমি জেনেছি, তাঁর খৃস্টান বন্ধুরা যুদ্ধে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তাকে পর্যাপ্ত সাজ সরঞ্জাম ও অস্ত্র দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা তাকে যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করারও চেষ্টা করছে। তারা তাকে পরামর্শ দিয়েছে, মুশেল ও হারানের সেনাবাহিনীকে এক কমান্ডে নিয়ে জলদি সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর ওপর আক্রমণ চালানোর। যদি সুলতান আইয়ুবী আশপাশের এলাকা থেকে সৈন্য সংগ্রহের পর্যাপ্ত অবসর ও সুযোগ পেয়ে যায়, তবে তার অগ্রাভিযানে বাঁধা দেয়া দুঃসাধ্য হয়ে যাবে। গোয়েন্দারা সংবাদ এনেছে, সালাহউদ্দিন আইয়ুবী স্বসৈন্যে তুর্কমানের শস্য-শ্যামল প্রান্তরে ক্যাম্প করে নতুন সৈন্য ভর্তি করছে। আইয়ুবী দ্রুত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আল মালেকুস সালেহের সেনাপতিরাও একমত, তুর্কমান ক্যাম্পে সুলতান আইয়ুবীর ওপর দ্রুত আক্রমণ করা দরকার।

আমি হলবের এক খৃস্টান উপদেষ্টার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি তাকে বললাম, ‘আইয়ুবীর ওপর জলদি আক্রমণ আমি সমর্থন করি না, কারণ সে যোগ্যতা এখন আমাদের নেই’। তিনি বললো, ‘এতে তোমাদের বহু ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। সালাহউদ্দিন আইয়ুবীকে আক্রমণ করে তাকে পরাজিত করতে না পারলেও, এতে তার প্রস্তুতির সুযোগ নষ্ট হবে। তার অপরাজেয় বাহিনীকে প্রস্তুতির সুযোগ দিলে তা ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে তোমাদের জন্য। তাকে তুর্কমান এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ও উত্যক্ত করে আটকে রাখতে হবে। এমন কৌশলে যুদ্ধ করতে হবে, যেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়। প্রবল আকারের যুদ্ধ না হোক, খন্ড যুদ্ধ অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। যুদ্ধের কৌশলটা হবে ঠিক সুলতান আইয়ুবীর মত, আঘাত করো আর পালিয়ে যাও’।

‘খুবই উত্তম প্রস্তাব’।সাইফুদ্দিন বললো, ‘এমন যুদ্ধ আমার শার্দুল ভাই সেনাপতি মুজাফফরুদ্দিনই করতে পারে। সে দীর্ঘদিন সুলতান আইয়ুবীর সহ-সেনাপতি ছিল। আইয়ুবীর প্রতিটি চাল তার মুখস্ত। আমিও একমত, আমাদের সম্মিলিত শক্তি একক কমান্ডে নিতে হবে’।

‘আর তিন বাহিনীর যুক্ত কমান্ডের দায়িত্ব থাকতে হবে আপনার ওপর। কেবল আপনিই সালাহউদ্দিন আইয়ুবীকে মরু শৃগালের ধোঁকা দিয়ে মারতে পারবেন’। বললো তার সহ-সেনাপতি।

ফৌজি তখনো আংটি নিয়ে খেলা করছিল। কমান্ডার বললো, ‘আমি চেষ্টা করেছিলাম আল মালেকুস সালেহের সাথে দেখা করার। কিন্তু তার সেনাপতি ও অন্যান্য আমীররা তাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছে, আমি তার কাছেও যেতে পারলাম না’।

‘তোমাকে আজই আবার হলব রওনা করতে হবে’। সাইফুদ্দিন বললো, ‘আল মালেকুস সালেহকে আমার চিঠি পৌঁছে দেবে’।

সাইফুদ্দিন সে রাতেই আল মালেকুস সালেহের কাছে এক গুরুত্বপূর্ব চিঠি লিখলো। তাতে লিখলোঃ ‘প্রিয় আল মালেকুস সালেহ! সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সাথে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ে তুমি আমাদের ঐক্যজোটে যে ভাঙ্গনের সৃষ্টি করেছো, এর ভয়াবহ পরিণতির কথা কি কখনো চিন্তা করেছো? আমাদের না জানিয়ে আমাদের সকলের জানের দুশমন আইয়ুবীর সাথে সন্ধি করে তুমি কি হাসিল করতে চাও আমার বুঝে আসছে না। তুমি কি মনে করো আইয়ুবী তোমাকে রেহাই দেবে? হলব দখল না করে দেশে ফিরে যাবে আইয়ুবী? তুমি এখনো খুব ছোট ও অবুঝ। রাজনীতির খেলা এখনো তোমার রপ্ত হয়নি। আইয়ুবী কিছুতেই তোমাকে রেহাই দেবে না। অন্যদিকে এ চুক্তির মাধ্যমে তুমি আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে গেছো। আগে তোমার ওপর হামলা হলে আমরা মনে করতান, এ হামলা হয়েছে আমাদের সবার ওপর। আমরা তার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। কিন্তু এখন? এখন তোমার ধ্বংস তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমাদের আর কি করার আছে!

সালেহ! এ চুক্তির মাধ্যমে তুমি প্রকারান্তরে আইয়ুবীর সাহস ও উদ্দীপনা বাড়িয়ে দিয়েছো। কিন্তু আমরা জানি, তিনি আমাদের কাউকে ক্ষমা করবেন না। হয়তো তুমি ভয় পেয়ে গেছো। অথবা তোমার সেনাপতিরা যুদ্ধ থেকে বাচাঁর আশায় তোমাকে এ পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এ পথে তোমার মুক্তি মিলবে না। তুমি আমাদের না জানিয়ে সন্ধি করে যে অপরাধ করেছো, যে ধোঁকা তুমি আমাদের দিয়েছো, তাতে তোমাকে আমাদের বয়কট করা উচিৎ ছিল। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থের দিকে তাকিয়ে সেসব আমি ভুলে যেতে রাজি আছি। বাঁচতে হলে আমাদের এক কমান্ডে সম্মিলিত শক্তি একত্রিত করে অনতিবিলম্বে আইয়ুবীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। তুমি কি করতে চাও শিঘ্র জানাও আমাকে’।

পেজঃ ১ম পেজ | ← পূর্বের পেজ | ... | 4 | 5 | 6 | 7 | ... | পরের পেজ → | শেষ পেজ | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top